এয়ারপোর্ট থানাধীন হোসনাবাদ আবাসিক এলাকাস্থ জনৈক সুন্নত চৌধুরী এর মালিকানাধীন খালি জায়গায় একজন ৩৫ বছর বয়সী অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তির লাশ পড়ে আছে বলে থানায় সংবাদ পাওয়া যায়। পরে এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের পরিচয় সনাক্ত করার চেষ্টা করে। কিছুক্ষন পরে ভিকটিম এর ভাই অনুকুল চন্দ্র দাশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে লাশের পরিচয় নিশ্চিত করেন এবং ভিকটিম তার ছোট ভাই বলে জানান। ভিকটিম এর ভাই আরো জানান ভিকটিম এর নাম অমিত দাস শিবু। তিনি দৈনিক উত্তর পূর্ব পত্রিকার কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। পরে ভিকটিমের ভাই অনুকুল চন্দ্র দাশ বাদী হয়ে এয়ারপোর্ট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করলে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে জনাব মোঃ আজবাহার আলী শেখ, পিপিএম, উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মহোদয়ের সার্বিক দিক-নির্দেশনায়, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর), সহকারী পুলিশ কমিশনার, এয়ারপোর্ট থানা এবং অফিসার ইনচার্জ, এয়ারপোর্ট থানা, এসএমপি এর নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করা হয়। পরে টিমের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে তদন্তকারী কর্মকর্তা ভিকটিম অমিত হত্যার সাথে জড়িত আসামী ১। মোঃ ফয়সল আহমদ (৩২), পিতা-মৃত আঃ মুকিত, ঠিকানা: স্থায়ী: গ্রাম- শাহী ঈদগাহ (বাসা নং-৪৮, হাজারীবাগ), উপজেলা/থানা- এয়ারপোর্ট, জেলা-সিলেটকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে ধৃত আসামী ফয়সল এর দেয়া তথ্য মতে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অমিত দাস শিবু হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামী ২। তাহমিদ আহমদ (২৬), পিতা-আব্দুস সালাম, ঠিকানা: স্থায়ী: গ্রাম- সাগরদিঘীরপাড় (বাসা নং-৬৫), উপজেলা/থানা- সিলেট সদর (কোতয়ালী), জেলা-সিলেট, বাংলাদেশ: বর্তমান: গ্রাম- আরামবাগ আ/এ, উপজেলা/থানা- শাহপরান (রঃ), জেলা- সিলেট এবং ৩। সুমাইয়া আক্তার সুমি (২০), পিতা-মৃত জামাল ভূইয়া, ঠিকানা: স্থায়ী: গ্রাম- কালিকচ্ছ (কালিকাস্থ, বস্তি), থানা- সরাইল, জেলা -ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাংলাদেশ: বর্তমান: গ্রাম- আরামবাগ আ/এ, উপজেলা/থানা- শাহপরান (রঃ), জেলা-সিলেটকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) দেবাংশু কুমার দে, এসআই (নিঃ)/পলাশ চন্দ্র দাস, এসআই (নিঃ)/গৌতম দাশ, এএসআই (নিঃ)/এখলাছুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স সহ ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে গত ২২/০৫/২৪খ্রিঃ তারিখে কুমিল্লা জেলা থেকে গ্রেফতার করেন। ২৩/০৫/২৪খ্রিঃ তারিখে তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে আসামীদ্বয় ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে এবং জড়িত অন্যান্য আসামীদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে। পরে বিজ্ঞ আদালত আসামীদ্বয়কে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম অমিতের সাথে সুমাইয়ার ফোনে যোগাযোগ হয় এবং তারা হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকবার কথা বলেছে। কথা বলার এক পর্যায়ে তারা একে অপরের সাথে দেখা করতে চায়। এইদিকে সুমাইয়া অমিতের উপর বিরক্ত ছিল, অমিত তাকে বারবার ফোন করে ডিস্টার্ব করার কারণে সুমাইয়া তার পাড়ার প্রভাবশালী বড়ভাই ফয়সালকে বিষয়টা জানায়। ফয়সাল তখন সুমাইয়াকে বলে অমিতকে ফোন করে হাজারীবাগ এলাকায় নিয়ে আসতে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ৮:৩০ (সাড়ে আটটার) দিকে ভিকটিম অমিতকে শাহী ঈদগাহ এলাকায় ডেকে আনলে অমিত শাহী ঈদগাহ এলাকাস্থ মিনারগেটের নিচে সুমাইয়ার সাথে দেখা করে। দেখা করার পর সুমাইয়া, অমিতের মোটর সাইকেলের পিছনে চড়ে হাজারীবাগ এলাকায় যায়। উক্ত স্থানে যাওয়ার পরপরই ফয়সাল ও তার সাথে থাকা আরো ৪/৫জন আসামী অমিতের সাথে কথা কাটাকাটি করে এবং এক পর্যায়ে তারা হাতাহাতি করে। হাতাহাতির একপর্যায়ে ফয়সলসহ অন্যান্য আসামীরা অমিতের মোটরসাইকেলের হেলমেট দিয়ে তাকে আঘাত করে এবং এলোপাথারি ভাবে কিল ঘুষি মারতে থাকে। তখন সুমাইয়া তার কথিত বয়ফ্রেন্ড তাহমিদকে ফোন দেয়। কিছুক্ষন পরে তাহমিদ উক্ত ঘটনাস্থলে আসে এবং এসে মারামারিতে অংশগ্রহণ করে। পরে আসামীদের এলোপাতারি মারপিটে ভিকটিম অমিত ঘটনাস্থলে মারা গেলে তার লাশ এয়ারপোর্ট থানাধীন হোসনাবাদ এলাকায় ফেলে চলে যায়। পরে পুলিশ সংবাদ পেয়ে সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজে লাশ প্রেরণ করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিম এর মোটরসাইকেল, মোটরসাইকেলের হেলমেট, মানিব্যাগসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করে। উক্ত মামলার ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যহত আছে।