শাহজাদপুর থানা পুলিশ কর্তৃক চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী রইস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, হত্যাকারী গ্রেফতার, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু এবং ভিকটিমের লুন্ঠিত মোবাইল, ট্রাউজার ও লুংগি উদ্ধার
১। গত ইং ১৮/১১/২৪ তারিখ বিকাল আনুমানিক ০৩.০০ ঘটিকায় স্থানীয়দের দেয়া তথ্য অনুযায়ী শাহজাদপুর থানা পুলিশ অত্র থানাধীন নলুয়া বটতলাস্থ জনৈক শফিকুল ইসলামের ডোবা হতে একটি গলিত লাশ উদ্ধার করে।
২। বিষয়টি জানাজানি হলে ভিকটিম মৃত রইস উদ্দিন এর আপন ভাই মোঃ আঃ মজিদ ঘটনাস্থলে এসে ভিকটিমের পড়নে থাকা চেক লুংগি ও বাম হাতের ছয় আংগুল দেখে তার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।
৩। ভিকটিম রইস উদ্দিন এর পরিবারের ভাষ্যমতে, মৃত রইস উদ্দিন পেশায় একজন মুদি দোকানদার ছিলেন। তার ১ম বউ মারা যাওয়ার পরে তিনি ২য় বিবাহ করেন। আনুমানিক ০৮/০৯ বছর পূর্বে তার ২য় বউ তাকে তালাক দিয়ে চলে যান। তিনি আর বিবাহ করেন নাই এবং একাই থাকতেন। তিনি নিজেই রান্না করে খেতেন। তিনি প্রতিদিন সকাল ০৬.০০ টায় এসে দোকান খুলতেন এবং রাত ১০ টায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি যেতেন। তিনি গত ইং ০৩/১১/২৪ তারিখ সকাল ০৬ টায় দোকানে আসেন। কিন্তু রাতে আর দোকান থেকে বাড়ি ফিরেন নাই। তার আত্নীয় স্বজন বিভিন্ন জায়গায় তার খোজখবর করতে থাকেন এবং তার মোবাইল ফোন বন্ধ পান। কোথাও খুজে না পেয়ে গত ইং ০৮/১১/২৪ তারিখ তার ছেলে দুলাল হোসেন শাহজাদপুর থানা তে এসে একটি হারানো জিডি করেন। যাহার নম্বর- ৩৮৯, তাং- ০৮/১১/২৪ ইং।
লাশ উদ্ধারের পরে মৃত রইস উদ্দিন এর ছেলে দুলাল হোসেন অজ্ঞাতনামা দের আসামী করে শাহজাদপুর থানাতে একটি হত্যা মামলার এজাহার দায়ের করলে শাহজাদপুর থানার মামলা নং- ২১, তাং- ১৯/১১/২০২৪ ইং, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।
৪। মৃত রইস উদ্দিন এর লাশ উদ্ধারের পরে সিরাজগন্জ জেলার সম্মানিত পুলিশ সুপার জনাব মো: ফারুক হোসেন এর সার্বিক নির্দেশনায় শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মো: কামরুজ্জামান, পিপিএম-সেবা ও অফিসার ইনচার্জ জনাব মো: আসলাম আলী, পিপিএম দ্বয়ের সার্বিক তত্তাবধানে তত্ত্বাবধানে শাহজাদপুর থানার এসআই (নি:) মো: শারফুল ইসলাম ও এসআই (নি:) কাঞ্চন কুমার প্রাং দ্বয়ের নেতৃত্ত্বে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি চৌকশ টিম গতকাল ইং ২০/১১/২৪ তারিখ বেলা ০৩.০০ ঘটিকায় অত্র থানাধীন নলুয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মৃত রইস হত্যার সহিত জড়িত আসামী ১। মোঃ মামুন (২৮), পিতা- আজিজ আলী মন্ডল, সাং- নলুয়া ও ২। মোঃ জয়নাল শেখ (৫০), পিতা- মৃত রানু শেখ, সাং- জুগ্নীদহ পশ্চিমপাড়া, উভয় থানা- শাহজাদপুর, জেলা-সিরাজগঞ্জদ্বয়কে গ্রেফতার করে এবং তাদের দেখানো মতে টয়লেট হতে ভিকটিম রইস এর ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোন, আসামী মামুনের বাড়ি হতে রইসের ট্রাউজার এবং রইসের বাড়ির পাশের ডোবা হতে রক্তমাখা লুংগি ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধারপূর্বক জব্দ করে।
৫। আটককৃত আসামী মোঃ মামুন ও মোঃ জয়নাল দ্বয় কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মোঃ মামুন পেশায় রাজমিস্ত্রী। মোঃ জয়নাল ভবঘুরে টাইপের মানুষ। আসামী মামুন ও জয়নাল মাঝে মাঝে ভিকটিম মৃত রইস এর দোকানে বসে আড্ডা দিত। আসামী মামুন, জয়নাল ও ভিকটিম রইস পূর্ব পরিচিত। আসামী মামুন ও জয়নাল এর কাছে টাকা না থাকায় তারা ব্যবসায়ী রইসের টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক আসামী মামুন শাহজাদপুর থেকে একটি চাকু ক্রয় করে। এরপর ইং ০৩/১১/২৪ তারিখ রাত ১০ টা থেকে তারা রইস কে অনুসরন করতে শুরু করে। একই তারিখ রাত আনুমানিক ১০.০০ ঘটিকায় রইস বাড়ি যাওয়ার পরে রাত আনুমানিক ১১.৫০ ঘটিকায় আসামী মামুন এবং জয়নাল রইসের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে রইস কে ডাক দেয়। রইস বাহিরে বের হলে আসামী জয়নাল রইস কে চেপে ধরলে রইস মাটিতে পড়ে যায়। আসামী মামুন রইস কে জবাই করে হত্যা করে এবং রইসের ঘরের তোষকের নিচে থাকা ১৬,০০০/- টাকা আসামী মামুন নেয়। এরপরে রইসের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল এবং রক্ত গামলাতে করে টয়লেটে ফেলে দেয়। মামুনের রক্তমাখা লুংগি এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু বাড়ির পাশে ডোবাতে ফেলে দেয়। এরপর মামুন রইসের লাশ একটি বস্তার মধ্যে ডুকায়ে আসামী জয়নালের সহায়তায় জনৈক শফিকুলের ডোবায় ফেলে দেয়। এরপর মামুন নিজে ১০,০০০/- টাকা নেয় এবং জয়নাল কে ৬০০০/- টাকা দেয়। এরপর তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফেরত গিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকে।
৬। গ্রেফতারকৃত আসামীরা রইসকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।