শেরপুর প্রতিনিধিঃ শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু লুটপাটের মহোৎসব চলছে।
জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী বালুদস্যুরা সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকোচা, বালিজুরি, খাড়ামুড়াসহ বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে।
দিনেরাতে এসব ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু ।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ নদী থেকে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে বালু খেকোরা ।
অনেকেই বালু লুটপাট চালিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন।
তাওয়াকোচা গ্রামের মোহসিন আলী, মোরশেদ আলম,বালিজুরি গ্রামের আব্দুর রহিম ও গোলাপ হোসেনসহ আরো অনেকেই জানান, সোমেশ্বরী নদীটি শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার মাঝ খান দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
নদীর মাঝ খান থেকে পশ্চিম অংশ শ্রীবরদী উপজেলার মধ্যে। আর পূর্বাংশ পড়েছে ঝিনাইগাতী উপজেলার মধ্যে। উভয় স্থানেই বালু উত্তোলন করা হয়। তারা আরো জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে শ্রীবরদী উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলে বালুদস্যুরা বালু ঝিনাইগাতীর অংশে চলে আসে। আবার ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলে বালুদস্যুরা চলে যায় শ্রীবরদীর অংশে।
ফলে বালু লুটপাট বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা ব্যর্থ হয়।
জানা গেছে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতির পূর্বেই খবর হয় বালুদস্যুদের মাঝে। এতে বালু উত্তোলন যন্ত্র সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি সটকে পরে বালুদস্যুরা।
ফলে অভিযান ব্যর্থ হয় প্রশাসনের।
ইতিপূর্বে মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। দুই একটি ড্রেজার মেশিন ভাঙচুর ও করা হয়েছে। বালু খেকোদের কারো কারো জরিমানা ও করা হয়েছে। কিন্তু স্থায়ীভাবে বালু লুটপাট বন্ধ হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী বালুদস্যুরা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থেকে অবাধে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে। অভিযোগে প্রকাশ,বালুদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ মুখ পর্যন্ত খুলতে সাহস পান না।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে সোমেশ্বরী নদীর বিভিন্ন স্থানে ৮/১০ টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু।
খাড়ামুড়া ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত বসানো হয়েছে ড্রেজার মেশিন। বালুদস্যুদের ড্রেজার মেশিনের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে সোমেশ্বরী নদীও নদীর দু'পার। এসব ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনের পর ট্রাক ও মাহিন্দ্র যোগে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে।
বালু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিট্রাক বালু ২০/২৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন ৩০/৪০ ট্রাক বালু বিক্রি করা হচ্ছে। বালু উত্তোলন নিয়ন্ত্রনকারিরা প্রতিট্রাক বালু থেকে ৫ হাজার টাকা করে রাজস্ব আদায় করে আসছেন। সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে তাওয়াকোচা এলাকায় বালুর ট্রাকের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে একটি ঘর ভাড়া নেয়া হয়েছে। এ ঘরে বসে প্রকাশ্যেই নেয়া হচ্ছে বালুর ট্রাকের রাজস্ব।
এভাবে প্রতিদিন বিক্রি করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা মূল্যের বালু । নদীর পাড় কেটে অবাধে বালু লুটপাটের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। অপরদিকে প্রতিবছর সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব আয় থেকে।
জানা গেছে, বালিজুরি গ্রামের প্রভাবশালী জুনায়েদের নেতৃত্বে ৪০ /৫০ জন বালুদস্যু এসব বালু লুটপাটের সাথে জরিত।
অবাধে বালু উত্তোলন ও পরিবহনের কারনে নদীর দু'পাশের রাস্তাগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে ।
বর্তমানে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা মূল্যের বালু উত্তোলন করে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বালু মহালটি ইজারা দেয়া হয়নি। কিন্তু বালু উত্তোলনের সাথে জরিত কেউ কেউ দাবি করছেন বালু মহালটি ইজারা নেয়া হয়েছে। এসব বালু লুটপাটের বিষয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি ও করা হয়েছে। কিন্তু সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু লুটপাট বন্ধ হয়নি। অবস্থা দেখে মনে হয়, এসব দেখার যেন কেউ নেই। শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মনিরুল হাসানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন বালু মহালটি ইজারা দেয়া হয়নি। তাই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে বলা আছে। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সাথে কথা হলেও এ বিষয়ে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। শেরপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুমের সাথে কথা হলে তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত