র্যাব-১ এর বিশেষ অভিযানে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গী এলাকা থেকে একটি কিশোর গ্যাং গ্রুপের ০৭ জন সদস্য গ্রেফতার।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, খুনী, বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে কিশোর গ্যাং কর্তৃক সংঘটিত চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং, গ্যাং কালচার, উঠতি বয়সি ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সাথে অন্য গ্রুপের মারামারি করা বহুল আলোচিত ঘটনায় পরিনত হয়েছে। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করার জন্য উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেধে ঘুরে বেড়ায়, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়, পথচারীদের উত্ত্যক্ত করে এবং ছোট খাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের উপর চড়াও হয়ে হাতাহাতি-মারামারি করে।
এছাড়াও তারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একই এলাকায় অন্যান্য গ্রুপের সাথে প্রায়সই কোন্দলে লিপ্ত থাকে। তাদের এই ধরনের চলাফেরার কারণে সাধারণ লোকজন তাদের অনেকটাই এড়িয়ে চলে।
এই এড়ানোর বিষয়টিকে তারা তাদের ক্ষমতা হিসেবে ভাবে এবং কোন ঘটনায় কেউ কোন প্রতিবাদ করলেও ক্ষমতা জাহির করতে মারামারি করাসহ অনেক সময় খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না।
র্যাব-১ এর গোয়েন্দা অনুসন্ধানে রাজধানীর মহাখালী, বিমানবন্দর, বনানী, গাজীপুর ও টঙ্গি থানাধীন এলাকায় কতিপয় কিশোর গ্যাং এর কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়।
জানা যায় যে, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের নামে পেশিশক্তি প্রদর্শন করে আসছে। তারা মাদক সেবন, সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল চালিয়ে বিকট শব্দ করে জনমনে ভীতির সঞ্চার, স্কুল-কলেজে বুলিং, র্যাগিং, ইভটিজিং, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিশ্চিত ক্ষতির মুখে ধাবিত করছে।
এরই প্রেক্ষিতে কিশোর গ্যাং এর বিপথগামী সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ সাস্প্রতিক সময়ে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ১৮ মার্চ ২০২৪ তারিখ রাত ১৯.০০ হতে ২২.০০ ঘটিকায় র্যাব-১ এর একাধিক আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকার আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গি ও গাজীপুর এলাকায় একাধিক অভিযান পরিচালনা করে কিশোর গ্যাং গ্রুপের দলনেতা মোঃ শহিদুল (৩১)’সহ ০৭ জনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতদের নাম ১) মোঃ শহিদুল (৩১), পিতা-মোঃ মৌবের হোসেন, থানা-কোতয়ালি, রংপুর, ২) মোঃ ফারুক (২৪), পিতা-মোঃ ভুট্টু মিয়া, থানা-ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, ৩) মোঃ শামীম (১৯), পিতা-আবুল কালাম, থানা-ভোলা সদর, ভোলা, ৪) মোঃ হৃদয় (২২), পিতা-জামিল হোসেন, থানা-গাইবান্ধা সদর, গাইবান্ধা, ৫) মোঃ আলমগীর হোসেন (২৫), পিতা-মোঃ মোজ্জামেল হক , থানা-রৌমারী, কুড়িগ্রাম, ৬) মোঃ জাহিদ (১৯), পিতা-মোঃ আমিরুল ইসলাম, থানা-পূবাইল, গাজীপুর এবং ৭) মোঃ সবুজ (২৪), পিতা-মোঃ শাহ্ আলম বেপারী, থানা-চাঁদপুর, জেলা-চাঁদপুর’দেরকে গ্রেফতার করে।
এসময় ধৃত আসামীদের নিকট হতে ০১ টি চাইনিজ কুড়াল, ০১ টি লোহার রড়, ০১ টি সুইচ গিয়ার চাকু, ০২ টি খুর, ০২ টি সাইকেলের চেইন, ০৪ টি মোবাইল ফোন এবং নগদ-১৭০০/- টাকা উদ্ধার করা হয়।
ধৃত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা কিশোর গ্যাং দলনেতা মোঃ শহিদুল (৩১) অন্যতম সক্রিয় সদস্য।
ধৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, প্রত্যেক গ্রপের আনুমানিক সদস্য ১০/১৫ জন। তারা টাকার বিনিময়ে যে কোন পক্ষের হয়ে মারামারি, দখলবাজি, পিকেটিং, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিল মর্মে স্বীকার করে। কিশোর গ্যাং এর বিপদগামী সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ এর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ০৪ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক’সহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।