র‍্যাব ১৩ এর অভিযানে পঞ্চগড়ের আটোয়ারিতে ব্যবসায়ী শাকিল হত্যার ক্লুলেস (Clueless) ঘটনায় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন ও মূল হত্যাকারী গ্রেফতার।

পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী থানার মামলা নং-০৪ তারিখ-০৬/৭/২০২৪, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দঃ বিঃ চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস মামলার ভিকটিম ব্যবসায়ী শাকিল, হত্যার প্রধান আসামী মোঃ সাইদুর রহমান সোহেল (৩৫), পিতা-মোঃ শাহজামাল ওরফে শাহজালাল সাং-ফকিরপাড়া ওয়ার্ড নং-০৬ পৌরসভা ঠাকুরগাঁও সদর, ফকিরপাড়া এলাকায় র‌্যাব-১৩, সিপিসি-২, নীলফামারীর একটি চৌকস আভিযানিক দল বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বর্ণিত আসামীকে গ্রেফতার করতে ও আলামত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

গত ৪ জুলাই ২০২৪ পঞ্চগর জেলার আটোয়ারী থানাধীন রাধানগর ইউনিয়নের শখের পুল ব্রীজের নিচে স্থানীয় শাকিল নামের এক ব্যবসায়ীর লাশ স্থানীয় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যগণ উদ্ধার করে। উক্ত ঘটনা স্থানীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে প্রকাশ হলে ব্যাপক চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে ঘটনার রহস্য উদঘাটনে র‍্যাব ১৩ রংপুর, সিপিসি-২, নীলফামারীর একটি চৌকস তদন্ত দল ঘটনাস্থলে ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্ত দলটি ঘটনাস্থল, ভিকটিম ও তার পরিবার এবং পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন আলামত ও পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক অবিরাম বিশ্লেষণ করে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, শখের পুল ব্রিজের নিচে ০৩ জুলাই/২৪ তারিখ রাত আনুমান ১০.০০ ঘটিকার পর চিৎকার শুনতে পাওয়া যায়। একই সাথে মোটরসাইকেলে দুজনকে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পল্লী বিদ্যুতের দিকে চলে যেতে দেখা যায়। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ বাজারে বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভিকটিম শাকিল ঘটনার দিন রাত আনুমানিক দশটার দিকে অজ্ঞাতনামা এক পাজামা-পানজাবি পরিহিত ব্যক্তির সাথে চা পান করে, ঘটনাস্থল শখের পুল ব্রীজের দিকে যায়। ছায়া তদন্ত দল র‍্যাব সদর দপ্তরের ইন্ট শাখার সহযোগিতা গ্রহণ করে।

প্রাপ্ত ঘটনাস্থলের সাক্ষ্য প্রমাণ ও র‍্যাব সদর দপ্তরের ইন্ট শাখার তথ্য উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণ করে উভয় তথ্যের উপর ভিত্তি করে, র‍্যাব ১৩ রংপুর, সিপিসি-২, নীলফামারীর চৌকস তদন্ত দল বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ঠাকুরগাঁও সদর থানা এলাকা হতে ব্যবসায়ী শাকিল খুনের সাথে সরাসরি জড়িত সাইদুর রহমান সোহেল (৩৫)কে আটক করে ও ঘটনায় ব্যবহৃত একটি লাল-কালো রংয়ের ডিসকভার মোটরসাইকেল আসামী সাইদুর রহমান সোহেলেএর হেফাজত হতে উদ্ধার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে, সাইদুর রহমান সোহেল জানায়, ঘটনার দিন অর্থাৎ ০৩ জুলাই ২০২৪ তারিখ সে এবং তার ব্যবসায়ীক বন্ধু একসাথে একটি লাল-কালো ডিসকভার মোটরসাইকেল যোগে ব্যবসায়িক কাজে শাকিলের সাথে আটোয়ারী থানাধীন পল্লী বিদ্যুৎ মোড় বাজারে দেখা করতে যায়। শাকিল তাদেরকে দেখা করার জন্য যে সময় দিয়েছিল তার অনেক পরে তাদের সাথে দেখা করে। দীর্ঘ সময় সাইদুর রহমান সোহেল এবং তার সহযোগীকে বসিয়ে রাখায় শাকিলের উপরে সাইদুর রহমান সোহেল ক্ষুদ্ধ হয়। রাত্রি অনুমান ১০ ঘটিকায় শাকিলের সাথে দেখা হওয়ার পর শাকিলকে মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে একসাথে শখের পুল ব্রীজের দিকে নিয়ে যায়। শখের পুল ব্রীজে রাত্র অনুমান ১০.১৫/১০.২০ ঘটিকার সময় সাইদুর রহমান সোহেল এবং তার সহযোগী শাকিলের উপর ব্যবসায়িক বিষয়ে চড়াও হয়।

একপর্যায়ে সাইদুর রহমান সোহেল শাকিলকে ধাক্কা দিয়ে শখের পুল ব্রিজের উত্তর পাশে পানির মধ্যে ফেলে দেয়। তখন সাকিল “বাঁচাও বাঁচাও “ “মাগো মাগো “বলে চিৎকার দেয়। ঠিক তখনই ঘটনাস্থলে সাক্ষী খগেন্দ্র ও তার ম্যানেজার নিজ মোটর সাইকেল যোগে ব্রীজের উপর উপস্থিত হলে সাইদুর রহমান সোহেল ও তার সহযোগী দ্রুত মোটরসাইকেল চালিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ের দিকে গিয়ে আত্ম গোপনে চলে যায়। সাক্ষী খগেন্দ্র ও তার ম্যানেজার বাচাঁও বাচাঁও, মাগো-মাগো কান্নার শব্দ ব্রীজের নিচে শুনতে পায়। ৫ হতে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে সকল শব্দ নিস্তব্ধ হয়ে যায়। তখন ডাকাডাকি করলে ঘটনাস্থলে অনেক লোকজন জমা হয়।

ঘটনাস্থল হতে থানা পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কে ফোন দেওয়া হয়। তারা ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে অচেতন অবস্থায় শাকিলকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিলে, ডাক্তার শাকিলকে মৃত ঘোষণা করে। জিজ্ঞাসাবাদে, গ্রেফতারকৃত সাইদুর রহমান সোহেল ভিকটিম শাকিলকে ব্রীজের নিচে পানিতে ফেলে দিয়ে খুনের বিষয় স্বীকার করে।

র‍্যাব ১৩ রংপুর, সিপিসি-২, নীলফামারী একটি চৌকস তদন্ত দল ক্লুলেস খুন মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটন ও মূল হত্যাকারী আসামী সাইদুর রহমান সোহেল কে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ০৫/০৭/২০২৪ তারিখ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার ও তার হেফাজতে থাকা ০১টি লাল-কালো রংয়ের ডিসকভার মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ইহাতে এলাকায় র‌্যাব ফোর্সের ভাব-মূর্তি উজ্জল হয়েছে।

স্থানীয় আটোয়ারী কেন্দ্রীয় জামে-মসজিদে শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে র‌্যাবের সাফল্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামী ও উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেল জব্দতালিকাসহ সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।