মোঃ বিল্লাল হোসেন, শেরপুর থেকেঃ
অবশেষে বিজিবির অভিযানে শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্ত ঘেষে অবস্থিত সোমেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু লুটপাট বন্ধ হয়েছে।
শুক্রবার (৩৯ নভেম্বর) বিকালে নকশি সীমান্ত ফাঁড়ির বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যরা সোমেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু লুটপাট বন্ধ করে দেয়।
বিজিবি সুত্রে জানা গেছে, ঝিনাইগাতী উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকোচা মৌজায় ৭.৭ একর এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন।
ট্রেন্ডারের মাধ্যমে এক কোটি টাকায় বালু মহালের ইজারা পায় শ্রীবরদী উপজেলার শামীম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আক্তার হোসেন। জানা গেছে, বালু মহালের ব্যবসা দেখভাল নিয়ন্ত্রণ করেন আল আমিনও শামীম সিন্ডিকেট।
বাংলা চলতি বছর ১ বৈশাখ থেকে সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু উত্তোলন শুরু করে ইজারাদারের লোকজন। বিজিবি সদস্যদের অভিযোগ অজ্ঞাত কারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু মহালের সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকোচা মৌজায় ৭ একর জমির স্থান নির্ধারণ করা হয়নি।
ফলে ইজারাদারের লোকজন ইজারা বহির্ভূত এলাকা তাওয়াকুচা,জুকাকুড়া, হালুয়াহাটি, খাড়ামুড়া, বালিজুরি রাঙ্গাজানসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েক শ একর এলাকা থেকে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছিল। নিয়ম অনুযায়ী ৭ একর এলাকায় ২৮ টি ড্রেজার মেশিন বসানোর সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু ইজারাদারের লোকজন ২ শতাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে সোমেশ্বরী নদীর ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবাধে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছিল।
অভিযোগ রয়েছে, ইজারাদারের লোক আল আমিন পুলিশ সদর দপ্তরে সিভিল প্রশাসনের একজন চাকুরীজীবী। তিনি গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে আতাত করে ও পুলিশ সদর দপ্তরের নাম ভাঙ্গিয়ে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছিল।
ফলে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের আওয়ামী লীগ সমর্থিত অন্যান্য শেয়ারদাররা গা ঢাকা দেয়।
এরপর থেকে আল আমিন ও শামীম কৌশলে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় কতিপয় নেতাকে তার ব্যবসায়ী শেয়ারদার হিসাবে নেন।
অভিযোগ রয়েছে গত কয়েক মাস যাবত বিএমপির নেতা ও পুলিশ সদর দপ্তরের ভয় ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে বেপরোয়া ভাবে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছিল
অভিযোগ রয়েছে গত কয়েক মাসে কোটি কোটি টাকা মূল্যের বালু লুটপাট করেছেন শামীম আল-আমিন সিন্ডিকেট।
দুই শতাধিক ড্রেজার মেশিনে অবাধে বালু উত্তোলনও পরিবহন করায় বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছেন নদী ভাঙ্গন।
রাস্তাঘাট ভেঙ্গে দুমড়ে মুছরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত বালু বুঝাই ট্রাক ও মাহিন্দ্রের দাপটে রাস্তাঘাট ভেঙ্গে চলাচল অনুপোযোগী হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
এছাড়া সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আয় থেকে । মাঝেমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বালু উত্তোলন যন্ত্র ধ্বংস ও বালু শ্রমিকদের সাজা দেওয়া হয়। করা হয় জরিমানাও।
কিন্তু ইজারার শর্ত ভঙ্গ করার দায়ে বালু মহালের ইজারা বাতিল করার বিধান থাকলেও তা করা হয়নি। ফলে অবৈধভাবে বালু লুটপাট বন্ধ হচ্ছে না।
বিজিবি সদস্যদের অভিযোগ সারারাত বালুর ট্রাক সীমান্ত এলাকায় যাতায়াত করে থাকে। এতে সীমান্ত এলাকা জুড়ে নানা ধরনের অপরাধ সংগঠিত হয়।
এতে বেড়ে গেছে সীমান্তে চোকারবারি ও মাদক পাচারকারীদের দৌরাত্ম । এ বিষয়ে বালু মহলের ইজারাদার শামীম আহাম্মেদ বলেন মেশিন মালিকরা তাদের দিকনির্দেশনা অমান্য করে লীজ এরিয়ার বাইরে থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে। তারা আমাদের কথায় কর্ণপাত করেন না।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ৩৯ ব্যাটেলিয়ানের ময়মনসিংহ বিজিবির সেক্টর কমান্ডার উক্ত স্থান থেকে কথাবার্তা তে লেফটেন্যান্ট করেন কে সংক্ষেপে কর্নেল নামে ডাকা হয় লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ সাবিবর হাসান মজুমদার বলেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু মহালের স্থান নির্ধারণের পর নির্ধারিত স্থান থেকে বালু উত্তোলন করবে নিয়মনীতির মধ্যে থেকে।
তিনি আরো বলেন সীমান্তে সরকারি সম্পদ লুটপাট রক্ষায় বিজবির ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য বিজিবি হস্তক্ষেপে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।