২৪ ঘণ্টার মধ্যে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের ক্লুলেস মামুন হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে আসামী গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ বিকেল ০৫:০০ ঘটিকায় বেগমগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে জনাব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বিপিএম, পিপিএম, সুপার, নোয়াখালী মহোদয়ের প্রতিনিধি হিসেবে জনাব বিজয়া সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ), নোয়াখালী, সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ভিকটিম মামুনুর রশিদ (২০), পিতা-কবির হোসেন, সাং-বাকীপুর (দেওয়ান বাড়ী), ৯নং ওয়ার্ড, ৬নং রাজগঞ্জ ইউপি, থানা-বেগমগঞ্জ, জেলা-নোয়াখালী ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা (মিশুক) ভাড়ায় চালায়। গত ২২/০১/২০২৪খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিম প্রতিদিনের ন্যায় ভাড়ায় চালিত অটোরিক্সা (মিশুক) নিয়া বাড়ি হতে বাহির হয়ে সন্ধ্যা অনুমান ০৬.০০ ঘটিকার সময় মিশুক গাড়িসহ বাড়িতে এসে খাবার খেয়ে পুনরায় ভাড়া আছে বলে অটোরিক্সা (মিশুক) নিয়ে বাড়ি হতে বাহির হয়ে যায়। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও ভিকটিম বাড়িতে ফিরে না আসায় তার পরিবারের সদস্যরা চারদিকে খোঁজাখুজি শুরু করলেও কোথাও ভিকটিম কিংবা তার ভাড়ায় চালিত অটোরিক্সা (মিশুক) এর সন্ধান পায় নাই। নিখোঁজ সংক্রান্তে ভিকটিমের পিতা বেগমগঞ্জ মডেল থানায় জিডি নং-১৪০৭, তারিখ-২৬/০১/২০২৪খ্রিঃ দায়ের করে। ২৬/০১/২০২৪খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় জনৈক হোসনেয়ারা খাতুন (৫০) তার পার্শ্ববর্তী গাজী সালাউদ্দিন টিপু এর সুপারি বাগানের ভিতর সুপারি গাছের খোল কুড়াতে গিয়ে সুপারি বাগান সংলগ্ন পাটিগাছ বাগানের ভিতর মানুষের পা দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করে। পরবর্তীতে আশপাশের লোকজন গিয়ে বাগানের ভিতর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে। উক্ত বিষয়ে সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের পিতাসহ পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহের জ্যাকেট, প্যান্ট ও মুখমন্ডল দেখে উক্ত মৃতদেহটি ভিকটিমের মৃতদেহ হিসেবে সনাক্ত করে। সংবাদ পেয়ে অত্র থানার এসআই (নিরস্ত্র) সাইফুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। সুরতহাল করাকালে ভিকটিমের মাথার পিছনের ডান পাশে, কপালের বাম পাশে জখমের চিহ্ন দেখা যায়। উক্ত সময় ভিকটিমের মৃতদেহ আংশিক পঁচা, পেট ফোলা ও মুখমন্ডল বিকৃত অবস্থায় দেখা যায়। এছাড়াও ঘটনাস্থলের ১৫ গজ দূরে আমার ছেলের ব্যবহৃত মানিব্যাগ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ভিকটিমের মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, নোয়াখালীতে প্রেরণ করা হয়। উক্ত হাসপাতলে ভিকটিমের মৃতদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়। ভিকটিমের পিতা কবির হোসেন (৪৯) উক্ত ঘটনার বিষয়ে এজাহার দায়ের করলে বেগমগঞ্জ মডেল থানার মামলা নং-৩১, তারিখ-২৭/০১/২০২৪খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করে তদন্তভার এসআই (নিরস্ত্র) আওলাদ হোসেন রিকাবদার এর উপর অর্পণ করা হয়।
মামলার ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে মাননীয় পুলিশ সুপার নোয়াখালী জনাব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বিপিএম, পিপিএম মহোদয় বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব নাজমুল হাসান রাজীব পিপিএম ও জনাব মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, অফিসার ইনচার্জ, বেগমগঞ্জ থানা, জনাব ফরিদুল আলম, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত), বেগমগঞ্জ থানা এর নেতৃত্বে এসআই (নিরস্ত্র) ফিরোজ আহমেদ ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিরস্ত্র) আওলাদ হোসেন রিকাবদার এর সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম গঠন করেন।
নির্দেশনা মোতাবেক আভিযানিক দল বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামী সনাক্ত করে আসামীকে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। আসামী ভিকটিম নিখোঁজের পর থেকে পলাতক থেকে আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে অভিযানিক দল অত্র জেলাধীন চরজব্বর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মূল আসামী মোঃ সোহাগ (২৪) কে গ্রেফতার করে।গ্রেফতার পরবর্তীতে আসামীকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে ভিকটিম মামুনুর রশিদ (২০) কে হত্যা করার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকার করে।
আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, অনুমান ০১ বছর পূর্বে গ্রেফতারকৃত আসামী অটোরিক্সা (মিশুক) চালানোর সময় ভিকটিম মামুনুর রশিদ (২০) এর সহিত পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার পর থেকে গ্রেফতারকৃত আসামী ভিকটিমের সহিত একসাথে বিভিন্ন সময় গাঁজা সেবন করত। ঘটনার দিন গত ২২/০১/২০২৪খ্রিঃ তারিখ এশার নামাজের পরে গ্রেফতারকৃত আসামী ভিকটিমকে মোবাইলে কল দিয়ে গাঁজা সেবনের বিষয়ে জানায়। কিছুক্ষণ পরে ভিকটিম ফোন করে গাঁজা কেনার কথা জানিয়ে গ্রেফতারকৃত আসামীকে সিগারেট নিয়ে ঘটনাস্থল মাধবসিংহ গ্রামের গাজী আলাউদ্দিনের বাড়ীর পশ্চিমে সুপারি বাগানে আসার জন্য বলে। গ্রেফতারকৃত আসামী ভিকটিমের কথা অনুযায়ী সিগারেট নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামী ও ভিকটিম দুজনে মিলে দুই স্টিক গাঁজা সেবন করে। গাঁজা সেবন করার একপর্যায়ে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি ঘটনা ঘটে। হাতাহাতির একপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত আসামী ইট ভাঙ্গার অর্ধেক হাতল দিয়ে ভিকটিমের মাথায় আঘাত করে এবং অন্ডকোষে লাথি মারে। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে গ্রেফতারকৃত আসামী অর্ধেক ইট ভাঙ্গা টুকরাটি ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে পালিয়ে যায়। পুলিশ পরবর্তীতে আসামীর দেয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আসামীকে সাথে নিয়ে তার দেখানো মতে ঘটনাস্থলের পাশের পুকুর হতে ভাঙ্গা ইটের টুকরা ও ঘটনাস্থলের পাশে বাগান হতে ভিকটিমের পরিহিত স্যান্ডেল উদ্ধারপূর্বক জব্দ করে।
আসামী বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করার ইচ্ছা পোষন করলে আসামীকে জনাব মোঃ ইকবাল হোসাইন, বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট, আমলী আদালত নং-০২, নোয়াখালীতে উপস্থাপন করলে আসামী বিজ্ঞ আদালতে হত্যাকান্ডের দোষ স্বীকার করে সিআরপিসি ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম-ঠিকানা ও ছবি: মোঃ সোহাগ (২৪), পিতা-বদিউর জামান, মাতা-বিবি ছকিনা, সাং-দক্ষিণ দোয়ালিয়া (বদিউর জামান এর বাড়ি), ০৬নং ওয়ার্ড, ০৫নং ছয়ানী ইউপি, থানা-বেগমগঞ্জ, জেলা-নোয়াখালী।
জব্দকৃত/উদ্ধারকৃত আলামত: ০১ পুরিয়া গাঁজা, ০১টি মানিব্যাগ, ০১ জোড়া জুতা ও ০১টি অর্ধেক ভাঙ্গা ইটের টুকরা।
মামলার বিবরণ: বেগমগঞ্জ মডেল থানার মামলা নং-৩১, তারিখ-২৭/০১/২০২৪খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত