নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
স্বামীর সবকিছু বিক্রি করে বাবার ভিটে রক্ষা করতে এসে জীবন শঙ্কায় পরেছে সুবা নামে এক নারীর। আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় কুষ্টিয়ার হরিনারায়নপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান সম্রাট তাকে এই উচ্ছেদ করার চেষ্টা করেন। গতকাল ২৫ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া ইবি থানাধীন হরিনারায়নপুর ইউনিয়নের শান্তিডাঙ্গায় এই ঘটনা ঘটেছে। পরে ইবি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করেন।
জানাযায়, সুবা খাতুন (৪৪) রুস্তম আলী ও নুরজাহান বেগমের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে বড়ো মেয়ে। ছোট ভাই মোঃ কামাল উদ্দিন (৪০) ও ছোট বোন সুহানা খাতুন (৩৬)। বাবা রুস্তম আলী ২০ বছর পূর্বে মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তার ছেলে কামাল উদ্দিনের নামে ১০ শতাংশ ও স্ত্রী নুরজাহান নামে ৪৭ শতাংশ মোট ৫৭ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। বাবার অবর্তমানে ছোট ভাই বোনদেরকে নিয়ে বেশ কষ্টে জীবন যাপন করতেন সুবা। একপর্যায়ে সুবা খাতুনের বিয়ে হয় গোপালগঞ্জ জেলার আশরাফ আলী নামে এক ব্যক্তির সাথে। আশরাফ ঢাকা আশুলিয়ায় এক মুদি দোকানের মালিক ছিলেন। তখনো পর্যন্ত ভাই কামাল উদ্দিন স্বাভাবিক ছিলেন, তাই স্থানীয় মধুপুর কলার বাজারে কামালকে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে ৫০ হাজার টাকাও দেন বড়ো বোন সুবা।
কামাল উদ্দিন এর ব্যবসা বাণিজ্য কয়েক বছর বেশ ভালোই চলছিল। তবে বিপত্তি শুরু হয় এলাকার স্থানীয় কিছু মাদক সেবীদের সাথে চলাফেরার মাধ্যমে। একপর্যায়ে কামাল উদ্দিন পুরোপুরি মাদক সেবী হয়ে পড়ে এবং ব্যবসার সমস্ত অর্থ ধ্বংস করে ফেলে। শেষমেষ বাড়ির টিউবয়েল থেকে শুরু করে বিক্রির মতো সমস্ত কিছু শেষ হয়ে গেলে শুরু করেন চুরি ও ছিনতাই। চুরির দায়ে স্থানীয় সালিশে জরিমানা গুনা সহ জেল খাটেন অনেকবার। সংসার থেকে শুরু করে যার পুরোটাই মেটাতে হতো সুবা খাতুনের। এক পর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যহীন পথ হারা পাগল হয়ে যায় কামাল।
স্বামীও-ছেলে হারা নুরজাহান ছোট মেয়ে সুহানাকে নিয়ে বড্ড অসহায় হয়ে পড়েন। অসহায় নুরজাহান তার বিয়ের উপযুক্ত ছোট মেয়ে সুহানাকে একটি বিয়ে দিয়ে ও তার পাগল ছেলে কামালের খোঁজ করতে ঢাকা থেকে চলে এসে তার বাবার ভিটে রক্ষা করতে বড়ো মেয়ে সুবা এর কাছে দিনের পর দিন কান্নাকাটি করতে থাকে।
অনেক চেষ্টার পর সুবা খাতুন তার স্বামী আশরাফকে রাজি করাতে সফল হন এবং মুদি দোকান বিক্রি করা ও তাদের গচ্ছিত অর্থ নিয়ে বাবার ভিটে রক্ষায় চলে আসেন সুবা। ছোট বোনকে বিয়ে দেন তার শশুর বাড়ির নিজ এলাকায় এবং ভাই কামালকে খুঁজে এনে চিকিৎসা করেন তিনি। তবে আর স্বাভাবিক হয়নি কামাল। এদিকের মা নুরজাহান এই ভিটে রক্ষা করতে তার নামের ৪৭ শতাংশ জমি সুবার নামে লিখে দেন এবং সেখানে সুবা বাড়ি নির্মাণ করে রীতিমত নতুন জীবন শুরু করে।
বিপত্তি শুরু হয় সেখানেই, ছোট বোন ও তার স্বামী ওই জমির ভাগ নিতে মা নুরজাহানকে তাদের কাছে নিয়ে গিয়ে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে সুবার নামে মামলা করান এবং একপর্যায়ে জমি বাতিলের রাই দেন নিম্ন আদালত। নিম্ন আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট না হলে সুবা খাতুন কুষ্টিয়া উচ্চ আদালতে আপিল করলে উচ্চ আদালত তা মঞ্জুর করেন।
এদিকে মামলা চলমান অবস্থায় স্থানীয় মেম্বার মোঃ মিজান ও মাতব্বর জয়নাল এবং চেয়ারম্যান সম্রাট মিলিতভাবে সুবাকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জোর পূর্বক উচ্ছেদের চেষ্টা করে। হরিনারায়নপুর ইউপি মেম্বার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে গেছে সম্রাটের কাছে। মোটা অর্থের বিনিময়ে চেয়ারম্যান প্রায়ই জমি দখলের কাজ করেন বলে জানা গেছে। যেখানে প্রশাসন বারবার হস্তক্ষেপ করলেও তিনি তার কাজ অব্যাহত রেখেছেন। প্রশাসনো এবিষয়ে বিব্রত বলে জানিয়েছেন সাংবাদিকদের।
প্রায় ১৪ লক্ষ্য টাকার বিপুল পরিমান অর্থ আয় থাকার পরও চেয়ারম্যান বাজেটে ৩ লাখ টাকা রাজস্ব ঘাড়তি দেখিয়েছেন। ১২ জন ইউপি সদস্যের মাসিক ভাতাও সঠিকভাবে পরিশোধ করেন না তিনি। কাবিখার ৩শ টন স্পেশাল চাল ১৫ টি প্রকল্পের মাধ্যমে খরচ দেখান তিনি।
এব্যাপারে চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান সম্রাটকে ফোন দিলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন।