কুষ্টিয়ায় লালন স্মরণোৎসবে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
"মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি" বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র এই আধ্যাত্মিক বাণীতে স্মরণোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে এবারের স্মরণোৎসবে এক দিনের আয়োজন করা হয়।
রবিবার (২৪ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে লালন একাডেমীর অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লালন একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোঃ এহেতেশাম রেজা।
এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রউফ, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার বিপিএএ, বিপিএম, পিপিএম (বার) এ এইচ এম আবদুর রকিব, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক অ্যাড. লালিম হক। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিজ্ঞ পিপি অ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শেখ হাসান মেহেদী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, লালন একাডেমি এডহক কমিটির সদস্য ও জেলা পরিষদের সদস্য সেলিম হক, চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনামুল হক মঞ্জু সহ নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথি মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ নির্ভেজাল ধার্মিক মানুষ ছিলেন। তিনি আরো বলেন, লালন শাহের চিন্তা, চেতনা ও উন্নত দর্শন ছিল মানবতার জন্য, সমাজের জন্য এবং দেশের জন্য। লালন শাহ ছিলেন মানবতাবাদী, সুফি সাধক। তিনি অসাধারণ, অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন। এক সময় যে সমাজে সাম্প্রদায়িকতা ছিল, ধর্মের গোঁড়ামি ছিল, আমরা তা থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আবারও আমরা সেই সমাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যে সমাজের বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লড়াই করেছিলেন। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে বলেছিলেন"ধর্ম যার যার, আমরা মানুষ হবো সবার। সেই কথাগুলো লালনও বলেছিলেন।
হানিফ এমপি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শনের সঙ্গে লালনের দর্শনের অদ্ভুত মিল আমরা খুঁজে পাই। লালনের বাণী ও দর্শন সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। লালনের দর্শন ধারণ করে আমাদের সোনার মানুষ হতে হবে, সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, আজকে আমাদের সমাজে চরম নৈতিকতার অবক্ষয়। মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ, আস্থা নেই। মানুষের নীতি-নৈতিকতা ও সততা আস্তে আস্তে শেষ প্রান্তে চলে এসেছে।
হানিফ আরো বলেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানবতাবাদীর পথে ডাক দিয়েছিলেন। তিনি অহিংস মানবতার ব্রত নিয়ে দেহতত্ত্ব, ভাবতত্ত্ব, গুরুতত্ত্বসহ অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গেছেন। তাঁর এই অমর সৃষ্টি সঙ্গীত কোনো ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
তিনি আরও বলেন, হানাহানির এই পৃথিবীতে যে অশান্তি চলছে, অসম প্রতিযোগিতার এই সময়ে সুফিবাদ ও বাউল তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করি, তাহলে মনে হয়, আমরা সহজভাবে জীবনযাপন করতে পারব। বিশ্বময় এই হানাহানির যুগে লালনের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে শান্তিময় সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ফাগুনের শেষ সময়ে বাউল সম্রাট লালন সাঁইর কুষ্টিয়া ছেঁউড়িয়া আখড়াবাড়ীতে দোলপুর্ণিমা বা স্মরণোৎসব। কিন্তু পবিত্র রমজানের কারণে তিনদিনের দোল উৎসব পূর্ণসেবার মধ্যে দিয়ে একদিনেই শেষ হয়েছে। অন্যদিকে লালন অনুসারী ভক্তরা তাদের সাইঁজির রীতি অনুযায়ী অডিটোরিয়ামের নিচে সাধু সঙ্গ করেন। লালন ভক্ত সাধুরা বলেন, লালন ফকির মানুষের পক্ষে, শান্তির পক্ষে। তাই তারাও শান্তির পক্ষে।
উল্লেখ্য, বাউল সম্রাট লালন শাহ তার জীবদ্দশায় ছেঁউড়িয়ার এই আখড়াবাড়িতে প্রতি বছর চৈত্রের দোলপূর্ণিমা রাতে বাউলদের নিয়ে সাধু সঙ্গ উৎসব করতেন। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক তার মৃত্যুর পরও এ উৎসব চালিয়ে আসছে তার অনুসারীরা।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত