অবৈধ নেটওয়ার্ক বুস্টার ও রেডিও ট্রান্সমিটার বিক্রির মূলহোতাসহ গ্রেফতার-০৫
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা হতে অবৈধ নেটওয়ার্ক বুস্টার ও রেডিও ট্রান্সমিটার বিক্রির সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতা মোঃ জাহাঙ্গীর আলমসহ মোট ০৫ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩; বিপুল পরিমাণ নেটওয়ার্ক বুস্টার ও রেডিও ট্রান্সমিটার উদ্ধার করা হয়।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এ পর্যন্ত জঙ্গি, সাইবার ক্রাইম, সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী, মানবপাচারকারী, চাঁদাবাজ, নৈরাজ্যকারী, বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার আসামী, অপহরণকারী, জালনোট ব্যবসায়ী, প্রতারক চক্র, ধ*র্ষক এবং হত্যাকারী ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অবৈধ নেটওয়ার্ক বুস্টার ও রেডিও ট্রান্সমিটার বিক্রয়কারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব সদা সচেষ্ট।
অবৈধ নেটওয়ার্ক বুস্টার ও রেডিও ট্রান্সমিটার বিক্রয়কারী চক্রের কতিপয় সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় বিনা অনুমতিতে বিক্রয় করে আসছে।
এরই প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল ও বিটিআরসির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ১৩/০২/২০২৪ তারিখ ১৭.০০ ঘটিকার সময় রাজধানীর নিউমার্কেট থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ নেটওয়ার্ক বুস্টার ও রেডিও ট্রান্সমিটার বিক্রয়কারী চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৩০), পিতা-মৃত শফিউল্লাাহ, সাং-চর মজলিশপুর, থানা- সোনাগাজী, জেলা-ফেনী এবং তার সহযোগী ২। মোঃ ফয়সাল হোসেন (২৭), পিতা-মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, সাং- ফতেপুর, থানা-চৌগাছা, জেলা-যশোর, ৩। মোঃ আশিক শেখ (২০), পিতা-মৃত সালাম শেখ, সাং-নয়াপাড়া, থানা-ফকিরহাট, জেলা-বাগেরহাট, ৪। মোঃ শরিফুল (২৪), পিতা-সিরাজুল ইসলাম, সাং-নয়াপাড়া, থানা-ফকিরহাট, জেলা-বাগেরহাট, ৫। মোঃ রাসেল (২৬), পিতা-মৃত আব্দুর বাতেন, সাং-শেখেরগাঁও, থানা-মেঘনা, জেলা-কুমিল্লাদের’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকালে এই চক্রের সদস্যদের হেফাজত হতে ১২ টি নেটওয়ার্ক বুস্টার, ১৬ টি বুস্টার আউটডোর এন্টিনা, ০৩ টি রেডিও ট্রান্সমিটার, ১২ টি বুস্টার ইনডোর এন্টিনা, ০৩ টি বুস্টার ক্যাবল, ১৮ টি কনভার্টার, ১৫ টি চার্জার, ১০ টি মোবাইল ফোন, ২০ টি সীম কার্ড, ০৩ টি হাত ঘড়ি, ০১ টি ড্রাইভিং লাইসেন্স, ০২ টি এনআইডি কার্ড, ০৪ টি এটিএম কার্ড এবং নগদ ৯,৫৩০/- টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামীরা জানায় যে, তারা বিগত পাঁচ বছর যাবৎ অবৈধভাবে নেটওয়ার্ক বুস্টার ও রেডিও ট্রান্সমিটার বিক্রয় করে আসছে। ধৃত আসামিরা রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ‘‘এ্যাপ্রো টেকনোলজি’’ নামক একটি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান হতে অবৈধভাবে নেটওয়ার্ক বুস্টার ও রেডিও ট্রান্সমিটার ক্রয় করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করতো।
এছাড়াও তারা হোয়াটস অ্যাপ্ ও ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে উচ্চ মূল্যে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট অবৈধভাবে নেটওয়ার্ক বুস্টার ও রেডিও ট্রান্সমিটার এর যন্ত্রাংশ লাইসেন্স ব্যতিত বিক্রি করে থাকে।
উক্ত রেডিও ট্রান্সমিটার ও নেটওয়ার্ক বুস্টার টুজি, থ্রিজি এবং ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্ক এর কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। এই কারণে বিভিন্ন অপরাধীরা অপরাধ করার উদ্দেশ্যে উচ্চ মূল্যে এইসব অবৈধ ডিভাইস ক্রয় করে দূর্গম এলাকায় থেকে যে কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারে। এভাবে অপরাধীরা নির্বিঘে অপরাধ করে নিজেদের আড়াল করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী এড়ানোর অপচেষ্টা করে থাকে।
ধৃত আসামীরা আরও জানায় যে, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এর ফোর-জি রাউটার আমদানির নামে এসকল যন্ত্রাংশসমূহ বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে আসে। এছাড়াও বিভিন্ন চোরাই পথের মাধ্যমেও তারা এসব যন্ত্রাংশ আমদানি করে থাকে।
পরবর্তীতে তারা হোয়াটসঅ্যাপে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে এসকল যন্ত্রাংশসমূহ উচ্চমূল্যে বিভিন্ন অপরাধী চক্রের কাছে বিক্রয় করে থাকে। এই চক্রটি বিগত পাঁচ বছরে অজ রেডিও ট্রান্সমিটার ও নেটওয়ার্ক বুস্টার বিক্রয় করেছে। চক্রটি প্রতি সেট এন্টেনা ২০ হাজার টাকা এবং প্রতি সেট রেডিও ট্রান্সমিটার ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছে বিক্রয় করে আসছে।
বিটিআরসির অনুমোদন ব্যতিত এসকল যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ ক্রয়-বিক্রয় বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ। ধৃত আসামীরা পাঁচ বছর যাবৎ অবৈধভাবে নেটওয়ার্ক বুস্টার ও রেডিও ট্রান্সমিটার এর ক্যাবলসহ যন্ত্রাংশসমূহ মজুদ, সরবরাহ, ক্রয়-বিক্রয় ও প্রদর্শন করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করেছে।
গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীর ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। এরপর সে কিছুদিন একটি মোবাইল কোম্পানীর সেলস্ম্যান হিসেবে চাকুরী করে। ২০১৪ সালে সে ঢাকায় এসে সিসি ক্যামেরা মেরামত ও ইনস্টল করার কাজ শুরু করে।
পরবর্তীতে নিজেই নিউমার্কেট এলাকায় ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের ব্যবসা শুরু করে। অধিক মুনাফার লোভে সে একসময় আমদানি নিষিদ্ধ এসকল অবৈধ বুস্টার, ট্রান্সমিটার ব্যবসা শুরু করে। গ্রেফতারকৃত অপর আসামি ফয়সাল, আশিক, শরিফুল ও রাসেল সকলেই ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস এর বিষয়ে অভিজ্ঞ হওয়ায় জাহাঙ্গীর তার ব্যবসাকে প্রসারিত করার জন্য তাদেরকেও দলভুক্ত করে।
জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে গ্রেফতারকৃত সকল আসামিরা টেকশপ বিডি নামে ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজ এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ বিক্রি করত এবং অধিক মুনাফার লোভে উচ্চমূল্যে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে নেটওয়ার্ক বুস্টারসহ রেডিও ট্রান্সমিটার এর যন্ত্রাংশ লাইসেন্স ছাড়াই বিক্রি করত। তারা এসকল ডিভাইস সেলস্ ইনভয়েজে ফোর-জি রাউটার হিসেবে দেখিয়ে বিক্রয় করে আসছিল। এসকল অবৈধ ডিভাইস বিক্রয়কারী চক্রের বিরুদ্ধে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।