চলন্ত ট্রেনে গণধর্ষণ:আটক-৪, বরখাস্ত-৩,এসএ কর্পোরেশনের লাইসেন্স স্থগিত চলন্ত ট্রেনে এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ৪ ধর্ষককে আটক করেছে চট্টগ্রামের রেলওয়ে থানা পুলিশ। দায়িত্বে অবহেলা ও কর্তৃপক্ষকে সময়মতো না জানানোর অপরাধে ট্রেনের পরিচালকসহ ৩ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় ক্যাটারিং পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এসএ কর্পোরেশনের লাইসেন্স অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে রেলওয়ে। স্বস্ব বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ৪ ধর্ষককে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে চট্টগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম শহীদুল ইসলাম বলেন, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে লাকসাম এলাকায় এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। গ্রেপ্তার চারজনই ট্রেনে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এস এ করপোরেশনের কর্মী। গ্রেপ্তারকৃত চারজন হলেন বি-বাড়িয়ার বাসিন্দা মো. জামাল (২৭), জামালপুরের মো. শরীফ (২২) ও মো. রাশেদুল ইসলাম (২৮) ও আব্দুর রব প্রকাশ রাশেল। সংশ্লিষ্ট আইনে আসামিদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এবং ভিকটিমকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এব্যপারে রেলওয়ে পুলশের এসপি মো. হাসান চৌধুরী বলেন, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা উদয়ন এক্সপ্রেসের এক টিকেটবিহীন নারী যাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
রেলওয়ে সুত্র জানায়, ২৫ জুন রাত ১০ টায় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে টিকেটবিহীন নারী যাত্রীকে চট্টগ্রামে পৌছানোর চুক্তিতে গাড়িতে তোলে ক্যাটারিং সার্ভিসের লোকজন। ফলে ওই নারী নির্ধারিত কোন সিট না থাকায় খাবার বগিতে করে চট্টগ্রামে আসছিল। ট্রেন লাকসামে পৌছালে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সকাল সাড়ে ৬ টা নাগাট ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌছায়। সকালেই ৩ ধর্ষক ও ভিকটিমকে হেফাজতে নেয় রেলওয়ে থানা পুলিশ। পরে আবার অভিযান চালিয়ে আরো একজনকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু এই ঘটনা রেল কর্তৃপক্ষকে যথাসময়ে অবগত করেনি দায়িত্বরত ট্রেনের পরিচালক সহ অন্যরা। ফলে দায়িতে অবহেলার অভিযোগে ট্রেনের গার্ড (পরিচালক) আব্দুর রহিম, দায়িত্বপ্রাপ্ত এটেন্ডেন্ট ও আরএনবির একসদস্যসহ ৩ জনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। সুত্র জানায় যেহেতু ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন মো. শাহ আলমের মালিকানাধিন এসএ কর্পোরেশন। ফলে তিনি এর দায় কোনভাবেই এড়াতে পারেন না। ফলে অপর এক আদেশে উদয়ন এক্সপ্রেস ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত এস এ কর্পোরেশনের লাইসেন্স অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক বিভাগ।
বুধবার (২৬ জুন) সহকারী প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ”গত ২৫ জুন ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ দিবাগত রাত ২২.০০ ঘটিকায় সিলেট স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী ৭২৪ নং উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে ক্যাটারিং সার্ভিস প্রদানের জন্য আপনার প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত কর্মচারী শরিফ গং কর্তৃক একটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে মর্মে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এমতাবস্থায়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ৭১৯/৭২৪ ও ৭২০/৭২৩ নং পাহাড়িকা-উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে আপনার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।” এই চিঠি এসএ কর্পোরেশনের প্রোপ্রাইটর মোহাম্মদ শাহআলমের কাছে পাঠানো হয়েছে। একই চিঠির অনুলিপি বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের একান্ত সচিব, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন), মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব), সিওপিএস (পূর্ব), সিএমই (পূর্ব), ডিআরএম (চট্টগ্রাম), ডিএমই (ক্যারেজ এন্ড ওয়াগন), ডিসিও (চট্টগ্রাম), ডিটিও (চট্টগ্রাম), স্টেশন ম্যানেজার (চট্টগ্রাম ও সিলেট), এবং স্টেশন মাস্টারদের (চট্টগ্রাম ও সিলেট) কাছেও পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহা ব্যবস্থাপক (জিএম) মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা যথাসম্ভব জনগণের সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু গুটিকয়েক অসৎ লোকের কারনে আমদের সেবাকে কলঙ্কিত করতে চাইনা। চলন্ত ট্রেনে ধর্ষণের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক, লজ্জাজনক ও অপ্রত্যাশিত। আমরা আমাদের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে যেকোন অনিয়মের বিরুদ্ধে সর্বদা সজাগ রয়েছি। তাই ঘটনা জানার সাথে সাথে প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করেছি।
বিষয়টির সুষ্ঠু বিচারের জন্য আরো যাচাই বাছাই প্রয়োজন। আমরা বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এব্যপারে জানতে এসএ কর্পোরেশনের প্রোপ্রাইটর মো. শাহ আলমের মোবাইলে ও হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি সিলেট থেকে মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাত ১০টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। বুধবার (২৬ জুন) ভোর সাড়ে চারটায় এ ঘটনা ঘটে। চলন্ত ট্রেনটি ওই সময় লাকসাম এলাকা পার হচ্ছিল। চট্টগ্রাম স্টেশনে ট্রেনটি পৌছায় সকাল সাড়ে ৬ টায়। ভোরে এই ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি জানাজানি হয় বিকেলে। রেলওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০ বছর বয়সী এক তরুণী উদয়ন এক্সপ্রেসে করে চট্টগ্রামে আসছিলেন। টিকেটবিহীন ওই নারী সিলেট থেকে উঠে খাবার বগিতে অবস্থান করেন। ওই সময় খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মী তাকে প্রথমে উত্ত্যক্ত এবং পরে ধর্ষণ করেন। ওই তরুণী আত্মীয়দের সঙ্গে ভৈরবে থাকেন। তবে সিলেট গিয়েছিলেন ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে। তার বাড়ি বান্দরবানে। তিনি বাড়ি যাওয়ার জন্য চট্টগ্রামে আসছিলেন।