সীমান্ত ও সাগর পথে মিয়ানমারে প্রতিনিয়ত পাচার হচ্ছে জ্বালানি তেলসহ নানা পণ্য। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে হাজার হাজার লিটার জ্বালানি তেলসহ নানা পণ্যদ্রব্য জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
জেলার বেশকিছু চোরাকারবারি সিন্ডিকেট বিশেষ করে চিহ্নিত মাদক কারাবারিরা পাচারের পাশাপাশি নিয়ে আসছে মাদক। সম্প্রতি এমন তথ্য তুলে ধরেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পাচার প্রতিরোধে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। পাচার প্রতিরোধে গ্রহণ করছে নানা উদ্যোগ।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত ২৭১ কিলোমিটারের। বিস্তৃত এ সীমান্তপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে পাচার হচ্ছে জ্বালানি তেলসহ দেশীয় নানা পণ্যসামগ্রী।
পৌলমী ভাঁজ করে রেখেছে বাবার রক্তাক্ত শার্ট
মূলত মিয়ানমারে অভ্যন্তরীন অস্থিরতায় জ্বালানি তেলসহ খাদ্য সংকটে এ সুযোগ নিচ্ছে দুই দেশের সঙ্ঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র।
এরা মিয়ানমারে বাংলাদেশের পণ্যসামগ্রী ৬/৭ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করে। এসব তথ্য জানিয়েছে কিছু রোহিঙ্গা ও চোরাকারবারিদের সহযোগী ব্যক্তিরা।
সম্প্রতি পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী সীমান্ত অস্থিরতায় মাদক পাচার বাড়ছে। সেই সাথে যারা পণ্য পাচার করছে বিনিময়ে আনা হচ্ছে প্রচুর মাদক।
গত মাসে পাচারের সময় ১২ লাখ ইয়াবাসহ এক পাচারকারীকে আটক করেছে চকরিয়া থানা পুলিশ। শুধু তা নয়, চলতি বছরে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ পাচারকারীদের আটক করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব, কোস্টগার্ড বিজিবি।
এমন প্রবণতার মধ্যেই গত ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ হাজারের বেশি লিটার অকটেন ,৭ হাজার লিটার সয়াবিন, ৩ লাখ পিস ওষুধসহ নানা পণ্যদ্রব্যসহ ৩০ জনকে আটক করে র্যাব। সমপরিমাণ জ্বালানি তেলসহ নানা পণ্য কোস্টগার্ডসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাচারকালে আটক করে।
সূত্রগুলো বলছে, মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার সেন্টমার্টিনসহ নানা সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে তেল ও নানা পণ্য পাচার করছে সঙ্ঘবদ্ধ চক্রটি।
এদের মধ্যে শক্তিশালী কিছু চোরাকারবারি সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা অনেকের জানা। সংশ্লিষ্ট কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে বীরদর্পে এসব পাচারকারী জ্বালানি সহ ভোজ্যপণ্য পাচার করছে। বিনিময়ে আনছে মাদক। এসব মাদক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে।
সীমান্তের লোকজন জানিয়েছে ঘুমধুম, উখিয়া উপজেলার বালুখালী, থাইয়ংখালী রহমতের বিল পালংখালী, টেকনাফের হোয়াইক্যং, লম্বাবিল, হ্নীলা, টেকনাফ সদর, সাবরাং ও বাহারছড়া ইউনিয়নের দুইটি ও সেন্টমার্টিনের একটা করে শক্তিশালী গ্রুপ রয়েছে। তাদের পাচারের বিষয় সবাই জানে। এসব গ্রুপের অনেকে চিহ্নিত মাদক ও স্বর্ণ কারবারী। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সিরাজুল মোস্তফা চৌধুরী লালু বলেন, হোয়াইক্যং লম্বাবিল ঘিরে একটি শক্তিশালী চিহ্নিত পাচার গ্রুপ রয়েছে। তারা দেশের পণ্য সামগ্রী মিয়ানমারে পাচার করছে। বিনিময়ে আনছে গরু ও মহিষ অন্যান্য অবৈধ মালামাল। তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ার আক্তার কামাল বলেন, সেন্টমার্টিনের পণ্য সামগ্রী এক রোহিঙ্গাসহ ৫/৬ জনের একটি সিন্ডিকেট পাচার করছে। তাদের তথ্য গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও রয়েছে।
সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম জানান, একদিকে পণ্যদ্রব্যের উর্ধগতি , অপরদিকে চোরাকারবারি সিন্ডিকেট পণ্য সামগ্রী পাচার করে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি আইনভঙ্গ করছে। যা ২ বছর থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। এ পাচার ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়াতে হবে। না হয় তারা পণ্য পাচারের পাশাপাশি মাদক পাচার আরো ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পাবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী জানান, পাচাররোধে কাজ করছে বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃংখলা বাহিনী। তাদের নজরদারি বাড়ানোর তাগাদা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, পাচারের মুল জায়গাতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। এরই প্রেক্ষিতে বেশ কিছু জ্বালানি তেলও জব্দ করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের সাজা দেয়া হয়। পাচার ঠেকাতে আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দারা কাজ করছে বলেও জানান তিনি।