কক্সবাজারের চৌফলদন্ডীর ভূমি দস্যু, চিংড়ি ঘের দখলকারী, ৪৪’টির অধিক মামলার আসামী ও অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী জিয়াবুল হক জিয়া’কে রামু থানাধীন পূর্ব রাজারকুল এলাকা থেকে অস্ত্র-গুলি’সহ র্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার।
১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সব সময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। সৃষ্টিকাল থেকে এলিট ফোর্স র্যাব জঙ্গি, মাদক ব্যবসায়ী, অপহরণকারী, ছিনতাইকারী, মানবপাচারকারী, প্রতারক, চাঁদাবাজ, বিভিন্ন মামলার আসামী, শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
২। কক্সবাজার জেলার সদর থানাধীন চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের মূর্তিমান আতংক, ভূমি দস্যু ও চিংড়ি ঘের দখলকারী, অসংখ্য মামলার আসামী ও অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী জিয়াবুল হক জিয়া। তার আতংকে অনিরাপদে নির্ঘুম রাত্রীযাপন করে এলাকাবাসী। এই জিয়াবুল হক জিয়ার নেতৃত্বে এলাকায় সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার ও নারী নির্যাতন, জোরপূর্বক নিরাপরাধ মানুষের জমি দখল, চিংড়ি ঘের দখল, চুরি, ডাকাতি, মাদক ও অস্ত্র’সহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের তথ্য পায় র্যাব। উক্ত তথ্যসমূহ সঠিকতা যাচাই এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে ব্যাপক গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে র্যাব-১৫।
৩। এরই ধারাবাহিকতায়, র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের ইন্টেলিজেন্স উইং এবং র্যাব-১৫ এর নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায় যে, বর্ণিত সন্ত্রাসী জিয়াবুল হক জিয়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে সু-কৌশলে বারংবার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে আসছিল। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় সর্বশেষ জানা যায়, সন্ত্রাসী জিয়াবুল হক জিয়া কক্সবাজারের রামু থানাধীন রাজারকুল ইউনিয়নের পূর্ব রাজারকুল এলাকাস্থ তার এক আত্মীয়ের বাড়ীতে আত্মগোপনে অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের আলোকে অদ্য ০৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ শেষ রাতের সময় র্যাব-১৫, সিপিএসসি ক্যাম্পের একটি চৌকস আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি বুঝে দৌড়ে পলায়নের চেষ্টাকালে র্যাবের একটি চৌকস আভিযানিক দল সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে কক্সবাজারের চৌফলদন্ডীর ভূমি দস্যু, চিংড়ি ঘের দখলকারী, ৪৪’টির অধিক মামলার আসামী ও অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী জিয়াবুল হক জিয়া (৪০), পিতা-মনির আহম্মদ, সাং-পশ্চিম মাঝেরহাট পাড়া, ৪নং ওয়ার্ড, চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন, থানা-সদর, জেলা-কক্সবাজার’কে ০১টি দেশীয় অস্ত্র ও ০২ রাউন্ড গুলি’সহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
৪। গ্রেফতারকৃত জিয়াবুল হক জিয়া’কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত চৌফলদন্ডী এলাকায় সে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছিল। সে তার অপরাধের সাম্রাজ্যে অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে নিরীহ মানুষের চিংড়ী প্রজেক্ট দখল করে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক বনে যায়। জানা যায়, যখন কোন ঘের বা ভূমি তার দৃষ্টিতে পড়ে তখনই সেটা দখল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতো। পর্যায়ক্রমে দখলের উদ্দেশ্যে ঘের মালিকদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিতো। এতে কাজ না হলে তার অন্যান্য সহযোগীদের মাধ্যমে ঘের মালিকদের জোরপূর্বক ধরে এনে চালানো হতো পাশবিক নির্যাতন। এমন কোন নির্যাতন নেই যা সে করেনি। ঘের মালিকরা হুমকি, নির্যাতন ও প্রাণ ভয়ে অনেকাংশে ঘেরের দখল-দারিত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়। এরূপ পরিস্থিতি তৈরী করে সে ঘের মালিকদের নিকট হতে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে সাধারণ মানুষের ভূমি/চিংড়ি ঘের অবৈধ ভাবে দখল করে নিতো। সম্প্রতি যৌথ বাহিনীর অভিযানে চৌফলদন্ডি ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়া মাঝেরহাট এলাকা থেকে যে ৩০০টির অধিক স্বাক্ষরিত ফাকা দলিল দস্তাবেজ ও অস্ত্র-গোলাবারুদসহ উদ্ধার করা হয় তা তারই অধিনস্ত আস্তানায় ছিল বলে স্বীকার করে।
৫। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, গ্রেফতারকৃত জিয়াবুল হক জিয়া বিভিন্ন মাধ্যমে দেশি-বিদেশী অস্ত্র-গুলি সংগ্রহ করে তার দখল বাণিজ্যের সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। এ সকল অবৈধ অস্ত্রের দাপটে সে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চিংড়ি ও লবণের ঘের, জমি দখল, মাদক’সহ নানা অপরাধ করতো। ইতিপূর্বে যাদের জমি/চিংড়ি ঘের দল করা হয়েছিল, তারা তাদের জমি/ঘের ফেরত চাইলে তাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে সন্ত্রাসী জিয়াবুল হক জিয়া ও তার অন্যান্য সহযোগীরা গুলি ও হামলা করে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। এ সময় গুলিতে ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়।
৬। গ্রেফতারকৃত জিয়াবুল হক জিয়ার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র, মাদক, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, চুরি, ডাকাতি, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং বন আইনসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট ৪৪টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
৭। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
———ধন্যবাদ——–