অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটির চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে সিকিউরিটি এজেন্সির অফিসে আটকে রেখে শারীরিক ও পাশবিকভাবে নির্যাতন করে বিপুল অংকের মুক্তিপণ দাবির সাথে জড়িত প্রতারক চক্রের ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে এ পর্যন্ত অপহরণকারী, সন্ত্রাসী, এজাহারনামীয় আসামী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, প্রতারকচক্র, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ১৯ মার্চ ২০২৪ তারিখে বেস্ট এ্যাকশন সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি দেখতে পেয়ে ভিকটিম সাকিব হোসেন ও তার পূর্ব পরিচিত ফারজানা আক্তার পাখি উভয়েই চাকুরীর প্রত্যাশায় উক্ত কোম্পানীতে আসলে কোম্পানীর লোকেরা তাদেরকে আটক করে শারিরীকভাবে নির্যাতন করে এবং ভিকটিমের পরিবারের নিকট ফোন দিয়ে মুক্তিপন বাবদ ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে।
বর্ণিত বিষয়ে একই তারিখে ভিকটিমের বাবা ছেলেকে উদ্ধারের জন্য র্যাব-১, সিপিএসসি, গাজীপুর এর নিকট আইনি সহায়তা কামনা করেন। র্যাব-১, সিপিএসসি, গাজীপুর উক্ত প্রতারক চক্রকে গ্রেফতারের লক্ষে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় অদ্য ২০ মার্চ ২০২৪ ইং তারিখ ১২.৫০ ঘটিকায় র্যাব-১, সিপিএসসি, গাজীপুর এর একটি আভিযানিক দল গাজীপুর জেলার গাছা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য ১। মোঃ আস্তাকুল আমিন আনাম (৩০), পিতা-শফিকুল ইসলাম, জলঢাকা, নীলফামারী, ২। মোঃ তৌফিক (২৪), পিতা-মোঃ শফিকুল ইসলাম, সদর, নীলফামারী, ৩। মোঃ ইমরান হোসেন (১৯), পিতা-মোঃ রনিছার রহমান, বাঘমারা, রাজশাহী, ৪। মোঃ জুনায়েদ (২১), পিতা-আব্দুল আজিজ, সিংড়া, নাটোর, ৫। মোঃ রনি আহমেদ (২১), পিতা-মোঃ রমজান আলী, ভালুকা, ময়মনসিংহ, ৬। সালাউদ্দিন সরকার (২০) পিতা-মোঃ হালিমুদ্দিন সরকার, ভালুকা, ময়মনসিংহ, ৭। মোঃ জিসান হোসেন (২১), পিতা-ছানোয়ার হোসেন, ঈশ্বরদী, পাবনা, ৮। মোঃ রায়হান (১৮) পিতা-মোঃ চানরায় মিয়া, তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ, ৯। মোঃ আতিক হাসান (১৯), পিতা-মোঃ মাসুদ রানা, চাপাইনবাবগঞ্জ, ১০। আজিজুল হাকিম (২৩), পিতা-মোঃ রফিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহ সদর, ময়মনসিংহ, ১১। সম্পা আক্তার (২৪), পিতা-মোঃ শাহজাহান মিয়া, বাঞ্চারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১২। মোছাঃ বিউটি খাতুন (২১), পিতা-মোঃ সারোয়ার হোসেন, শেরপুর সদর, শেরপুর, ১৩। বর্ষা খাতুন (১৯), পিতা-মোঃ আকতারুজ্জামান, কোতয়ালী, যশোর ও ১৪। তাহসিন আক্তার মীম (২০), পিতা-মোঃ জহিরুল ইসলাম, বরিশাল সদর, বরিশাল’দের গ্রেফতার করা হয়।
এসময় ভিকটিম সাকিব ও ফারজানা ছাড়াও আরো ২৫ জন সহ সর্বমোট ২৭ জন ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন প্রতারণার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। দীর্ঘদিন যাবৎ এই চক্রটি বিভিন্ন সময়ে বেস্ট এ্যাকশন সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নং-০১৭৯৬৮৭২৬৭১, ০১৭৩৩৩৪৮১৬১, ০১৭৫০১৬৬৭১১, ০১৭৬০১৩৫৯৬, ০১৭১৭৫০৬০২১ এর মাধ্যমে অনলাইনে ভুয়া চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়। চক্রটি প্রায় ০৩ মাস যাবৎ এই প্রতারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। চক্রটির মোট সদস্য সংখ্যা ২০ জন এবং চক্রটির মূলহোতা গ্রেফতারকৃত ০৫ জন।
চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার চাকুরী প্রত্যাশীদের অর্থের বিনিময়ে চাকুরী দেয়ার কথা বলে এই চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত ১। মোঃ আস্তাকুল আমিন আনাম (৩০), ২। মোঃ তৌফিক (২৪), ৩। মোঃ ইমরান হোসেন (১৯) ৪। মোঃ জুনায়েদ (২১) ৫। মোঃ রনি আহমেদ (২১)দের নিকট নিয়ে আসত।
গ্রেফতারকৃত ১৪ জন চাকুরী প্রত্যাশীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এমনকি আটক করে রেখে তাদের পরিবারের নিকট থেকে বিপুল অংকের নগদ অর্থ হাতিয়ে নিত। তারা প্রতারণার মাধ্যমে চাকুরী দেয়ার নামে অসংখ্য ব্যক্তির নিকট হতে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এছাড়াও চক্রটির স্থায়ীভাবে কোন অফিস ছিল না বিধায় গ্রেফতারকৃত আসামীরা রশিদ মার্কেট, হারিকেন রোড, থানা-গাছা, জিএমপি গাজীপুর এলাকায় ভাড়া বাসাকে তারা অস্থায়ী অফিস হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। আত্মগোপনের জন্য তারা প্রায়শই নিজেদের মোবাইল নম্বর বন্ধ রেখে নিকট আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবের বাসায় অবস্থান করত।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম সাকিব ও ফারজানা আক্তার উক্ত কোম্পানীতে চাকুরীর জন্য আসলে তারা তাদেরকে প্রথমে আটকে রেখে গাজীপুরের একটি অজ্ঞাত বাড়ীতে নিয়ে যায় এবং ভিকটিমদের পরিবারের নিকট ফোন করে ৫,০০,০০০/-(পাঁচ লক্ষ) টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।