ডেস্ক রিপোর্ট ঃ
ঝিনাইদহের শৈলকুপাতে সুকৌশলে সড়কের দুই পাশের গাছগুলেকে মেরে ফেলা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে অপরদিকে ক্ষতি করা হচ্ছে সরকারী লক্ষ-লক্ষ টাকার সম্পত্তি।
রোববার (৩০ জুন) সরজমিনে শৈলকুপা-বাগুটিয়া সড়ক ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার কবিরপুর থেকে আবাইপুর পর্যন্ত সড়কের দুপাশের বড় বড় গাছের ছালগুলো তুলে ফেলা হয়েছে। তাতেই গাছগুলো ধিরে ধিরে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। অনেক গাছ ফেলে হয়েছে কেটে।
অভিযোগ রয়েছে, সড়কের পাশ ঘেঁষে থাকা কিছু অসাধু জমির মালিকেরা রাতের অন্ধকারে গাছের গোড়ায় আগুন ধরিয়ে বা গাছের গোড়া গোল করে ছাল তুলে রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করছে। ফলে গাছ ধিরে ধিরে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। পরে এলাকার অসাধু এ চক্রটি অল্প অল্প করে ডালপালা কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। শেষে রাতের আঁধারে গাছের গুঁড়িও গায়েব হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই সরকারের লাখ লাখ টাকার মূল্যবান কাঠ জাতীয় গাছ ধ্বংস করছে দুর্বৃত্তরা।
সচেতনএলাকাবাসীর অভিযোগ, এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের। তবে এ বিষয়ে ঝামেলা এড়াতে কে বা কারা এ ঘটনায় সাথে জড়িত সে বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে রাজী হয়নি কেউ।
এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের মদন গোপালপুর মোঃ মৃত মহিদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মোঃ আমিরুল ইসলাম, মোঃ গোলাম রবির ছেলে নুর ইসলাম, আহম্মেদ জোয়ার্দারের ছেলে ইমরান জোয়ার্দার, মৃত কেতারে জোয়ার্দারের ছেলে নিজাম জোয়ার্দার, মোঃ সেলিম বিশ্বাসের ছেলে সোহেল রানা, মৃত বনু শেখের ছেলে জিয়া শেখ। উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের রঘুনন্দনপুর গ্রামের মৃত টিপু শেখ ছেলে মহন শেখ ,মোঃ বদর উদ্দিন মন্ডলের ছেলে বসির উদ্দিন, বকশিবাজার এলাকার মৃত মনসুর বিশ্বাসের ছেলে মফিজ চেয়ারম্যান, কমলা জুগির ছেলে বিমল বিশ্বাস, মৃত চান আলী মন্ডলের ছেলে মুকব্বির মন্ডল। উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের ভান্ডারিপাড়া গ্রামের কাসেম শেখের ছেলে আজম শেখ, মৃত মুন্জুর আলম বিশ্বাসের ছেলে বাবুল বিশ্বাস, আড়ুয়াকান্দী এলাকার আবেদ আলীর ছেলে নূর ইসলাম, রয়েড়া এলকার মৃত জগদিশ মৃত্র ছেলে মহিতশ মৃত্র, আল্লেক মোড় এলাকার মৃত অঙ্গাতের ছেলে আল্লেক শেখ গোবিন্দপুর এলাকার গোলাম রব্বানীর ছেলে ফরিদ এভাবে গাছ হত্যা করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার অনেকেই বলেছেন, রাস্তার পাশের গাছের কারণে জমিতে ছায়া ও পাতা পড়ে। যে কারণে ওই অংশে তেমন ফসল হয় না। তাই জমি মালিকরাই কৌশলে গাছ মেরে ফেলছেন।
এ বিষয়ে শৈলকুপা রেঞ্জের বন কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান নবদেশ২৪ কে বলেন, আগুন দিয়ে বা রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করে গাছ মেরে ফেলার মহোৎসব দীর্ঘদিন ধরে চলছে। কিন্তু এ বিষয়ে আমার করার কিছুই নেই। রাস্তার পাশের ওই গাছগুলি দেখভাল করার দায়িত্ব আমাদের না। ওই গাছগুলি দেখভাল করে থাকে জেলা পরিষদ। বনায়ন কর্মসূচির আওয়তায় যে গাছ রয়েছে তার দায়িত্ব আমাদের। তবে তারা আমাদের সহযোগিতা চাইলে নিতে পারে।’
ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়াম্যান হারুন অর-রশিদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। এটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এবিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) বা এসিল্যান্ড বনি আমিন বলেন, নির্বিচারে সরকারী গাছ যারা হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী হাসান বলেন, আমি বিষয়টি শুনলাম। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে বিষয়টি জানিয়ে দেব। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নু বলেন, রাস্তার গাছ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মেরে ফেলার বিষয়টি আমি শুনেছি বা মরা গাছও রাস্তার পাশে দেখি। এগুলি করছে রাস্তার পাশের জমি মালিকরা। কেননা জমির পাশে বড় গাছ থাকলে গাছের ছায়ার কারণে জমিতে ফসল হয় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি আমলে নেয়া উচিৎ।
তিনি আরোও বলেন, যে গাছ রাস্তার পাশের সারিবদ্ধভাবে মাথা উঁচু করে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে। সেই গাছগুলি মেরে ফেলে এক দিকে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটানো হচ্ছে, পাশাপাশি সরকারের লাখ লাখ টাকার বনজসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ -০১ মাননীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়েব আলী জোয়ার্দার নবদেশ২৪ কে বলেন,যারা রাস্তার দুই পাশের সরকারি গাছ হত্যা করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে বলবো বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।
ঠিকানাঃ অস্থায়ী কার্যালয়ঃ হাউজিং নং – ১১১ (নিচ তলা), রোড নং-১১, ই-ব্লক, ইাউজিং এস্টেট, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া।
কপিরাইট © ২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত