অন্তঃসত্বা স্ত্রীর গায়ে ডিজেল ঢেলে নৃশংসভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অপরাধে ঘাতক স্বামীকে যশোর জেলার বেনাপোল থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব -৬।
১। “বাংলাদেশ আমার অহংকার”এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, খুনী, ছিনতাইকারী, অপহরণ প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত দীর্ঘদিনের পলাতক দন্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
২। গত ইং ১০/০৪/২০২৪ তারিখ ঈদুল ফিতরের দিন চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ থানা এলাকায় স্বামী কর্তৃক নিজ স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন পূর্বক স্ত্রীর শরীরে ডিজেল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে মতলব দক্ষিণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ভিকটিমের শাশুড়ী মামলা রুজুর পরপরই গ্রেফতার হলেও মূল অপরাধী ঘাতক স্বামী ঘটনার পরপরই নিজেকে আত্মগোপন করে। ঘটনাটি স্পর্শকাতর ও হৃদয় বিদারক হওয়ায় উক্ত ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক আলোরণ সৃষ্টি করে এবং আলোচিত হত্যাকান্ডের মূল অপরাধী ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতারের জন্য অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-৬, যশোর ক্যাম্পের সহযোগীতা চান। স্পর্শকাতর এই ঘটনার মূল পলাতক আসামীকে গ্রেফতারে র্যাব-৬, যশোর ক্যাম্পের গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইং ০৯/০৫/২০২৪ তারিখ রাত আনুমানিক ১১.৩০ ঘটিকায় জানতে পারে যে, যশোর জেলার বেনাপোল পোর্ট থানাধীন বেনাপোল ডিগ্রী কলেজ এলাকায় উক্ত মামলার মূল আসামী মোঃ ইব্রাহিম প্রধানিয়া (৩৮) আত্মগোপনে আছে। উক্ত সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে ইং ১০/০৫/২০২৪ তারিখ দিবাগত রাত আনুমানিক ০১.২০ ঘটিকায় উক্ত এলাকা হতে আসামী (i) মোঃ ইব্রাহিম প্রধানিয়া (৩৮), পিতা- মোঃ আব্দুল মোতালেব প্রাধানিয়া, সাং- বকচর, থানা- মতলব দক্ষিণ, জেলা- চাঁদপুর’কে গ্রেফতার করে।
৩। মামলা সূত্রে জানা যায় যে, ভিকটিম মৃত খাদিজা আক্তার (২৩), পিতা- মোঃ খোকন মিয়া, সাং- বকচর, থানা- মতলব দক্ষিণ, জেলা- চাঁদপুর এর সহিত মোঃ ইব্রাহিম প্রধানিয়া (৩৮) এর পারিবারিক ভাবে গত চার বছর পূর্বে বিবাহ হয় এবং তাদের পরিবারে দুইটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। গত এক বছর যাবৎ ভিকটিমকে তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে ফার্নিচার নিয়ে আসার জন্য তার স্বামী ও শাশুড়ী বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতো এবং মাঝে মধ্যে শারীরিক নির্যাতন করতো। ভিকটিমের বাবা হতদরিদ্র হওয়ায় ভিকটিমের শ্বশুর বাড়িতে তাদের দাবীকৃত ফার্নিচার দিতে না পারায় ভিকটিমকে শারীরিক নির্যাতন করার ফলে এলাকায় স্থানীয় মেম্বার ও মুরব্বীদের নিয়ে একাধিকবার সালিশী বৈঠক করা হয়েছে। সালিশী বৈঠকে ভিকটিমের স্বামী ও শাশুড়ী ভিকটিমের সাথে ভালো ব্যবহার করার অঙ্গিকার করলেও পরবর্তীতে তারা আবারো বিভিন্ন অযুহাতে ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। এরই ধারাবাহিকতায় গত ঈদুল ফিতর/২৪ এর দিন (ইং ১০/০৪/২০২৪ তারিখ) রাতে কথা কাটাকাটির জেরে ভিকটিমকে তার স্বামী ও শাশুড়ী মিলে নির্যাতন করে এবং এক পর্যায় বাড়িতে থাকা ডিজেল ভিকটিমের শরীরে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ভিকটিমের ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে আগুন নিভায়। কিন্তু ততক্ষণে ভিকটিমের প্রায় সম্পূর্ণ শরীর আগুনে পুড়ে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিমকে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট, ঢাকায় চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় এবং চিকিৎসারত অবস্থায় ইং ১২/০৪/২০২৪ তারিখ মধ্যরাতে ভিকটিম মারা যায়।
৪। গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে উক্ত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এবং সে আরো জানায়, গ্রেফতার এড়ানোর জন্য যশোর জেলার বেনাপোল পোর্ট থানাধীন বেনাপোল ডিগ্রী কলেজ এলাকায় বসবাসরত তার আত্মীয়ের বাড়িতে নিজেকে আত্মগোপনে রেখেছিল।
৫। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গ্রেফতারকৃত আসামীকে অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত