চট্টগ্রামের সেন্ট স্কলাসটিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ওই প্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
দুই শিক্ষক রাকিব উদ্দিন ও সুরজিত পালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক শিক্ষককে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।আরেক শিক্ষককে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল।
গ্রেফতার শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান বিষয়ের রকিব উদ্দিন (৩৫)। অভিযুক্ত অন্যজন অর্থনীতি বিষয়ের শিক্ষক সুরজিৎ পাল (৩৩)।
থানায় অভিযোগে ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা বলেন, তার মেয়ে সেন্ট স্কলাসটিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ২০২৩ সাল থেকে তার মেয়ের ওপর স্কুলে যৌন নিপীড়ন চলছিল। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়ার হুমকিসহ নানারকম ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রায় দেড় বছর ধরে একসঙ্গে যৌন নিপীড়ন করে আসছিলেন এই দুই শিক্ষক। এমনকি অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো প্রশ্রয় দেয়ারও অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের বিরুদ্ধে।
সর্বশেষ রোববার (৯ জুন) টিফিনের সময় ওই শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে বলে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগে তিনি বলেন। আমার মেয়ে রোববার সকাল ৮টায় পাথরঘাটা সেন্ট স্কলাস্টিকা বালিকা বিদ্যালয়ে যায়। সকাল ১০টা ১০ মিনিটের সময় স্কুলের টিফিন বিরতি দেয়। তখন আমার মেয়ে বাথরুমে যাওয়ার সময় মো. রকিব উদ্দিন ও সুরজিত পাল আমার মেয়েকে কৌশলে বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ তলার বাথরুমের পাশে নিয়ে যায়। তখন তারা আমার মেয়ের শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানী করে। তাদের আচরণে আমার মেয়ে ভীত হয়ে ডাক-চিৎকার করার চেষ্টা করে। প্রথমে ভয়ে ভীত থাকলেও পরে বিষয়টি পরিবারে জানায়।
মঙ্গলবার (১০ জুন) রাতে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় বাদী হয়ে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যমে এই বিষয়ে দেখে বুধবার (১১ জুন) সকালে স্কুলে আসতে থাকেন অভিভাবকরা।
এ ব্যাপারে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ওই স্কুলে শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন হয়রানির ঘটনা আগেও ঘটেছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ তোলেননি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) অতনু চক্রবর্তী বলেন, ভুক্তভোগীর মা শিক্ষকদের আসামি করে একটি মামলা করেছেন। পুলিশ মামলাটি তদন্ত করবে। শিক্ষার্থীর মা অভিযোগের সঙ্গে কিছু স্ক্রিনশটও জমা দিয়েছেন।
এদিকে, ঘটনা জানাজানি হলে অনেকটা তড়িঘড়ি করে ঈদ ও গ্রীষ্মের বন্ধ বলে স্কুল বন্ধ দেয়া হয়।
সেন্ট স্কলাসটিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রিন্সিপাল সেলিন কস্তা বলেন, এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি বিদ্যালয় ও কলেজ প্রধানের।
এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়েদুল হক বরেন, মামলা হওয়ার পর অভিযুক্ত শিক্ষক রকিব উদ্দীনকে গ্রেফতার করা হয়। সুরজিত পালকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত