*জামালপুর পৌরসভা এলাকার চাঞ্চল্যকর অপহরণসহ গণধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামী মোঃ জাহাঙ্গীর (৩৮)‘কে জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানাধীন তেলিপাড়া গ্রামস্থ আসামির নিজ বাড়ী হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪, সিপিসি-১, জামালপুর ক্যাম্প।*
১। র্যাব তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস, মাদক, অস্ত্র, অপহরণ, হত্যা, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ ও গণধর্ষণসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আপোষহীন অবস্থানে থেকে কাজ করে যাচ্ছে যা দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ কর্তৃক ইতোমধ্যেই বিশেষ ভাবে প্রশংসিত হয়েছে। র্যাব-১৪ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় গণধর্ষণের মতো অপরাধ কর্মকান্ড দমনের লক্ষ্যে র্যাব ফোর্সেস অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে সমাজ তথা দেশকে বাঁচাতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
২। এখানে উল্লেখ্য যে, বাদী মাহাদি (২১), পিতা-রুবেল, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা সাং- আগলা, থানা-নবাবগঞ্জ, জেলা-ঢাকা। ভিকটিম ছোট থেকেই বাদীর বাড়ীতে লালন পালন হয়ে আসছিলো।
ভিকটিম আস্তে আস্তে বড় হলে বাদী তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে। অতঃপর বাদী তার পরিবারের সম্মতি ছাড়াই ভিকটিমকে বিবাহ করে। এদিকে এজাহারনামীয় ১নং আসামী মোহাম্মদ আলমান বিন আজিজ বাদীর পিতার বন্ধু হওয়ার সুবাদে মাঝে মধ্যে আসামী মোঃ জাহাঙ্গীরকে নিয়ে ঢাকায় বাদীর বাসায় বেড়াইতে আসে। আসামী মোহাম্মদ আলমান বিন আজিজ বাদীকে সাউথ আফ্রিকায় পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। বাদীর পিতা ২য় বিবাহ করায় ১ম স্ত্রীকে তার গ্রামের বাড়ী জামালপুরে রেখে ২য় স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। বাদী তার স্ত্রী সুমাইয়া‘কে নিয়ে ঢাকায় তার পিতার বাসায় থাকেন।
বাদী তার মাতাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেই দিনই ১নং আসামী মোহাম্মদ আলমান বিন আজিজ ঢাকায় বাদীর বাসায় বেড়াতে আসে।
বাদীর পিতা জরুরী কাজে ঢাকার বাইরে ছিল। ১নং আসামী তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বাদীর বাসায় অপেক্ষা করাকালে ভিকটিমের সঙ্গে বিভিন্ন আলাপ আলোচনা করে। আলোচনার এক পর্যায়ে বাদীর স্ত্রীকে অনৈতিক কাজ করার প্রস্তাব দিলে ভিকটিম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং ১নং আসামীকে অপমান করে বাসা থেকে বের করে দেয়।
পরে, বাদী বাসায় এসে তার স্ত্রীর নিকট ঘটনার বিস্তারিত শুনে এবং বাদী তার মাতাকে চিকিৎসা শেষে দুইদিন পর জামালপুর পাঠিয়ে দেন।
কিছুদিন পর অর্থাৎ ১৯/০৮/২০২৩ ইং তারিখে বাদী তার মাকে দেখতে তার স্ত্রীকে নিয়ে জামালপুরে তার গ্রামের বাড়ীতে চলে আসেন। ঘটনার দিন ইং ২৪/০৮/২০২৩ তারিখ রাত্রি আনুমানিক ০৯.৩০ ঘটিকার সময় বাদী ভিকটিমকে নিয়ে মির্জা আজম চত্বর বাইপাস মোড়ে স্পাইসি ড্রাগন রেস্টুরেন্ট দেখতে যান।
তারপর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ রোড দিয়ে নতুন পাইবাস মোড় দিয়ে বাদীর মাতার বাসায় বজ্রাপুরে যাওয়ার জন্য রিক্সায় উঠেন। ঐদিন রাত অনুমান ১০:০০ ঘটিকার সময় ঘটনাস্থলে আসা মাত্রই অজ্ঞাতনামা একটি মাইক্রোবাস বাদীর রিক্সার পিছন থেকে তাদের সামনে এসে ০৩ জন মাস্ক পড়া ব্যক্তি ভিকটিমকে অপহরণ করে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে নতুন বাইপাস মোড়ের দিকে চলে যায়।
বাদী ভিকটিমকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। ভোর আনুমানিক ০৫.৩০ ঘটিকায় ভিকটিম বাদীর মাতার বাসায় অসুস্থ অবস্থায় আসেন। পরবর্তীতে ভিকটিম তার স্বামী (বাদী)কে বলেন যে, তাকে ঘটনাস্থল হতে মাইক্রোবাসে জোর করে উঠিয়ে তার চোখ বেধে ফেলে এবং মুখে রুমাল ঢুকিয়ে দেয়।
ভিকটিমকে অজ্ঞাতনামা স্থানে নিয়ে গিয়ে ভিকটিমের চোখের বাধন খুলে দেয় এবং সেখানে ভিকটিমকে একটি বিল্ডিং ঘরে আটকে রেখে রাত অনুমান ১১.৪৫ ঘটিকার সময় ১নং মোহাম্মদ আলমান বিন আজিজ ও আসামী মোঃ জাহাঙ্গীর সেখানে এসে ১নং আসামী ভিকটিমকে বলে ঢাকায় সেদিনের অপমানের কথা এখনও ভুলি নাই। অনেক অপেক্ষার পর সুযোগ পেয়ে তোকে এখানে ধরে নিয়ে এসেছি, এখন সবাই মিলে তোকে ধর্ষণ করবো।
ধর্ষণ করার পর তোকে পাচার করে দিবো। এই বলে ১নং আসামী ভিকটিমের কাপড়-চোপড় খুলে ভিকটিমকে উলঙ্গ করে তার মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারন করেন।
অতঃপর ১নং আসামী মোহাম্মদ আলমান বিন আজিজ ভিকটিমকে বিছানায় শোয়াইয়া ভিকটিমের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষণ করিতে থাকে এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ১নং আসামীর মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিও ধারন করে।
এরপর পর্যায়ক্রমে আসামি জাহাঙ্গীর (৩৮) এবং অজ্ঞাতনামা ০৩ জন ব্যক্তি ভিকটিমকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ১নং আসামী ভিকটিমকে হুমকি দিয়ে বলে ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু বললে তার মোবাইলে ধারনকৃত ধর্ষণের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে। পরবর্তীতে, আসামীগণ ভিকটিমকে মাইক্রোবাস যোগে আজম চত্বরের সামনে এনে ফেলে রেখে দ্রুত গাড়ী নিয়ে পালিয়ে যায়। অতঃপর ভিকটিম অপরিচিত লোকের মাধ্যমে বাদীর মায়ের বাসায় আসে।
উক্ত ঘটনা শুনে বাদীর মাতা মান-সম্মানের ভয়ে তাদেরকে বাসা থেকে বের করে দেয়।
অতঃপর বাদী ও ভিকটিম তার দূর সম্পর্কের খালার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বাসায় আশ্রয় নেন।
পরবর্তীতে ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে জামালপুর জেলার সদর থানায় অভিযোগ করেন। যার মামলা নং-৬২/৭০২, তারিখঃ ২৬/০৮/২০২৩ ইং, ধারা-২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, (সংশোধিত/২০২০) এর ৭/৯(৩)/৩০। ঘটনার পর থেকে আসামী গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল।
৩। এরই প্রেক্ষিতে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে জামালপুর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মেজর মোঃ আবরার ফয়সাল সাদী এর নেতৃত্বে এবং মেজর মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এর উপস্থিতিতে র্যাবের একটি আভিযানিক দল ইং ২৪/০৪/২০২৪খ্রি.তারিখ রাত্রী অনুমান ০১.৩০ ঘটিকার সময় জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানাধীন তেলিপাড়া গ্রামস্থ নিজ বাড়ী হতে আসামী মোঃ জাহাঙ্গীর (৩৮), পিতা-মোঃ রফিকুল ইসলাম‘কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
৪। ধৃত আসামীকে জামালপুর জেলার সদর থানায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।