ডাকাত সর্দার আনোয়ার ও বোমা স্বপনসহ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ১৪ সদস্য গ্রেফতার, দেশীয় অস্ত্র, লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা উদ্ধার। দুটি চাঞ্চল্যকর ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটন।
গত ১৭/০৫/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ ১৮/০৫/২০২৪ খ্রিঃ তারিখে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে রাতভর দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ঐ রাতে অস্ত্রধারী সঙ্গবদ্ধ ডাকাতদল রাত অনুমান ০২.০০ ঘটিকার সময় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন পশ্চিম আড়াকুল সাকিনস্থ নয়ামাটি এলাকায় আশা আক্তারের বাবার বাড়ীর দরজা ভেঙ্গে মাস্ক পরিহিত ১৪/১৫ জন ডাকাত প্রবেশ করে এবং বাড়ীর সকলকে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে। ডাকাতরা বাড়ীর সবাইকে এক রুমে নিয়ে বেধে ফেলে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে মারধর করে নগদ ৩,০০০/- টাকা, একটি স্বর্ণের চেইন, চার আনা ওজনের একটি স্বর্ণের কানের দুল, একটি স্বর্ণের আংটি, একটি মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে ৪,০০০/- টাকাসহ মোবাইল ফোন ডাকাতি করে নিয়ে যায়। দূর্ধর্ষ এই ডাকাতির ঘটনায় আশা আক্তার সাফিয়া (১৯) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার মামলা নং- ৮১, তাং- ২৩/০৫/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা- ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড রুজু করেন। একইভাবে গত ০৩/০৪/২০২৪ খ্রিঃ দিবাগত রাত অর্থাৎ ০৪/০৪/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ রাতে অস্ত্রধারী ডাকাতদল দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন পুরাতন বাক্তারচর এলকায় ময়না বেগম এর বাড়ীর দরজা ভেঙ্গে অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জন ডাকাত প্রবেশ করে এবং বাড়ীর সকলকে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়। দূর্ধর্ষ এই ডাকাতির ঘটনায় ময়না বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার মামলা নং- ১৪, তাং- ০৪/০৪/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা- ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড রুজু করেন।
দূর্ধর্ষ এই ২টি ডাকাতি মামলার মূল রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনায় জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য জনাব আসাদুজ্জামান, বিপিএম, পিপিএম (বার), পুলিশ সুপার, ঢাকা মহোদয় তাৎক্ষণিক নির্দেশ প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জনাব আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ক্রাইম এন্ড অপস্ (দক্ষিণ) এর সার্বিক দিকনির্দেশনায় জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর, বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর নেতৃত্বে একটি স্পেশাল তদন্তটিম দূর্ধর্ষ এই ক্লু-লেস সিরিজ ডাকাতির মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে ঘটনার পর থেকেই ব্যাপক তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। তদন্তটিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও বিভিন্ন আলমত সংগ্রহ করে, ঘটনাস্থলের আশেপাশের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ পূর্বক পর্যালোচনা করে। একপর্যায়ে তদন্তটিম ঘটনাস্থল ও এর আশেপাশের এলাকায় তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনায় জড়িত সন্দিগ্ধ আসামীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরপর ঘটনায় জড়িত ডাকাতদের অবস্থান চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার ও লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারের লক্ষ্যে জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর, বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে জনাব মামুন-অর রশিদ, পিপিএম, অফিসার ইনচার্জ এর সহযোগিতায় দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার এসআই (নিঃ) হিরন কুমার বিশ্বাস, এসআই (নিঃ) সাইদুজ্জামান, এসআই (নিঃ) নির্মল কুমার আগরওয়ালা ও এসআই (নিঃ) কাজী নাজমুস সাকিব-দের সমন্বয়ে একটি চৌকষ আভিযানিক দল কেরাণীগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, নারায়নগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও কামরাঙ্গীরচরসহ ডিএমপির বিভিন্ন এলাকা হতে সিরিজ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত আসামী ১। আনোয়ার দেওয়ান (৪২), ২। ছাব্বির হাতকাটা ছাব্বির স্বপন (৫২), ৩। মন্জু মৃধা মন্টু মৃধা (৪৫), ৪। কামাল খাঁ (৪২), ৫। কালু হাওলাদার (৪৪), ৬। মনির হোসেন মোল্লা (৪১), ৭। সেলিম ব্যাপারী (৬০), ৮। চাঁন শরীফ শেখ (৫০), ৯। ওমর ফারুক মাদবর (২৩), ১০। সুমন মোল্লা (৪০), ১১। নুরে আমিন আল আমিন জুয়েল (৪২), ১২। সোলেমান সুমন ঢালী (৫০), ১৩। কাজল দেবনাথ (৪৭), ১৪। মাহাবুব মৃধা (২৩) -দেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ডাকাতদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ডাকাতদলের সদস্যরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উপরে উল্লেখিত সিরিজ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। ডাকাতদলের সদস্যদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা ও সাজা পরোয়ানা রয়েছে বলে জানা যায়। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে।
রুজুকৃত মামলার বিবরণঃ
১। দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার মামলা নং- ৮১, তাং- ২৩/০৫/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা- ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড।
২। দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার মামলা নং- ১৪, তাং- ০৪/০৪/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা- ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড।
উদ্ধারঃ ১। স্বর্ণালংকার ১ ভরি,
২। নগদ ৪৭,০০০/- টাকা।
৩। ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র।