ঈদগাঁওর কানিয়াছড়ায় একটি ফার্মের কারণে স্বস্তিতে নেই স্থানীয়রা
স্টাফ রিপোর্টার,ঈদগাঁও
কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে একটি পোল্ট্রি ফার্মের কারণে দিনরাত বাড়ি ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। অসহ্য দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির উৎপাতে স্থানীয়দের জীবন বিষিয়ে উঠছে। চলাচলে অসুবিধে হচ্ছে পথচারীদের। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন লোকজন। ফার্মের বর্জ্যের কারণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে ঐতিহ্য বাহী একটি ছড়া। ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠেছে শত বছরের পুরোনো খাল। ঘটনাটি ঘটেছে ইউনিয়নের কানিয়াছড়া এলাকায়।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,বিগত ১৪ বছর যাবত কানিয়াছড়ায় একটি পোল্ট্রি ফার্ম পরিচালিত হচ্ছে। ফার্মের আয়তন খুবই বড়। স্থানীয় মরহুম ছৈয়দ করিম হাজির পুত্র শফিউল আলম এ ফার্মের মালিক। ফার্মটি স্থানীয় জনগণের জন্য বিষ পোড়ায় পরিণত হয়েছে। ফার্মের উৎকট দুর্গন্ধে এখন অধিবাসীরা দিশেহারা। অসহ্য এই দুর্গন্ধের কারণে দিনরাত ২৪ ঘন্টা ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সাথে রয়েছে মশা- মাছির তীব্র উৎপাত। স্বস্তিতে নেই স্থানীয়রা। তাদের নিয়মিত চলাচল পদে পদে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। বিরক্তিকর এ দুর্গন্ধ দিন ছড়িয়ে পড়ছে সংলগ্ন বসতবাড়ি সমূহ।
দেখা গেছে, ফার্মের আশেপাশে ১৫/২০ টি বসত বাড়ি রয়েছে। যাতে রয়েছে শতাধিক মানুষের বসবাস। এসব লোকজন প্রতিনিয়ত ফার্মটির দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ। ঈদগাঁও- ঈদগড় সড়কের পার্শ্ব বর্তী ব্রিজের নিচে হাজার হাজার মশা- মাছির উপদ্রব। ফার্মটির বিষ্ঠা ও ময়লা আবর্জনা ফেলা হয় এ ব্রিজের নিচে। ঐতিহ্যবাহী কানিয়া ছড়ার উপর ব্রিজটি স্থাপিত। এ ছড়ার নামে গ্রামটির নামকরণ হয়েছে কানিয়াছড়া। কিন্তু বর্তমানে ছড়াটির অবস্থা খুবই বেহাল ও নাজুক। মুরগির পায়খানা ও উচ্ছিষ্ট ছড়ার পানিকে বিবর্ণ করে তুলেছে। ম্রিয়মাণ পানির উপর মশা- মাছির রাম রাজত্ব চলছে। ছড়ার এ দূষিত পানি প্রবাহিত হয়ে পড়ছে শতবর্ষের পুরনো ঈদগাঁও খালে। যুগ যুগ ধরে স্থানীয় লোকজন গোসল- আসল, কাপড়-চোপড় ধোয়া এবং গৃহস্থালি নানা কাজে এ খালের পানি ব্যবহার করে আসছেন।
প্রায়স খালের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে স্থানীয় লোকজন গোসলসহ অন্যান্য কাজে পানি ব্যবহার করছেন। দূষিত হলেও নিরুপায় হয়ে তারা এ পানি ব্যবহার করছেন।
ভুক্তভোগী বাবলা পাল জানান, ফার্মের বিকট দুর্গন্ধে তাদের কষ্টের সীমা নেই। বাড়ি ঘরের দরজা- জানালা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। মালিককে বলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছেনা। তিনি জনবহুল এলাকা থেকে ফার্মটি অন্যত্র সরানোর দাবি জানান।
শিক্ষক পূর্ণাম পাল জানান, ফার্মের দুর্গন্ধ ও মশা- মাছির কারণে তিনি তার ঘরের দরজা- জানালা প্রতিনিয়ত বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ফার্মের পায়খানা ও আবর্জনা ফেলানোর কারণে ঐতিহ্যবাহী কানিয়াছড়াটি এখন চেনাই যাচ্ছে না। সব সময় মশা- মাছির উপদ্রব। তিনি জনজীবন বিঘ্নকারী এ ফার্ম দ্রুত উচ্ছেদের দাবি তোলেন।
সচেতন যুবক মঞ্জুর আলম বলেন, এলাকাবাসী দীর্ঘদিন অসহ্য যন্ত্রণায় রয়েছেন। দিন দিন এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এটির প্রতিকার হওয়া দরকার। তিনি পার্শ্ববর্তী ছড়া ও ঈদগাঁও খালটি এভাবে দূষিত হওয়ার জন্য এ ফার্মকে দায়ী করেন।
মেম্বার প্রদোষ পাল মুন্না জানান, সংগঠিত ঘটনায় ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ছৈয়দ আলম অভিযুক্ত শফিউলকে বিহিত একটা ব্যবস্থা করার কথা বলেছিলেন। মেম্বারও এ অবস্থার জন্য তীব্র অস্বস্তি প্রকাশ করেন।
ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম প্রথমে এ ধরনের অভিযোগ পাননি বললেও পরক্ষণে ব্যাপারটি তার পুরোপুরি মনে নেই বলে জানান।
তবে ফার্মটির মালিক শফিউল আলমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ফার্মের পায়খানা, প্রস্রাব ও বিষ্ঠা যথাসম্ভব নিরাপদ স্থানে সরানোর উদ্যোগ নেবেন।