কুষ্টিয়ায় পারিবারিক কলহের জের ধরে ও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খেজের আলী (৬৫) নামের নিজের বাবাকে কোদাল দিয়ে হত্যা করে ভুট্টা ক্ষেতে লাশ ফেলে রাখার ঘটনায় দীর্ঘ ৫ মাস তদন্তের পর তার একমাত্র পুত্র আনোয়ার হোসেন ওরফে আনারুল (৪৬) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
শনিবার (৩০ মার্চ) আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার সময় আসামী আনারুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিবিআই অফিসে নিয়ে আসলে হত্যার সমস্ত ঘটনা স্বীকার করেন তিনি।
রবিবার (৩১ মার্চ) দুপুর ২ টার সময় কুষ্টিয়া চৌরহাস কুমারগাড়া এলাকায় অবস্থিত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর অফিসে সাংবাদিকদের এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই পুলিশ সুপার মোঃ শহীদ আবু সরোয়ার।
পিবিআই সুত্রে জানা যায়, গত ০৭/১০/২০২৩ ইং তারিখ সকাল আনুমানিক সাড়ে ৭ টার সময় কুষ্টিয়া দৌলতপুর থানার সংগ্রামপুর গ্রামের ঈদগাহ সংলগ্ন ভুট্টা ক্ষেতে খেজের আলী (৬৫) এর ক্ষত বিক্ষত লাশ পাওয়া যায়।
থানা পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর নিহত খেজের আলীর ভাই নাজির আলী বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৪, তারিখ-০৮/১০/২০২৩ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড। থানা পুলিশ মামলার কোন কূল কিনারা না পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে তদন্তের জন্য মামলাটি পিবিআইকে হস্তান্তর করে।
মামলাটি পিবিআইয়ের অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই কুষ্টিয়া জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোঃ শহীদ আবু সরোয়ারের সার্বিক সহযোগিতায় পিবিআই কুষ্টিয়ার একটি চৌকস দল মামলার মূল রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে। তদন্ত্রের সকল কলাকৌশল অবলম্বন করে জানতে পারে ঘটনার সাথে তার একমাত্র পুত্র আনারুল জড়িত। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও টানা জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আনোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আনারুল হত্যার বিষয়ে সমস্ত কিছু স্বীকার করে।
পুলিশ সুপার মোঃ শহীদ আবু সরোয়ার জানান, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি আনারুল এর আগে ৬ বছর সৌদি আরবে ছিলো তারপর ১ বছর মত মালয়েশিয়া থাকার পরে দেশে ফিরে আসে। তারপরেও তার পরিবার থেকে আবারো বিদেশে যাওয়ার চাপ ছিলো। তার বাবা বিভিন্ন জায়গায় জমি বন্ধক ও বিক্রি করে শেষবার ৬২ হাজার টাকা দিয়েছিলো। সেই ৬২ হাজার টাকা টিকিট করার আগেই সে ৫ হাজার টাকা খরচ করে ফেলে তা নিয়ে তার পরিবারের সাথে কলোহ সৃষ্টি হয়। এটা নিয়ে পরিবারের সাথে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে আনারুলের একমাত্র ছেলে
শিশির (২০) তার সাথে দুর্ব্যবহার করে। দুর্ব্যবহার করার সময় আনারুলের বাবা খেজের আলী সহ পরিবারের কেউ কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করার কারনে মনে মনে আনারুলের মধ্যে প্রতিহিংসার সৃষ্টি হয়। পরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আনারুল তার পিতা খেজের আলীক
রাতের আধারে কিছু গোপন কথা বলার জন্য বাড়ির পাশের গোরস্থান সংলগ্ন জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে পিছন থেকে সজোরে কোদাল দিয়ে তার মাথায় একাধিক আঘাত করে। এতে মাথার মগজ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। তার বাবা পড়ে গেলে আঘাত করে বুকের হাড় ভেঙ্গে ফেলে এবং তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে ভুট্টা ক্ষেতের মধ্যে লাশ ফেলে রেখে যায়। মামলাটির তদন্তত পিবিআই করার পর আসামী আনারুলকে গ্রেফতার করে তার দেয়া তথ্য ও দেখানো মতে হত্যায় ব্যবহৃত কোদাল পিবিআই কুষ্টিয়া টিম উদ্ধার করে।
তিনি আরও জানান, আসামী আনারুল স্বোচ্ছায় হত্যাকান্ড সম্পর্কে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করতে ইচ্ছা পোষন করেছে এবং পরবর্তী আইনী কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত