মোঃ নাঈম হোসেন পলোয়ান,স্টাফ রিপোর্টারঃ
চাঁদপুরে ঘাস চাষে মাসিক আয় ২ লাখ টাকা উপার্জন করছেন চাঁদপুরের প্রবাসফেরত উদ্যোক্তা মো. মনির হোসেন গাজী। দেশের আনাচে-কানাচে ঘাস পাওয়া গেলেও বাণিজ্যিকভাবে লন কার্পেট ঘাস উৎপাদন করছেন এই যুবক। আর বাড়ির আঙিনা ও বিভিন্ন স্থানের সোন্দর্য বর্ধনে এসব ঘাস সংগ্রহ করছেন শৌখিন মানুষ।
চাঁদপুর শহরের পুরান বাজার এলাকার আবু তাহেরের ছেলে মনির হোসেন গাজী। ২০১৩ সালে বাহরাইন পাড়ি জমান মনির। সেখানে দীর্ঘদিন গার্ডেনে কাজ করেন তিনি। এরপর ২০১৯ সালে দেশে ফেরত আসেন। পরে তিনি গার্ডেনে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে লন কার্পেট ঘাস চাষ শুরু করেন। যেখান থেকে বছরে অন্তত তিনবার ঘাস বিক্রি করেন এই উদ্যোক্তা। যা কিনছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শৌখিন মানুষ।
প্রথমে এই উদ্যোক্তা এলাকার পতিত জমিতে শুরু করলেও বর্তমানে তার বেশ কয়েকটি প্রজেক্টে কাজ করছেন প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ।
ঘাস চাষ প্রজেক্টের শ্রমিক মো. ফিরোজ, রসু মিয়া, রফিক গাইন, শাহ আলম ও মোক্তার হোসেন জানান, প্রথমে চাষকৃত জমিতে পলিথিন বিছিয়ে সেখানে জৈব সারসহ মাটি ফেলা হয়। এরপর সংরক্ষণ করা লন ঘাসের চারা সেখানে রোপণ করা হয়। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করে চার মাসে প্রস্তুত করা হয় পরিপক্ব ঘাস। আর এসব কাজ করে সংসার চলে এলাকার অনেকেরই। তাদের দাবি, অন্য কাজের তুলনায় এই কাজ আরামদায়ক। নিয়মিত হাজিরায় কাজ করে পরিবার নিয়ে ভালো দিন কাটছে তাদের।
উদ্যোক্তা মনির হোসেন গাজী বলেন, ‘বিদেশে থেকে ফিরে এসে দেশে কী করবো ভাবছিলাম। পরে গার্ডেনে কাজ করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাই। লন কার্পেট চাষ করা লাভবান ব্যবসা। দেশের বিভিন্ন জেলায় এই ঘাস পাঠানো হয়। ভবিষ্যতে আরও বেশি জমিতে চাষাবাদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার এই প্রজেক্টের মাধ্যমে এলাকার অনেকের কাজের সুযোগ হয়েছে। অন্য কাজ থেকে এই কাজে শ্রম কম, টাকা বেশি। তাই সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে চায়। আর আমিও আনন্দিত যে আমার এখানে মানুষ কাজ করে উপকৃত হচ্ছে।’
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, ‘উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এই ঘাস চাষ ব্যাপক লাভজনক। লন কার্পেট ঘাস চাষে কোনো পোকা বা রোগ বালাইয়ের আক্রমণ নেই। তাই এর চাষ বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে উদ্যোক্তাদের কারিগরি পরামর্শসহ সহযোগিতা করা হচ্ছে।’
লন কার্পেট ঘাসের মূল নাম ‘মেক্সিকান-বারমুডা গ্রাস’। আমাদের দেশে অনেকে কার্পেট ঘাস নামে ডাকেন। বাড়ি বা অফিসের আঙিনায়, বাগানে, কবরস্থানে, পাহাড়ের সৌন্দর্য বর্ধনে ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে এই কার্পেট ঘাস।
আগে এ চারা ভারত থেকেও আনা হতো। বর্তমানে দেশেই এর চারা পাওয়া যায়। চারা আনার পর তা ছোট ছোট টুকরো করে ‘মুড়া’ বানিয়ে পতিত জমিতে পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর হালকা মাটি দিয়ে রোদে দেওয়া হয়। এরপর কয়েকদিন অল্প করে পানি দিতে হয়।