কুষ্টিয়া প্রতিনিধি॥
কুষ্টিয়ার মিরপুরে মিম (১৬) নামে এক বালিকা বধুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রামনগর গ্রাম থেকে গৃহবধু মিমের মরদেহ উদ্ধার করে মিরপুর থানা পুলিশ।
নিহত গৃহবধু মিম উপজেলার ১০নং কুর্শা ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফার ছেলে সুজনের স্ত্রী এবং একই উপজেলার ৭নং সদরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা শাজাহান আলীর কণ্যা।
মিম স্থানীয় শ্রীরামপুর মোজাদ্দেদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ৭ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় এবছরের ফেব্রুয়ারীতে পরিবার মেয়েটির বিয়ে দিয়ে দেয় বলে নিশ্চিত করেন প্রধান শিক্ষক আজিজুল ইসলাম।
নিহতের পিতা আলম সাধু চালক শাজাহান আলীর অভিযোগ, ‘মাত্র ৪ মাস পূর্বে পারিবারিক ভাবেই মিমের বিয়ে হয় সুজনের সাথে। বিয়ের সময় ছেলে পক্ষের দাবি মতে, নগদ দেড় লক্ষ টাকা, ফ্রিজ ও গহনাসহ সংসারের জিনিসপত্র দেয়ার কথা ছিলো। আমি বলেছিলাম এগুলি সব একসাথে দিতে পারবো না, আস্তে আস্তে পরিশোধ করে দিবো।
কিন্তু ওদের আর তর সইলো না, ১৫দিন পূর্বে দাবিকৃত টাকার জন্য মিমকে স্বামী সুজন ও শ^শুড় মোস্তফা মিমকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে সুজনের পিতা ও আত্মীয় স্বজন এসে কথাবার্তা বলে মিমকে শ^শুড় বাড়ি নিয়ে যায় গত ৮দিন পূর্বে। এরপর থেকেই মিমের উপর নির্যাতন করতে থাকে শ^শুড় মোস্তফা ও স্বামী সুজন আলী। তারই এক পর্যায়ে গত ১৪জুন রাতভর মিমকে নৃশংস ভাবে শারীরিক নির্যাতনের ফলে মিমের মৃত্যু ঘটে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মিমের গলায় রশি পেচিয়ে ঘরের সিলিংএ মৃতদেহ ঝুলিয়ে রাখে। এমন কি রাত পেরিয়ে গেলেও মিমের মৃত্যু সংবাদটা আমাকে দেয়নি। মৃত্যু সংবাদ পেয়েছি স্থানীয় ইউপি মেম্বর শহিদুল ইসলাম রুনার মোবাইল ফোনে। মিমের মুখে কপালে ঘারের পিছনে এবং দেহের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের কালসিরা চিহ্ন রয়েছে। অথচ পুলিশ মিমের শ^শুর বাড়ির লোক যেভাবে বলছে আত্মহত্যা পুলিশও তাই বলছে। আমি তো আগে থেকেই জানি যে আমার মেয়েকে নির্যাতন করা হচ্ছে। এবং লাশের দেহে এখনও সেসব চিহ্ন দেখা যাচ্ছে’।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম রুনাই জানান, ‘শনিবার সকালে জানতে পারি সুজনের স্ত্রী মিম গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, ঘটনা ঠিকই আছে, পুলিশ ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করছে, তবে নিহতের কপালে থেতলে যাওয়া একটা আঘাত জনিত জখমের চিহ্ন ছিলো এবং গলায় রশি পেচানোর দাগও রয়েছে’। যতদুর শুনেছি তাদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই দাম্পত্য কলহ চলছিলো। তার জেরেই এই ঘটনাটি ঘটেছে’।
তবে অভিযোগ বিষয়ে নিহতের স্বামী সুজন আলী ও শ^শুড় মোস্তফার সেলফোনে কল করলে তার বন্ধ পাওয়া যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোস্তফা হাবিবুল্লাহ জানান, ‘সংবাদ পেয়ে উপজেলার রামনগর গ্রামের এক গৃহবধুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে এঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে থানায়। লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যু কারন যদি হত্যাকান্ড হয় তাহলে সেই অনুযায়ী পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে। নিহতের পরিবারের দাবিকেও আমলে নিয়ে তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।