অফিস ডেক্স
ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবর্ষণ এবং হত্যা চেষ্টা মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি ফেনী সদর উপজেলা যুবলীগ কর্মী মোঃ শিপন’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব এর সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতার সহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগণের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ১৯ জুলাই ২০২৪ইং তারিখে ফেনী পৌরসভার তাকিয়া রোড এলাকায় মসজিদের সামনে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচী পালন করছিল। উক্ত কর্মসূচীতে ভিকটিম ওয়ার্কশপ কর্মচারী মোঃ আবদুল হান্নান (৩২) অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। আন্দোলন চলাকালীন ফেনী সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্যের প্ররোচনায় ও নির্দেশে ফেনী উপজেলা যুবলীগের সক্রিয় কর্মী মোঃ শিপন (৩৭) এবং অন্যান্য দুষ্কৃতিকারীরা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এছাড়াও, দুষ্কৃতিকারীরা হকি স্টিক, কিরিচ, দা ও লাঠি-সোটা দিয়ে ছাত্র জনতাকে পিটিয়ে এবং ককটেল বোমার বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এ সময় ভিকটিম মোঃ আবদুল হান্নান আন্দোলন কর্মসূচির স্থান থেকে দৌঁড়ে প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে বড় মসজিদ সংলগ্ন তাকিয়া রোডের মুখে পৌঁছালে ফেনী উপজেলা যুবলীগের সক্রিয় কর্মী মোঃ শিপন এবং অন্যান্য দৃষ্কতিকারীরা বেআইনি জনতাবদ্ধে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ছররা গুলি নিক্ষেপ করলে ভিকটিমের মাথায়, সমস্ত মুখমণ্ডলে এবং দুই চোখে গুলির স্প্লিন্টার লেগে ভিকটিম গুরতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আহত ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতিকারীরা তাদের হাতে থাকা লাঠি-সোটা, লোহার রড ও রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে ভিকটিমকে মৃত ভেবে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন এবং অন্যান্য ছাত্র-জনতা ভিকটিম মোঃ আবদুল হান্নান’কে আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ০৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে ভিকটিম উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় চক্ষু ইনিস্টিটিউট, ঢাকায় ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে। গুলির স্প্লিন্টারের আঘাতে ভিকটিমের বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে হারিয়ে যায় এবং ডান চোখের দৃষ্টি শক্তিও হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
উক্ত ঘটনায় ভিকটিম মোঃ আবদুল হান্নান বাদী হয়ে ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানায় ৮৪ জন এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ২০০/২৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ২৩, তারিখ- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিঃ, ধারা- ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩২৩/৩২৬/৩০৭/১১৪, দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০ তৎসহ ১৯০৮ সালের বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের ধারা- ৩/৬।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, সূত্রে বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি ফেনী উপজেলা যুবলীগ কর্মী মোঃ শিপন ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানাধীন ফেনী পৌরসভাস্থ শান্তি কোম্পানী রোড এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ০৭ নভেম্বর ২০২৪ইং তারিখ আনুমানিক ১৪০৫ ঘটিকায় বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি মোঃ শিপন (৩৭), পিতা-মৃত সিরাজুল ইসলাম, সাং-শান্তি কোম্পানী রোড, থানা-ফেনী সদর, জেলা-ফেনী'কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি এবং ফেনী উপজেলা যুবলীগের সক্রিয় কর্মী বলে স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে আরো জানায় যে মামলার ঘটনার দিন বেআইনি জনতাবদ্ধে সে তার সহযোগীদের নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ওপর নির্বিচারে আক্রমণ করে হতাহতের ঘটনা ঘটায়। মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট থেকে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য সে ফেনী জেলার বিভিন্ন অবস্থানে আত্মগোপন করে আসছিল বলেও জানায়।
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাকে ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৫ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত