র্যাব ফোর্সেস প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, গণ-মানুষের নিরাপত্তা বিধান ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জনগণের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে এ বাহিনী মাদক, অস্ত্র, জঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে ইতোমধ্যে জনমনে সুদৃঢ় অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। অপরাধ দমনে র্যাব শুধু আভিযানিক প্রক্রিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। ইতোপূর্বে যে সকল জঙ্গি ও জলদস্যুরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অন্ধকার জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চেয়েছে তাদের আত্মসমর্পণ, পুনর্বাসন ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছে র্যাব।
গত ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক রাত ০২:৫০ ঘটিকায় ঢাকার জেলার দোহার থানাধীন ধীৎপুর এলাকায় বসবাসকারী জুলহাস উদ্দিন শেখ (৪৮), তার স্ত্রী ফাহিমা আক্তার (৩৫), মেয়ে জান্নাত (১২), ছেলে জুনায়েদ (০৯) ও ভাতিজি তাবাসসুম (০৯) উল্লেখিত একই পরিবারের ০৫ জনকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা হত্যার উদ্দেশ্যে জুলহাস উদ্দিনের বসবাসরত বাড়ীতে (টিনসেড বিল্ডিং) বাহির হতে তালাবদ্ধ করে বাড়ীর চতুর্দিকে পেট্রোল ঢেলে আগুন জালিয়ে দেয়। তার কিছুক্ষণ পর আগুনের তাপে ও আশবাবপত্র পুড়ার বিকট শব্দে জুলহাস উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘুম থেকে উঠে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
আরো পড়ুন : সাদেক হত্যা মামলার পলাতক আসামী সবুজ ও নাজমা’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০
ভিকটিমরা তাদের প্রাণ বাচাতে ও আসবাবপত্র রক্ষা করার জন্য এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করে এবং দরজা খুলার চেষ্টা করে করতে থাকে। অতঃপর কোনভাবে দরজা খুলতে না পেরে বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে ডাক-চিৎকার করতে থাকে। ডাক-চিৎকারের এক পর্যায় জুলহাস উদ্দিনের ছোট ভাই মুক্তার হোসেন @মুকাত (৩৮) ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে বাথরুমের দেওয়াল ভেঙ্গে জুলহাস উদ্দিনসহ তাদের পরিবারের সবাইকে উদ্ধার করে। এসময় জুলহাস উদ্দিন ও তার স্ত্রী ফাহিমা আক্তারের মুখ-মন্ডল, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান আগুনে ঝলসে যায়। আগুনের ধোয়ার কারনে জুলহাস উদ্দিনের মেয়ে, ছেলে ও ভাতিজির শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা দেখা দেয় এবং তাদের ঘরে থাকা ফ্রিজ, টিভিসহ আনুমানিক ৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা মূল্যমানের অন্যান্য আসবাবপত্র উক্ত আগুনে পুড়ে যায়।
আরো পড়ুন : রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ০৫ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০
ভিকটিমদের উদ্ধার করার সাথে সাথে জুলহাস উদ্দিনের ছোটভাই ও স্থানীয় লোকজন দোহার থানা পুলিশ ও দোহার উপজেলা ফায়ার সার্ভিসকে সংবাদ দিলে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে জুলহাস উদ্দিনের ছোটভাই স্থানীয় লোকজনদের সহযোগীতায় জুলহাস উদ্দিনসহ তার পরিবারের আহত সবাইকে চিকিৎসার জন্য দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে রেফার্ড করেন।
উক্ত ঘটনায় ভিকটিম জুলহাস উদ্দিনের ছোটভাই মুক্তার হোসেন @মুকাত (৩৮) বাদী হয়ে ঢাকার দোহার থানায় চাঞ্চল্যকর এই একই পরিবারের ০৫ জনকে বাড়িতে তালাবদ্ধ করে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-০৬, তাং-১৬/০১/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-৩০৭/৪৩৬/৪২৭ দÐ বিধি।
আরো পড়ুন :
ফরিদপুরের গৃহবধূ হাছিনা বেগম’কে হত্যা মামলার আসামী টিটুল মোল্লা’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০
উক্ত ঘটনাটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অজ্ঞাতনামা আসামীদেরকে শনাক্ত করতঃ তাদেরকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে অধিনায়ক র্যাব-১০ বরাবর একটি অধিযাচনপত্র প্রেরণ করেন।
উক্ত অধিযাচনপত্রের ভিত্তিতে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল চাঞ্চল্যকর এই একই পরিবারের ০৫ জনকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
[caption id="attachment_16981" align="alignnone" width="300"] বাড়িতে তালাবদ্ধ[/caption]
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক রাত ২০:১০ ঘটিকায় র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে, তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা এবং র্যাব-০৪ এর সহযোগীতায় রাজধানী ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে চাঞ্চল্যকর এই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে একই পরিবারের ০৫ জনকে হত্যার চেষ্টা সংগঠনের মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ রুবেল (২১), পিতা-মোঃ সুলতান শেখ, সাং-ধীৎপুর, থানা-দোহার, জেলা-ঢাকা’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে গতকাল একই তারিখ আনুমানিক রাত ২২:১৫ ঘটিকায় র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল গ্রেফতারকৃত মোঃ রুবেল এর দেয়া তথ্যমতে ঢাকা জেলার দোহার থানাধীন ধীৎপুর এলাকায় অপর একটি অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে উল্লেখিত একই পরিবারের ০৫ জনকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ রুবেলের প্রধান সহযোগী মোঃ রানা মাহমুদ (২৪), পিতা-নুরু শেখ, সাং-ধীৎপুর, থানা-দোহার, জেলা-ঢাকা’কে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত মোঃ রুবেল পেশায় একজন চালের টিনের মিস্ত্রি। সে ভিকটিম জুলহাসকে দুঃসম্পর্কের মামা বানায় এবং সেই সুবাদে দীর্ঘদিন যাবৎ জুলহাসের বাসায় বসবাস করে আসছিল। রুবেল অত্যান্ত দুস্ট প্রকৃতির লোক ছিল, তার কথাবার্তা ও চালচলন জুলহাস উদ্দিনের কাছে অপছন্দ হওয়ায় জুলহাস বিগত ১৩-১৪ দিন পূর্বে রুবেলকে তাদের বাসা থেকে চলে যেতে বলে। পরবর্তীতে রুবেল বাসা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে জুলহাসের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায় এবং একপর্যায় রুবেল জুলহাসকে পরবর্তীতে দেখে নিবে বলে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি দিয়ে জুলহাসের বাসা থেকে চলে যায়।
পরবর্তীতে গত ১৬/০১/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ মাঝরাতে জুলহাস ও তার পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পরলে রুবেল উক্ত বাসা থেকে বের করে দেওয়ার বিরোধের জের ধরে তার সহযোগী রানাসহ অন্যান্য সহযোগীদের সাথে নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে জুলহাসসহ তার পরিবারের সবাইকে বাড়ীর বাহির হতে তালাবদ্ধ করে বাড়ীতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টা করেছিল। মামলা রুজুর পর হতে সে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে ছিল।
আরো পড়ুন:
https://nobodesh24.com/বাড়িতে-তালাবদ্ধ-করে-আগু/
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত