গাজীপুর জেলার, শ্রীপুর থানা এলাকা হতে টাকার বিনিময়ে সরকারী চাকুরী প্রলোভনকারী প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ০২ জন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে এ পর্যন্ত অপহরণকারী, সন্ত্রাসী, এজাহারনামীয় আসামী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, প্রতারকচক্র, ধর্ষণকারী, পর্ণোগ্রাফি বিস্তারকারী, চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
বাদী মোঃ শাহিন (৪৫), পিতা-আব্দুল হামিদ, গ্রাম-রামনগর, থানা-কোতয়ালী, জেলা-দিনাজপুর বর্তমানে জেলা ও দায়রা জজ আদালত, দিনাজপুরে “নায়েব নাজির” হিসেবে কর্মরত। বাদী থানায় হাজির হয়ে আসামী ১) মোঃ হামিদুর রহমান (৫১), পিতা-মৃত জহির আলী, সাং-নওদাপাড়া, থানা-নবাবগঞ্জ, জেলা-দিনাজপুর, ২) মোঃ আব্দুল জলিল (৪৮), পিতা-কলিম উদ্দিন, সাং-গোবিন্দপুর, থানা-বিরল, জেলা-দিনাজপুর, পলাতক আসামী ৩) মোঃ শামসুল আলম, পিতা-মোঃ আব্দুল লতিফ, সাং-কাজীপাড়া, থানা-বিরল, জেলা-দিনাজপুর, ৪) মোঃ আল আমিন (৩০), পিতা-মোঃ জসিম হোসেন কালাম, সাং-ভেচকী, থানা-মঠবাড়িয়া, জেলা-পিরোজপুর এবং ৫) মোঃ ফজলুল হক (৪৫), পিতা-মৃত নজরুল ইসলাম, সাং-বোয়ালদার উত্তরপাড়া, থানা-হাকিমপুর, জেলা-দিনাজপুরসহ অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এই মর্মে এজাহার দায়ের করেন যে, গত ০৬/০২/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ সকাল ১০১৫ ঘটিকার সময় দিনাজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের ২য় তলায় বাদীর অফিস কক্ষে আসামী ১) মোঃ হামিদুর রহমান ও ২) মোঃ আব্দুল জলিল ও পলাতক আসামী ৩) মোঃ শামসুল আলম আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, বিচার শাখা-৪ এর স্মারক নং-১০.০০. ০০০০৩. ১২৮.১৬. ০০২.২০২৩-৫২ তারিখ-০২/০১/২০২৪ ইং মূলে আসামী মোঃ শামসুল আলমকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যুনালের জন্য স্মারক নং-১০.০০.০০০০৩.১২৮. ১৬.০০২.২০২৩-৫২ তারিখঃ ২৭-১১-২০২৩ ইং এর শর্ত অনুযায়ী দিনাজপুর জেলা জজ কোর্ট ‘অফিস সহায়ক’ পদে একটি নিয়োগপত্র বাদীর নিকট প্রদান করেন এবং মোঃ শামসুল আলমকে নিয়োগপত্রমূলে যোগদান করানোর জন্য অনুরোধ করেন।
তাদের দেয়া নিয়োগপত্রটি নিয়ে বাদী মাননীয় জেলা ও দায়রা জজ, দিনাজপুর মহোদয়ের নিকট উপস্থাপন করলে মাননীয় জেলা ও দায়রা জজ, দিনাজপুর মহোদয় উক্ত নিয়োগপত্রটি মাননীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, দিনাজপুর এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাচাই অন্তে জানান যে, নিয়োগপত্রটি সঠিক নয় যা প্রতারণামূলকভাবে সৃজিত, ভূয়া ও জাল। মাননীয় জেলা ও দায়রা জজ, দিনাজপুর মহোদয় তাদেরকে আটকপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশকে সংবাদ দেয়ার নির্দেশনা দেন। বাদী মাননীয় জেলা ও দায়রা জজ, দিনাজপুর মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক বাদীর অফিসকক্ষে ফেরত এসে আসামী মোঃ হামিদুর রহমান ও মোঃ আব্দুল জলিলদ্বয়কে বাদীর অফিসকক্ষে অপেক্ষামান দেখতে পেয়ে তাদেরকে আটক করেন। অফিস সহায়ক পদে নিয়োগপ্রার্থী অপর আসামী মোঃ শামসুল আলম বাদীর অনুপস্থিতিতে বাদীর অফিস কক্ষ হতে পূর্বেই কৌশলে পালিয়ে যায়। বাদী কোর্ট পুলিশকে সংবাদ দেয় এবং আটককৃত আসামীদ্বয়কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, পলাতক আসামী মোঃ আল আমিন তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ০১৭৩২৪৪৯৬১৭ হতে গত ০৩/১২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, বিচার শাখা-৪ হতে ইস্যুকৃত জনৈক সুদীপ্ত বর্মন, পিতা-সুধান্য বর্মন, মাতা-মৃত নমিতা বর্মন, সাং-পশ্চিম পাতাখালী, থানা-শ্যামনগর, জেলা-সাতক্ষীরাসহ মোট ১৫ জনের নিয়োগের একটি অফিস আদেশ আসামী মোঃ হামিদুর রহমানের মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপে প্রেরণ করেন।
পরবর্তীতে ১১/০১/২০২৪ খ্রিঃ তারিখে একই মন্ত্রণালয় হতে আসামী মোঃ শামসুল হক এর নিয়োগপত্রটি একইভাবে আসামী মোঃ হামিদুর রহমানের মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপে প্রেরণ করেন এবং নিয়োগপত্রটি প্রিন্ট করে আসামী মোঃ ফজলুল হককে দিতে বলেন। সেই মোতাবেক আসামী মোঃ হামিদুর রহমান নিয়োগপত্রটি প্রিন্ট করে আসামী মোঃ হামিদুর রহমান, মোঃ ফজলুল হক ও মোঃ শামসুল আলমগণ নিয়োগপত্রসহ বাদীর অফিসে এসে উপস্থাপন করেছেন।
ধৃত পলাতক ও অজ্ঞাতনামা আসামীগণ পরস্পর যোগসাজসে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া নিয়োগপত্র সৃজন ও তা খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে পেনাল কোডের ৪২০/ ৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৩৪ ধারায় অপরাধ করেছে।
অতঃপর অটককৃত আসামীদ্বয়কে কোর্ট পুলিশের হেফাজতে রেখে, বাদী থানায় আসিয়া লিখিত ভাবে এজাহার দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে জন্য র্যাব-১, এর নিকট দিনাজপুর জেলার, কোতয়ালী থানা অফিসার ইনচার্জ আইনগত সহায়তা কামনা করেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই পপ্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ আনুমানিক ০০.৩০ ঘটিকায় র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, সূত্রোক্ত মামলার প্রতারক চক্রের মূলহোতা আসামী মোঃ আল আমিন (৩০) ও মোঃ ফজলুল হক (৪৫) গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন ১নং নিএন্ডবি বাজার, প্রিয়াঙ্গন প্লাজা এর সামনে অবস্থান করছে।
উক্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের মূলহোতা মোঃ আল আমিন (৩০), পিতা-মোঃ জসিম হোসেন কালাম, থানা-মঠবাড়িয়া, জেলা-পিরোজপুর এবং মোঃ ফজলুল হক (৪৫), পিতা-মৃত নজরুল ইসলাম, থানা-হাকিমপুর, জেলা-দিনাজপুর’দের গ্রেফতার করা হয়।
এসময় ধৃত আসামীর নিকট হতে ০৩ টি মোবাইল ফোন, যোগ্যতা সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ এর স্টিকার-৩৩টি, সোল্ডার ব্যাচ-০৫ জোড়া এবং নগদ ২১৭০/- উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।