"বাড়ির নতুন বউ,সন্তানের নতুন মা"
লেখক,মোসাঃ পান্না আক্তার।চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জঃ
আমার বয়স যখন আড়াই বছর ঠিক তখনই আমার বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। তারপর কয়েক মাস দাদা দাদী আর বাবা ই আমার দেখা শোনা করেন,হঠাৎ একদিন আমার অনুরোধ রাখতেই বাবা আমার জন্য নতুন মা নিয়ে আসেন।
বাবা নতুন মা কে নিয়ে এসে বলেন মা রে তোর জন্যই আমার দ্বিতীয় বিয়ে করা,তোর দেখাশোনা করার জন্য আর তোর মায়ের অভাব পূরণ করার জন্যই আমি তোর নতুন মা কে নিয়ে আসলাম।
তাছাড়া তোর এই নতুন মা কিন্তু কোরআনে হাফিজা। আশা করি উনার দ্বারা তোর বিন্দু পরিমাণ ক্ষ*তি হবে না।আমিত নতুন মা পেয়ে মহাখুশি, মা ও আমাকে মহা আদর স্নেহের সাথেই লালন পালন করতে লাগলেন।
প্রায় এক বছর দাদা দাদী আর নতুন মা এবং আমার জন্মদাতা বাবা সহ সবার আদরে বড় হতে লাগলাম,হঠাৎ একদিন আকস্মিক আমার দাদার হার্ট অ্যাটাক হয়,তিনি মারা যান😭
তাঁর মৃত্যু দাদী সহজে মেনে নিতে পারেন নি,আস্তে আস্তে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
দাদী আজকাল বিছানা থেকে উঠতেই পারেন না,এর ই মাঝে আমাদের ঘর আলো করে আমার ছোট মায়ের কোল জুড়ে একটা বোন এলো আমার।তাকে পেয়ে আমি যেন হাতের মুঠোয় আকাশ পেয়ে গেছি।
এই কয়েক বছরে আমার আপন মা আর আমার কোন খোঁজ খবর নেয়নি।
এভাবে কয়েক মাস চলতে থাকে, বোনের দেখাশোনা, দাদীর দেখাশোনা এগুলোর আংশিক দায়িত্ব আমার কাঁধে পড়ে।তারপর বছর দুয়েক পরে আবার নতুন মায়ের কোল জুড়ে আবার একটা ভাই আসে আমাদের ঘরে।
বাবা মা মহাখুশি,কিন্তু আজ আমার খুশিটা কোথাও যেন বন্দী। আমাকে আর আগের মতো কেউ মধুর সুরে ডাকে না,ডাকলেও শুধু কাজের উপদেশ দেওয়ার জন্যই আজকাল মা আর বাবা ডাকেন।কাজের একটু এদিক সেদিক হলেই নতুন মা আমাকে চুলের মুঠি ধরে মারতে থাকেন,বাবার কাছে বললে তিনি বলেন " তুই নিশ্চয়ই দোষ করেছিস,তাই তোকে মারছে"। এসব দেখে অসহায় দাদী শুধু শুয়ে শুয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকেন।
পড়ার টেবিলে বসলেও মা আমাকে বলেন মহারানী পড়াশোনা করলে হবে? কাজ কে করবে?এই বলে আবারো চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলে 😭আমার চুলগুলো এখন আর আগের মতো নেই, মনেহয় কাক বাসা বেঁধেছে । একদিন ছোট বোন দোষ করেছে,সেই দোষ সে আমার কাঁধে ছাপিয়ে দেয়। মায়ের সামনে আমি যতোই বললাম আমি দোষ করিনি মা তা ও আমার কথা মানতে নারাজ 😭
এক পর্যায়ে ছোট বোন আমাকে খুব অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে,আমি মেজাজ হারিয়ে ফেলি,তাকে একটা চড় মারি। এটা দেখে মা (নতুন মা) আমাকে ইচ্ছে মতো মারে,বাবা আসলে বাবাকে বলেও মাইর খাওয়ায়।
এভাবেই আমি হয়ে উঠি নিজের ঘরে নিজে চাকরানী,পরে একদিন মনে হলো আমার আপন মা কে একটা কল করি,চিন্তানুযায়ী কলও দিলাম,মা কে বললাম মা আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও,আমি এখানে খুব কষ্টে আছি😭উত্তরে মা বলেন তো কে নিয়ে আসলে আমার এই ঘরে অশান্তি হবে,আমার সংসারে অশান্তি হবে। বরং মানিয়ে নে মা।
এভাবেই দিনের পর দিন বাবা মায়ের বলীর পাঠা হয়ে জীবন পার করতে লাগলাম।সবখানেই আগাছা হয়ে গেলাম আমি।
মাঝেমধ্যে আল্লাহকে বলি" আমার কি দোষ আল্লাহ, আমাকে কেন এতবড় শাস্তি দিচ্ছেন?"আমার জন্ম টা যেন হয়ে গেলো আজন্ম একটা পাপ।
বিঃদ্রঃ কথাগুলো কালকে একটা ছোট বোন শেয়ার করে, আর বলে আমি যেন আমার লেখনীতে প্রকাশ করি।আবেদ ভাইপারকে নিয়ে যখন লেখলাম, তখনই সে নক্ করে।আমাকে সে বলে আপু শুধু আবেদরা শুধু ইসলামের ট্যাগ লাগিয়ে অন্যায় করেনা,কিছু কিছু হাফিজারা দিনের পর দিন অত্যাচার আর জুলুম করে।
ঠিকানাঃ অস্থায়ী কার্যালয়ঃ হাউজিং নং – ১১১ (নিচ তলা), রোড নং-১১, ই-ব্লক, ইাউজিং এস্টেট, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া।
কপিরাইট © ২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত