জাল টাকা প্রস্তুতকারী চক্রের মূলহোতা
রাজধানীর রূপনগর থানাধীন ইস্টার্ন হাউজিং এলাকা হতে জাল টাকা প্রস্তুতকারী চক্রের মূলহোতা পারভেজ হোসাইন @ পারভেজ সহ ০৪ জন’কে আটক এবং জাল নোট তৈরীতে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদিসহ বিপুল পরিমাণ দেশী-বিদেশী জাল নোট উদ্ধার করেছে র্যাব-১।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এক শ্রেণীর অসাধু চক্র বাংলাদেশী জালনোট তৈরী করে সাধারণ মানুয়ের সাথে প্রতারণা করে আসছে। র্যাব সবসময় এধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
এলিট ফোর্স র্যাব সূচনালগ্ন হতে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, জাল টাকা ব্যবসায়ী, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, খুনী, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবাজদের কঠোর হস্তে দমনের মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে। ফলশ্রুতিতে জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং র্যাব জনগনের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
সম্প্রতিকালে জাল টাকা তৈরির সাথে বেশ কয়েকটি চক্র জড়িত আছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়। বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে অচল করতে এবং সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে অধিক মুনাফার লোভে জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাত করার সংঘবদ্ধ কিছু চক্র সক্রিয় হয়ে পড়ছে।
এই চক্রগুলো জাল টাকা তৈরি করে নির্দিষ্ট কয়েকজন সদস্য দিয়ে আসল টাকার ভেতর জাল টাকা মিলিয়ে দিয়ে সহজ সরল মানুষকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দপ্তরের নির্দেশনায় অনুযায়ী দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর এই রকম চক্রের কিছু সদস্য র্যাবের জালে ধরা পড়ে।
এরই ধারাবাহিকতায় অদ্য ০৭ মার্চ ২০২৪ ইং তারিখ ভোররাতের দিকে র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সূত্রের মাধ্যমে জানতে পারে যে, ঢাকা মহানগরীর মিরপুরের রুপনগর থানাধীন এলাকায় একটি বাসায় একটি চক্র জাল টাকা তৈরি করে আসছে।
প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে আভিযানিক দলটি বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জালনোট তৈরী ও ব্যবসায়ী চক্রের মূলহোতা ১) মোঃ পারভেজ হোসেন (২৪), পিতা- মোঃ কামাল হোসেন, থানা-নড়াইল সদর, জেলা-নড়াইল, সক্রিয় সদস্য ২) মোঃ রুবেল ইসলাম @ হৃদয় (১৯), পিতা- আজিবর রহমান, থানা- নাগেশ^রী, জেলা- কুড়িগ্রাম, ৩) নুর আলম @ সাগর(২৩), পিতা- আব্দুল লতিফ, থানা-ধোবাউড়া, জেলা- ময়মনসিংহ, ৪) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান @ মোস্তাকিম(২২), পিতা- মোঃ বেলাল, থানা- ফুলবাড়িয়া, জেলা- দিনাজপুর’দেরকে গ্রেফতার করে।
এসময় ধৃত আসামীদের নিকট হতে ২,৪৯,০০০ টাকা মূল্যমানের জালনোট যার মধ্যে ২০০ টাকার জাল নোট ১২৪০ টি এবং ১০০০ টাকার জাল নোট ০১ টি, মালয়েশিয়ার ৫০ রিংগিত মূল্যমানের জাল নোট ৪০টি, ওমান এর ৫০ রিয়াল মূল্যমানের জাল নোট ৪২ টি, সৌদিআরব ২০ রিয়াল মূল্যমানের জাল নোট ২৩ টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ২০ দিরহাম মূল্যমানের জাল নোট ৪২ টি, জাল নোট তৈরীতে ব্যবহৃত ০১ টি কালার প্রিন্টার, ০১ টি ল্যাপটপ, ৫০ পাতা অ৪ সাইজের সাদা কাগজ, ০৩ টি জাল টাকা তৈরীতে ব্যবহারকৃত ক্যামিক্যাল সহ প্লাস্টিকের কৌটা, টাকা কাটার কাজে ব্যবহৃত ০১ টি কাচি, ০১টি স্টীলের স্কেল, ০১ টি এন্টি কাটার, এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার ১৯০ গ্রাম, ০১টি জাল টাকা বহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাভেল ব্যাগ, ০৪ টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ১১২০/- টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত পারভেজ এই জাল নোট ছাপানো চক্রের মূলহোতা। সে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া ও অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে জাল টাকা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য নেটওয়ার্ক তৈরী করে।
এ সকল পেইজ প্রমোট ও বুস্টিং করে অনেক পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা সংগ্রহ করে যারা আসন্ন মাহে রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতর কে টার্গেট করে জাল নোটের ব্যবসায় লিপ্ত হয়। তারা প্রতি ১ লক্ষ টাকা মূল্যমানের জাল নোট ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করত। ঈদ উপলক্ষে জাল নোটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে তারা প্রতি ১ লাখ টাকার জাল নোট ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছিল মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত রুবেল দেশী-বিদেশী জাল টাকা ছাপানোর মূল কারিগর। সে বিভিন্ন সীমান্তবর্তী জেলা হতে টাকা ছাপানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং জাল টাকার ডিজাইনসহ ছাচ সংগ্রহ করে। অনলাইনে প্রাপ্ত চাহিদা অনুযায়ী সে বিভিন্ন মূল্যমানের দেশী বিদেশী জাল টাকা ছাপানোর কাজ করতো।
গ্রেফতারকৃত নুর আলম @ সাগর এই চক্রের কাটিং মাস্টার হিসেবে পরিচিত। তৈরীকৃত দেশী-বিদেশী জাল টাকা প্রিন্টিং এর পর সঠিক সাইজ অনুযায়ী কাটিং এর কাজ করতো। পাশাপাশি ফোনে এবং অনলাইনে অর্ডারকৃত জাল টাকা বিভিন্ন জনের কাছে পৌছে দিতে ডেলিভারি ম্যান হিসেবেও কাজ করতো।
গ্রেফতারকৃত মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান @ মোস্তাকিম অটোরিক্সা গেরেজের মালিক। তার রিক্সা গ্যারেজকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে মূলহোতা পারভেজ এর নেতৃত্বে জাল টাকার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। মাঝে মাঝে সে ডেলিভারি ম্যান হিসেবে ও কাজ করতো।
ধৃত আসামীদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বিভিন্ন জায়গা থেকে দেশী-বিদেশী জালনোট তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন যাবৎ জালনোট তৈরি এবং সরবরাহ করে আসছিল। আসন্ন মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরকে টার্গেট করে বিপুল পরিমান জালনোট বাজারে সরবরাহ করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল মর্মে স্বীকার করে।
উদ্ধারকৃত জাল টাকা, জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদি ও গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
স্বাক্ষরিত/-
মোঃ মাহফুজুর রহমান
সহকারী পুলিশ সুপার
সহকারী পরিচালক (মিডিয়া অফিসার)
অধিনায়কের পক্ষে
মোবাইলঃ ০১৭৭৭৭১০১০৩