আনসার আল ইসলাম এর ০৩ সক্রিয় সদস্যকে কক্সবাজার হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫ এবং র্যাব-৭; উগ্রবাদী পুস্তিকা, লিফলেট ও বিস্ফোরক তৈরীর ম্যানুয়াল উদ্ধার
১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ এর বিরুদ্ধে আপোষহীন অবস্থানে থেকে নিরলস কাজ করে আসছে। সাংগঠনিকভাবে পূর্বের মতো সারাদেশে একযোগে পরিকল্পিতভাবে নাশকতা সৃষ্টি করার সক্ষমতা না থাকলেও, সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। তবে র্যাবের কঠোর গোয়েন্দা নজরদারী ও অভিযানের ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেতা কর্মীরা পুনরায় সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়েও বার বার ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।
২। র্যাব প্রতিনিয়ত অভিযান ও নজরদারী পরিচালনার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমনে কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর সাথে একত্রিত হয়ে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর আমির ও শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ প্রায় শতাধিক জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এছাড়াও নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল ইসলাম ও হুজিসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে র্যাবের নিয়মিত নজরদারী অব্যাহত রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত আনসার আল ইসলাম ও হুজিসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের ০৩ হাজারের অধিক এবং হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে প্রায় ০২ হাজার জঙ্গিকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র্যাব। সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন নতুন সংগঠনের নামে সদস্য সংগ্রহ করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা চালাচ্ছে। র্যাব জঙ্গি সংগঠনের এরূপ কার্যক্রমের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
৩। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৫ এবং র্যাব-৭ এর যৌথ আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজারের চৌফলদন্ডি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর সক্রিয় সদস্য ১। মোঃ জাকারিয়া মন্ডল (১৯), পিতা- আব্দুল ওহাব, ইসলামপুর, জামালপুর, ২। মোঃ নিয়ামত উল্লাহ (২১), পিতাঃ মোঃ নুরুল আমিন, বোরহান উদ্দিন, ভোলা ও ৩। মোঃ ওজায়ের (১৯), পিতাঃ ইদ্রিস আলী, সোনাগাজী, ফেনী’দেরকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় উগ্রবাদী পুস্তিকা, লিফলেট ও বিস্ফোরক তৈরীর ম্যানুয়াল (১০টি বই, ২৯টি লিফলেট, ০১টি ডায়েরী, ০২টি মাদ্রাসা পরিচয়পত্র, ০২টি এনআইডি, ০১টি এন্ড্রয়েড ও ০১টি বাটন মোবাইল এবং নগদ ৪,৫৯০/-টাকা)।
৪। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর সক্রিয় সদস্য। তারা আফগানিস্থানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ যোগদান করে। র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযানের ফলে আনসার আল ইসলাম এর কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়ে। আনসার আল ইসলামের নামে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যহত হচ্ছে বিধায় তাদের কার্যক্রমকে চলমান রাখতে আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘আস-শাহাদাত’ নামে নতুন একটি জঙ্গি গ্রুপ তৈরি করে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এই গ্রুপটি পার্শ্ববর্তী একটি দেশ হতে পরিচালিত হচ্ছে এবং এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ৮৫-১০০ জন। এই গ্রুপটির উদ্ভাবক হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিক হাবিবুল্লাহ এবং কথিত আমির সালাহউদ্দিন। এছাড়াও তারা বাংলাদেশকে এই সংগঠনের একটি শাখা বলে দাবী করে। এই গ্রুপটির বাংলাদেশের আঞ্চলিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির ছিলেন র্যাব কর্তৃক পূর্বে গ্রেফতারকৃত ইসমাইল হোসেন। এই গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে। পরবর্তীতে তারা আনসার আল ইসলামের নাম ব্যবহার না করে ‘আস-শাহাদাত’ গ্রুপের নামে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা।
এই লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের উপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে সংগঠনের সদস্যদের ও নতুন সদস্য সংগ্রহ করে তাদেরকে বিভিন্ন অপব্যাখা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদেরকে উগ্রবাদী করে তুলতো। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদেরকে তারা বিভিন্ন উগ্রবাদি পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, টেলিগ্রাম ও বিপ গ্রুপের মাধ্যমে সরবরাহ করতো। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারা ধর্মীয় স্থাপনা, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো। গ্রেফতারকৃতরা তাদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে নতুন গোপনীয় এ্যাপস এর মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতো এবং সংগঠনের সকল প্রকার নির্দেশনা এই এ্যাপসের মাধ্যমে প্রদান করতো বলে জানা যায়।
৫। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ও নেতৃস্থানীয় অনেক সদস্য গ্রেফতার হয়। যেহেতু কিছু সংখ্যক সদস্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে, তাই এই সংগঠনটিকে তারা পুনরুজ্জীবিত করতে নতুন রিক্রুটিং করছে। উঠতি বয়সী কিশোরদের অপব্যাখা দিয়ে সহজে ব্রেন ওয়াশের মাধ্যমে ভূলপথে নেয়া যায় বিধায় কোমলমতি কিশোরদের তারা প্রথমে টার্গেট করতো। তাই এই সংগঠনের বেশিরভাগ সদস্যই ১৯-২০ বছর বয়সী তরুণ এবং মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষক। সাধারণ লেখাপড়ায় শিক্ষিত উগ্র মনোভাবাপন্ন লোকজনকে আকৃষ্ট করার জন্য দেশ বিরোধিতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো। এ সংগঠনে মাদ্রাসা শিক্ষক সদস্যগণ অত্যন্ত সু-কৌশলে মাদ্রাসা পড়ুয়া কোমলমতি ছাত্রদের এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত করতো। এ জন্য তারা সংগঠনের সদস্যদের গোপনে শারীরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করতো বলে জানা যায়। তারা বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতো এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন উগ্রবাদী গ্রুপে তাদের বিচরণ ছিল বলে জানা যায়। ঈদের ছুটিতে মাদ্রাসার বন্ধ থাকায় গ্রেফতারকৃতরা সকলে ছুটিতে বাড়িতে যায়। গ্রেফতারকৃতরা ছুটি শেষে পুনরায় মাদ্রাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু মাদ্রাসায় না গিয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, চাঁদা আদায়, দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা এবং বিভিন্ন নীতি নির্ধারণের জন্য গোপন বৈঠক করার উদ্দেশ্যে জঙ্গি সংগঠনটির বাংলাদেশের পরবর্তী সম্ভাব্য আমিরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গ্রেফতারকৃতরা কক্সবাজারে একত্রিত হয়েছিল। পরবর্তীতে গোপন বৈঠক চলাকালীন সময়ে র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।
৬। গ্রেফতারকৃত জাকারিয়া ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়াস্থ একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত। সে বিগত ০১ বছর পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংগঠনের আমির সালাহউদ্দিন ও ইসমাঈল এর সাথে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে পরিচয় সূত্রে আমির সালাউদ্দিন ও বাংলাদেশের আমির ইসমাইল এর মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে এই সংগঠনের যোগদান করে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। পরবর্তীতে সে আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘আস-শাহাদাত’ গ্রুপের ময়মনসিংহ ও জামালপুর অঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। সে এই সংগঠনের সদস্য পূর্বে গ্রেফতারকৃত জিহাদ এর মাধ্যমে বিভিন্ন সময় অনলাইনে মোবাইল হ্যাকিংয়ে বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং মোবাইল হ্যাকিংয়ে পারদর্শিতা অর্জন করে।
৭। গ্রেফতারকৃত নিয়ামত এবং গ্রেফতারকৃত ওজায়ের চট্টগ্রামের পটিয়ার একটি মাদ্রাসার কিতাব শাখায় অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গ্রুপে একজন জঙ্গি নেতার সাথে গ্রেফতারকৃতদের পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তারা উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে এবং তারা মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন এলাকায় দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। গ্রেফতারকৃত নিয়ামত এবং গ্রেফতারকৃত ওজায়ের পূর্বে গ্রেফতারকৃত কথিত আমির আসাদুজ্জামান আসিফ এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত নিয়ামত এবং গ্রেফতারকৃত ওজায়ের পূর্বে গ্রেফতারকৃত কথিত আমির আসাদুজ্জামান এর সাথে একই মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতো বলে জানা যায়।
৮ । গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
—–ধন্যবাদ—–