সময়ের আবর্তে আবারও এসে গেল ইসলামিক ক্যালেন্ডারের পবিত্রতম মাস রমজান। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মুসলিম প্রতি বছরের মতো এবারও রমজান পালন করছেন।
ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কোরান নাজিল হয়েছিল এই রমজান মাসেই। এসময় মুসলিমদের জন্য মাসব্যাপী রোজা রাখা বাধ্যতামূলক এবং এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি।
সাধারণত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মানুষদের রোজা রাখতে হয়। অসুস্থ, বয়ঃসন্ধি পার না হওয়া শিশু, গর্ভবতী, স্তন্যদায়ী মা বা ঋতুস্রাব চলমান নারী এবং যারা সফররত ব্যক্তিদের জন্য রোজার অব্যাহতি থাকে।
যেহেতু রোজা থাকা অবস্থায় কোনও পানাহার করা যায় না তাই এ মাস জুড়েই প্রাধান্য পায় রোজা শুরুর আগে সেহরি বা সুহর এবং সমাপ্তির জন্য ইফতার।
কোন ধরনের খাবার ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিবারণে এবং মাসজুড়ে সচল থাকতে সাহায্য করতে পারে?
সেহরিতে কোন ধরনের খাবার?
রোজা রাখার প্রস্তুতি সেহরি দিয়েই শুরু হয়। এজন্য সঠিক ধরনের খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ যা সারাদিনের ক্ষুধা মোকাবেলায় সাহায্য করবে।
“রমজান মাসে দিনভর যে শক্তি ও পুষ্টির চাহিদা থাকে তা পূরণে সেহরি ও ইফতারে এমন খাবার খেতে হবে যেগুলো প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ এবং এ সময় যথেষ্ট পানি পান করতে হবে,” বলছিলেন তুরস্কের পুষ্টিবিদ ইসমেত তামের।
তিনি মূলত পুষ্টিকর কিন্তু খুব বেশি ভারী না, আবার পেট ভরবে এমন খাবারে গুরুত্ব দেন।
যেমন দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, শসা-টমেটোর মতো সালাদ, ফলমূল, স্যুপ, অলিভ অয়েল অথবা কম তেলে রান্না করা সবজি এমন খাবারের দিকে গুরুত্ব দেন তিনি।
এছাড়া মাছ, মাংস এবং সবজির পাশাপাশি ‘দই-চিড়া’র মতো খাবারের দিকেও গুরুত্ব দেন অনেক পুষ্টিবিদ।
দেহের পানির চাহিদা পূরণে ইফতারের সময় থেকে সেহরি পর্যন্ত অন্তত দুই থেকে তিন লিটার পানি খাওয়ার পরামর্শ কমবেশি সবাই দেন।
আরেক পুষ্টিবিদ ব্রিজেট বেনেলামের মতে সেহরিতে জটিল ধরনের শর্করা খাবার খাওয়া ভালো, বিশেষত হোলগ্রেইন বা পূর্ণাঙ্গ শস্য, কারণ তেমন খাবার ধীরে ধীরে শরীরে শক্তি সঞ্চার করে যেটা সারাদিনের জন্য উপকারি।
“ওটস, হোলগ্রেইন বা সম্পূর্ণ শস্যের রুটি, সিরিয়াল এ জাতীয় খাবার সেহরির জন্য বেশ ভালো” উদাহরণ দেন তিনি।
এক্ষেত্রে আরেকটি বিবেচনার বিষয় হলো যেসব খাবারে ফাইবার বা আঁশ বেশি থাকে। কিছু গবেষণায় দেখা যায় মটরশুঁটি, শিম বা ছোলার মতো খাবার ভরপেট খাবার খাওয়ার মতো অনুভূতি ৩০ শতাংশের বেশি বাড়িয়ে দেয়।
আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে আরও রয়েছে ডাল জাতীয় শস্য, খোসাসহ রান্না করা আলু বা শেকড় জাতীয় সবজি, বাদাম, তেলবীজ জাতীয় খাদ্য এবং ফলমূল। হোলগ্রেইন আটার রুটি ছাড়াও বাদামি চালেও আঁশ থাকে।
তবে পর্যাপ্ত পানি করার পাশাপাশি লবণাক্ত খাবারের বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করেন পুষ্টিবিদ বেনেলাম।
“লবনযুক্ত খাবার পানির তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয় এবং যেখানে সারাদিন পানি পান করা যাবে না সে অবস্থায় তৃষ্ণার্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি নিশ্চয়ই কেউ চাইবেন না,” বলেন তিনি।
সেহরিতে ক্যাফেইন আছে তেমন পানীয় পরিহার করাও গুরুত্বপূর্ণ।
ইফতারে কী খাবার?
রোজা ভাঙ্গার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট পরিমাণে তরল পদার্থের পাশাপাশি শরীরে শক্তি পেতে এমন খাবারও গুরুত্বপূর্ণ যেখানে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে। এ চাহিদা মেটাতে ইসলামের নবী মোহাম্মদের সময় থেকে খেজুরই সবচেয়ে বেশি খেয়ে আসছে মানুষ।
“শক্তি সঞ্চয় এবং দেহে পানির ঘাটতি পূরণে খেজুর এবং পানি রোজা ভাঙ্গার খুবই উৎকৃষ্ট উপায়,” বলেন পুষ্টিবিদ ব্রিজেট বেনেলাম।
এছাড়া ডাল, শিম বা মটরশুঁটির মতো বীজ, সবজি দিয়ে তৈরি করা স্যুপও উৎকৃষ্ট হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি, কারণ এতে করে দেহে পর্যাপ্ত “পুষ্টি ও আঁশ পাওয়া যায় কোনও হাঁসফাঁস বোধ করা ছাড়াই।”
“সারাদিন না খেয়ে থাকার পর খুব ভারী খাবার দিয়ে শুরু করলে তা হয়তো আপনাকে ক্লান্ত, অলস ও অসুস্থ বোধ করাতে পারে,” বলছিলেন তিনি।
দেশ ও সংস্কৃতি ভেদে ইফতারের খাবারের ধরনও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
যেমন বাংলাদেশে ভাজাপোড়া খাবার বেশ প্রচলিত যা সাধারণত খুব একটা স্বাস্থ্যকর হয় না, বিশেষত তেলটা যদি ভালো না হয়। স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ভাজাপোড়া খাবার বাদ দিয়ে দেবেন এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া কঠিন।
তাই তেমন খাবার পুরোপুরি বাদ না দিলেও পরিমিতি বজায় রেখে খাওয়ার কথা বলেন অনেক বিশেষজ্ঞ।