টিম ডিবি বগুড়ার বিশেষ অভিযানে বিদেশে (লিবিয়া) অবস্থানরত দুই প্রবাসীকে অপহরনপূর্বক বাংলাদেশে ভিকটিমের পরিবারের নিকট হতে অবশিষ্ট মুক্তিপণ আদায় কালে অপহরন চক্রের ০২(দুই) সদস্য আটকসহ ভিকটিমদ্বয়কে উদ্ধার।
বাদী মোঃ রাব্বি খন্দকার দুপচাঁচিয়া থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেন যে, মোঃ পাপ্পু খন্দকার(২৭) ও মোঃ সাঈদ খন্দকার (২৪)দ্বয় তার আপন ছোট ভাই।
তাদেরকে বিদেশ পাঠানোর জন্য চেষ্টা করাকালে তার দূরসম্পর্কের আত্মীয় ১নং আসামী মোঃ উজ্জল তাকে জানায় ২নং আসামী মোঃ সাব্বির হোসেন বর্তমানে লিবিয়া অবস্থান করতেছে তার মাধ্যমে তার দুই ভাইকে বিদেশে(লিবিয়া) নিয়ে গিয়ে ভাল বেতনে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে তাকে বিভিন্ন সময় প্রলোভন দিত।
পরবর্তীতে বাদী ১নং আসামী মোঃ উজ্জলের কথা মতো আমার দুই ভাইকে বিদেশ পাঠানো মনস্থির করলে সে জানায় যে, দুই ভাইয়ের পার্সপোট করে দিলে ১১,০০,০০০/-টাকার মধ্যে লিবিয়া নিয়া ২নং আসামী মোঃ সাব্বির হোসেনের মাধ্যমে ভালো বেতনে সেখানে হাসপাতালে চাকুরী দিতে পারবে। সেই মোতাবেক ইং-২৫/১১/২০২৩ তারিখ সকাল ১১.৩০ ঘটিকায়
এবং ইং-০৬/১২/২০২৩ তারিখ সকাল ১০.৩০ ঘটিকার সময় দুপচাঁচিয়া থানাধীন পৌরসভাস্থ থানা বাসষ্ট্যান্ডে ১নং আসামী মোঃ উজ্জলের মোন্তাহা ষ্টোর নামক অফিস কক্ষের মধ্যে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে দুই কিস্তিতে নগদ সর্বমোট=১১,০০,০০০/-(দশ লক্ষ) টাকা ১নং আসামী মোঃ উজ্জলকে প্রদান করে। পরবর্তীতে ১২/১২/২০২৩ তারিখে তার ছোট ভাই মোঃ পাপ্পু খন্দকারকে ও
ইং-১৭/০১/২০২৪ তারিখে মোঃ সাঈদ খন্দকারকে ১নং আসামী মোঃ উজ্জল ২নং আসামী মোঃ সাব্বির হোসেন এর নিকটে লিবিয়া পাঠিয়ে দেয়। চুক্তি মোতাবেক লিবিয়ার হাসপাতালে চাকুরী দেওয়ার কথা থাকলেও চাকুরী না দিয়ে বাদীর ছোট দুই ভাইকে বসে রাখে।
এক পর্যায়ে ১নং আসামী মোঃ উজ্জলের প্ররোচনায় ও সহযোগিতায় ২নং আসামী মোঃ সাব্বির হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জন আসামী মিলে তার ছোট ভাই মোঃ পাপ্পু খন্দকারকে
ইং-২৫/০৩/২০২৪ তারিখে লিবিয়ার হাসপাতালে চাকুরী দেওয়ার কথা বলিয়া লিবিয়ার ত্রিপলী মদিনা শহরে এবং মোঃ সাঈদ খন্দকারকে কোম্পানিতে চাকুরী দেওয়ার কথা বলিয়া লিবিয়া আজদাবিয়া জামা সোনা কিয়া শহরে নিয়া আটক করিয়া রাখে।
পরবর্তীতে বাদীর দুই ভাইয়ের মুক্তিপণ বাবদ ২নং আসামী মোঃ সাব্বির হোসেন ১নং আসামীর মাধ্যমে তার ইমুতে ফোন করে তার নিকটে ১০,০০,০০০/-(দশ লক্ষ) টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। উক্ত টাকা না দিলে তার ছোট দুই ভাইকে বিক্রয় করে দিবে বলে হুমকি প্রদান করতে থাকে।
এ সংক্রান্তে বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া থানায় মামলা নং-০৬, তারিখ-০৮/০৬/২০২৪, ধারা-৮(১), মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ সন রুজু হয়।
উক্ত এজাহারের ভিত্তিতে বগুড়া জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম, পিপিএম (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মহোদয়ের সার্বিক দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব মোঃ স্নিগ্ধ আখতার, পিপিএম (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ডিবি,
বগুড়ার ইনচার্জ এর নেতৃত্বে ডিবি বগুড়া’র একটি চৌকস টিম তথ্য প্রযুক্তি ও নিঁখুত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইতিপূর্বে এজাহারনামীয় আসামী ১। মোঃ উজ্জল হোসেন(৩৫), পিতা-মোঃ আফসার আলী, সাং-দুপচাঁচিয়া থানা বাসষ্ট্যান্ড, ৩নং ওয়ার্ড দুপচাঁচিয়া পৌরসভা, থানা-দুপচাঁচিয়া, জেলা-বগুড়া, এবং তদন্তে প্রাপ্ত আসামী ২। মোঃ সফাত মন্ডল (৩২), পিতা-মোঃ আজিম উদ্দিন মন্ডল, সাং-গুডুম্বা, থানা-আক্কেলপুর, জেলা-জয়পুরহাটদ্বয়কে গ্রেফতার করতঃ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামীদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক লিবিয়া হতে কৌশলে অত্র মামলার ভিকটিম সাঈদকে উদ্ধারপূর্বক বাংলাদেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়। কিন্তু তখন পর্যন্ত অত্র মামলার অপর ভিকটিম পাপ্পু খন্দকারকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নাই।
একপর্যায়ে অপহরনকারী ভিকটিম পাপ্পু খন্দকারের মুক্তিপনের জন্য বাদী ও তার পরিবারকে ইমু নাম্বার +218944285192 হইতে ফোন করে মুক্তিপন বাবদ ৪,০০,০০০/-(চার লক্ষ) টাকা দাবি করে।
অপহরনকারী কথায় ভীত হয়ে বাদী তার দেওয়া ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্টে নগদ ১,০০,০০০/-(এক লক্ষ) টাকা প্রেরণ করে। উক্ত টাকা পাওয়ার পরেও অপহরনকারী বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। একপর্যায়ে অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার পরামর্শে বাদী উক্ত টাকা দিতে রাজি হইলে অপহরনকারী জানায় যে,
ইং ০১/০৭/২০২৪ তারিখ সন্ধ্যা ১৯.০০ ঘটিকায় তার ভাই মোঃ পান্নু বগুড়া সদর থানাধীন চেলোপাড়া সিএনজি ষ্ট্যান্ডে টাকা নেওয়ার জন্য অবস্থান করবে। অপহরনকারীর কথা মোতাবেক বাদী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পূর্বেই ডিবি বগুড়া’র একটি চৌকস টিম সেখানে ছদ্মবেশে অবস্থান নেয়।
একপর্য়ায়ে ইং ০১/০৭/২০২৪ তারিখ সন্ধ্যা ১৯.৩০ ঘটিকায় অপহরনকারীর বর্ণনা মোতাবেক তার ভাই মোঃ পান্নু ও তার সহযোগী মোঃ শিপলু টাকা নেওয়ার জন্য উল্লেখিত স্থানে আসলে তাদেরকে আটক করা হয়।
পরবর্তীতে তাদেরকে আটক রেখে তাদের মাধ্যমে অপহরনকারীকে ভিডিও কলের মাধ্যমে জানানো হয় ভিকটিম পাপ্পু খন্দকারকে দ্রুত বাদীর দেওয়া লিবিয়ার নিরাপদ স্থানে না পৌঁছালে তার ভাই ও ভাইয়ের সহযোগীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তখন অপহরনকারী বাধ্য হয়ে বাদীর ছোট ভাই পাপ্পু খন্দকারকে লিবিয়ায় নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়। পরবর্তীতে ভিকটিম পাপ্পু তার ভাই অত্র মামলার বাদী ও অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে ভিডিও কলে ফোন করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করে।
উল্লেখ্য যে, ভিকটিম পাপ্পু খন্দাকারকে উদ্ধারের লক্ষ্যে মুক্তিপণ বাবদ অপহরনকারীর দেওয়া ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্টে প্রদানকৃত ১,০০,০০০/-(এক লক্ষ) টাকা আটককৃত পান্নুর হেফাজত হতে উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
ধৃত আসামীদের নাম ঠিকানাঃ
১। মোঃ পান্নু মিয়া(৩৫), পিতা-মোঃ আয়েন উদ্দিন প্রাং, সাং-শিহিপুর, থানা-সোনাতলা, জেলা-বগুড়া।
২। মোঃ শিপলু সরকার (৪০), পিতা-মৃত আঃ সাত্তার, সাং-নওদাবগা, উভয় থানা-সোনাতলা, জেলা-বগুড়া।
উদ্ধারকৃত মালামালের বর্ণনাঃ
১। ১,০০,০০০/-(এক লক্ষ) টাকা (যা মুক্তিপণ বাবদ প্রদান করা হয়েছিল)।
ঠিকানাঃ অস্থায়ী কার্যালয়ঃ হাউজিং নং – ১১১ (নিচ তলা), রোড নং-১১, ই-ব্লক, ইাউজিং এস্টেট, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া।
কপিরাইট © ২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত