বহুল আলোচিত ২০০৯ সালের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুর্ধর্ষ ডাকাতি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ পলাতক শামীম ডাকাত (৩২)’কে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
র্যাব-৩ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২০০৯ সালের বহুল আলোচিত গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে একটি পরিবারের সদস্যদের দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুর্ধর্ষ ডাকাতি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ পলাতক কুখ্যাত ডাকাত ১। মোঃ শামীম মোল্যা (৩২), পিতা-মৃত আইয়ুব আলী মোল্যা, কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ’কে অদ্য ০৬/০৪/২০২৪ তারিখ ১৪.১০ ঘটিকায় গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি উক্ত দুর্ধর্ষ ডাকাতির সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও অনুসন্ধানে জানা যায় যে, ৩১ জুলাই ২০০৯ তারিখ সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানাধীন মাজড়া মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছবুর হোসেন মোল্যা তার স্ত্রী-সন্তানদের বাড়িতে রেখে তার চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে যায়। ছবুর মোল্যার অনুপস্থিতির সুযোগে ঐদিন রাত ০২.৩০ ঘটিকায় তার ঘরের দরজা ভেঙে গ্রেফতারকৃত আসামি শামীম ডাকাতসহ অপরাপর সহযোগী আসামি সাজু মোল্যা, নুরু মোল্যা, জুয়েল মোল্যা, সোহাগ, বুদ্দু শেখ, কোবাদ, বাবুল, শাহী, জনি, মাফিজুর ও আলামিন ঘরে প্রবেশ করে।
আসামিরা ছবুর মোল্যার স্ত্রী ও সন্তানকে টেনে হিঁচড়ে ঘুম থেকে উঠিয়ে তাদের গলায় ধারালো রামদা ও ছোরা ধরে কোনরকম শব্দ করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং ছবুর মোল্যার স্ত্রীর কানে থাকা স্বর্ণের দুল ও ট্রাংকে রক্ষিত নগদ ৭২,০০০/- টাকা, ০১ টি স্বর্ণের আংটি, ০১ টি স্বর্ণের চেইন, ০১ ভরি রুপার গহনা ইত্যাদি লুন্ঠন করে পালিয়ে যায়।
ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার পর ছবুর মোল্যার স্ত্রীর ডাক-চিৎকার শুনে প্রতিবেশী লোকজন ঘটনাস্থল ছবুর মোল্যার বাড়িতে উপস্থিত হয়। সংবাদ পেয়ে ছবুর মোল্যা নিজেও বাড়ি ফিরে আসে। ছবুর মোল্যার স্ত্রী ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে সাজু মোল্যা ও নুরু মোল্যাকে চিনতে পেরেছে বলে উপস্থিত সকলকে জানায়। পরদিন সকালে ছবুর মোল্যা বাদী হয়ে কাশিয়ানী থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করে। যার প্রেক্ষিতে পুলিশ সাজু মোল্যা ও নুরু মোল্যাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতির ঘটনায় নিজেরা জড়িত মর্মে স্বীকার করে এবং বর্ণিত ঘটনায় জড়িত শামীম ডাকাতসহ ১০ জনের নাম প্রকাশ করলে পুলিশ কর্তৃক শামীম ডাকাত গ্রেফতার হয়। জেল হাজতে ০৯ মাস অতিবাহিত করে সে জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপন করে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা এলাকায় একটি রেস্তোরায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।
মামলাটির দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালে বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ ২য় আদালত, গোপালগঞ্জ কর্তৃক উক্ত মামলার ১২ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়। রায় ঘোষনার পর গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে শামীম মোল্যা ময়মনসিংহ হতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় এসে আত্মগোপন করে।
র্যাবের গোয়েন্দা ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে অদ্য ০৬/০৪/২০২৪ তারিখ ১৪১০ ঘটিকায় র্যাব-৩ এর আভিযানিক দল তাকে গ্রেফতার করে।
উল্লেখ্য যে, ইতোমধ্যে উক্ত মামলার ১২ জন আসামির মধ্যে শামীম মোল্যা, জুয়েল মোল্যা, নুরু মোল্যা, সোহাগ, আলামিন, মাফিজুর ও কোবাদসহ মোট ০৭ জন গ্রেফতার হয়েছে এবং বাবুল শেখ ২০২৩ সালে মারা গিয়েছে।
মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক অপরাপর আসামিদের গ্রেফতারের জন্য র্যাব এর গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।