বিজিবি’তে চাকুরী দেওয়ার নামে প্রতারণার দায়ে দুইজন প্রতারককে যশোর জেলার কোতয়ালী মডেল থানাধীন ঝুমঝুমপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৬। র্যাব ফোর্সেস আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে তরান্বিত করতে এবং সম্মানিত নাগরিকদের জন্য টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনের আলোকে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি ও বিবিধ প্রতারক চক্র গ্রেফতারসহ চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী মোঃ রবিউল ইসলাম, পিতা- মৃত ইমান আলী, সাং- মশরহাটি, থানা- অভয়নগর, জেলা- যশোর একজন চায়ের দোকানদার। গত ইং ২৫/০৪/২০২৪ তারিখে ভুক্তভোগী ও তার ছেলে চায়ের দোকানদারী করাকালীন মোঃ আনিসুর রহমান (৫৫) নামে এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়। তখন আনিসুর রহমান ভুক্তভোগীকে বলে আপনার ছেলে তো লম্বা চওড়া আছে, আমি বিজিবিতে চাকুরী নিয়ে দিতে পারবো, আপনি কি আপনার ছেলেকে বিজিবিতে চাকুরী করাতে চান? যদি আপনার ছেলেকে বিজিবিতে চাকুরী নিয়ে দিতে চান তাহলে অল্প কিছু টাকা খরচ করতে হবে।
ভুক্তভোগী সরল বিশ্বাসে আনিসুর রহমান এর কথায় রাজি হয় এবং কত টাকা লাগবে জানতে চাইলে, আনিসুর রহমান জানায় চাকুরীর পূর্বে এক লক্ষ টাকা এবং চাকুরীর পরে চার লক্ষ টাকা দিতে হবে। ভুক্তভোগী উক্ত টাকা দিতে রাজি হলে আনিসুর রহমান, ভুক্তভোগীর ও তার স্ত্রীর এনআইডির’র কপি এবং তার ছেলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সার্টিফিকেট, মার্কশিট এর সত্যায়িত ফটোকপি ও ছবি নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ইং ২৮/০৪/২০২৪ তারিখ ভুক্তভোগীর ছেলেকে মোবাইলে অজ্ঞাত এক নম্বর থেকে কল দিয়ে জানায়, তিনি বিজিবি’র কমান্ডার, তার চাকুরীর জন্য অনলাইন আবেদন বাবদ তিন হাজার টাকা বিকাশ করতে হবে। ভুক্তভোগী তার ছেলের নিকট হতে বিষয়টি জেনে আনিসুর রহমানকে জানালে, আনিসুর রহমান বলে ওই নম্বরে তিন হাজার টাকা বিকাশ করে দেন। ভুক্তভোগী সরল বিশ্বাসে উক্ত নম্বরে তিন হাজার টাকা বিকাশ করে দেয়।
পরবর্তীতে ইং ২৮/০৫/২০২৪ তারিখ আনিসুর রহমান, তার সহযোগী মোঃ মশিউর রহমান (৫৮)কে নিয়ে ভুক্তভোগীর বাড়িতে যান। সে সময় ভুক্তভোগীর সাথে মোঃ মশিউর রহমান (৫৮)কে একজন কলেজের প্রফেসর বলে পরিচয় করে দেয় এবং বলে মশিউর রহমান সাহেব, আপনার ছেলেকে বিজিবিতে চাকুরী নিয়ে দিবে। তখন মোঃ মশিউর রহমান, ভুক্তভোগীকে জানায় আগামী ইং ০১/০৬/২০২৪ তারিখ বিজিবি’তে চাকুরীর মাঠ পরিক্ষা আছে এবং উক্ত মাঠ পরিক্ষায় আপনার ছেলেকে উত্তীর্ণ করার জন্য ৫০,০০০/- (পঁঞ্চাশ হাজার) টাকা দিতে হবে। ভুক্তভোগী তাদেরকে বলে, আমি ৫০,০০০/- (পঁঞ্চাশ হাজার) টাকা এতো কম সময়ে জোগাড় করতে পারবো না, আপনারা মাঠ পরিক্ষায় উত্তীর্ণ করার ব্যবস্থা করেন, আমি কিছুদিন পরে টাকা দিয়ে দেবো।
০১/০৬/২০২৪ ইং তারিখ আনিসুর রহমান ও মশিউর রহমান এর কথামত সকাল ০৭.০০ ঘটিকায় ভুক্তভোগী ও তার ছেলে ঝুমঝুমপুর বিজিবি গেইটের সামনে আসে। এ সময় আনিসুর রহমান ও মশিউর রহমান এর নিকট হতে ভুক্তভোগী তার ছেলের অনলাইন আবেদনপত্র চাইলে তারা ভুক্তভোগীর নিকট উক্ত ৫০,০০০/- (পঁঞ্চাশ হাজার) টাকা দাবী করে এবং জানায় টাকা না দিলে অনলাইন আবেদন পত্র দিবে না। ভুক্তভোগী তাদের নিকট অনুনয় বিনয় করে তার কাছে থাকা ৫০০০/- টাকা আনিসুর রহমান ও মশিউর রহমান‘কে প্রদান করে।
তারা উক্ত ৫০০০/- টাকা নিয়ে একটি ভূয়া অনলাইন আবেদনপত্র দিয়ে তারা কৌশলে পালিয়ে যায়। ভুক্তভোগীর ছেলে উক্ত অনলাইন আবেদনপত্র নিয়ে বিজিবি গেইটে ঢুকতে গেলে জানতে পারে আবেদনপত্রটি ভূয়া। পরবর্তীতে উক্ত বিষয়ে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে যশোর জেলার কোতয়ালী মডেল থানায় আনিসুর রহমান ও মশিউর রহমানদ্বয়ের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন।
নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে র্যাব-৬, সিপিসি-৩, যশোর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল ইং ০১/০৬/২০২৪ তারিখ ২১.৫০ ঘটিকার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, উক্ত মামলার আসামীদ্বয় (i) মোঃ আনিসুর রহমান (৫৫), পিতা- মৃত শেখ আতিকুর রহমান, সাং- জংগল বাধাল, ৭নং ওয়ার্ড, ১৫নং বসুন্দিয়া ইউনিয়ন, থানা- কোতয়ালী মডেল, জেলা- যশোর, (ii) মোঃ মশিউর রহমান (৫৮), পিতা- মৃত আবুল হোসেন, মাতা- মৃত মরিয়ম বেগম, সাং- কলেজপাড়া, থানা- লোহাগড়া, জেলা- নড়াইল, যশোর জেলার কোতয়ালী মডেল থানাধীন ঝুমঝুমপুর এলাকায় অবস্থান করছে। তাৎক্ষণিক র্যাব-৬, যশোর এর একটি আভিযানিক দল উক্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ইং ০১/০৬/২০২৪ তারিখ রাত ২২.১৫ ঘটিকার সময় দুইজন প্রতারক (i) মোঃ আনিসুর রহমান (৫৫) ও (ii) মোঃ মশিউর রহমান (৫৮) দ্বয়কে হাতে নাতে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়‘কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। এছাড়াও আসামী মোঃ মশিউর রহমান (৫৮) এর বিরুদ্ধে একটি অন্যান্য ধারার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে যশোর জেলার কোতয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।