কুষ্টিয়ার মিরপুর থানাধীন পোড়াদহে অবস্থিত পোড়াদহের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ কলেজ।কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অন্নদা প্রসাদ মোহন্তের দুর্নীতির রাহুগ্রাস এর কারণে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়ে পরে। তার দুর্নীতির তথ্য লোকমুখে প্রচারিত হওয়ার কারনে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ইং মঙ্গলবার পোড়াদহ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠন সহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ কর্তৃক পোড়াদহের ওস্তাদ শুকুর আলী মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত নব নির্বাচিত সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কামারুল আরেফিনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যায়নি। কলেজের শিক্ষকমণ্ডলী এমপি মহোদয়ের সাথে সাক্ষাত করলে এমপি মহোদয় অধ্যক্ষকে বাদ দিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবারশিক্ষকদের তাঁর নিজ বাসভবনে দেখা করতে বলেন। এরপর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় দৈনিক গণমুক্তি পত্রিকায় “পোড়াদহ কলেজের অধ্যক্ষের সীমাহীন দুর্নীতি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ এবং এমপি মহোদয়ের কাছে কলেজের শিক্ষকদের লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি মিরপুর ভেড়ামারা আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মিরপুর ভেড়ামারা বাসীর নয়নের মনি জননেতা আলহাজ্ব কামারুল আরেফিন (এমপি) মহোদয়ের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি শিক্ষকদের মধ্যে থেকে ৫/৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রদান করেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২১ ফেব্রুয়ারি বুধবার মুন্সী খানজাহান আলী, জৈষ্ঠ্য প্রভাষক, ভুগোল বিভাগকে আহবায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও পোড়াদহ কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন ১. বেলাল হোসেন, সহঃ অধ্যাপক সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ, ২. মোঃ মহসিন আলী, জৈষ্ঠ্য প্রভাষক, জীববিজ্ঞান বিভাগ, ৩. মোছাঃ লাবণী আক্তার, প্রভাষক অর্থনীতি বিভাগ,ও ৪. জাফর সাদেক, প্রদর্শক আইসিটি বিভাগ।২০ কর্মদিবস পরে গত ১২/৩/২০২৩ ইং তারিখে তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেন। তদন্ত কমিটির রিপোটের বিস্তারিত নিচে তুলে ধরা হলোঃ ১। ৪৬৬ নং ভাউচারে শিক্ষা সফর বাবদ ২,৮৪,৮২৭/=টাকা খরচ দেখানো হলেও মূলত শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত হয় শিক্ষকদের চাঁদার টাকায়। কলেজ থেকে কোন অর্থ গ্রহন করা হয়নি। এছাড়াও শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত হয় মার্চের পাঁচ তারিখ থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত কিন্তু বিল ভাউচার করা হয় জানুয়ারি মাসে। ২। ৬৪০ নম্বর ভাউচারে ডেকোরেশন খরচ দেখানো হয়েছে ৪৬,৫৭০/-টাকা। মঞ্চ, চেয়ার, চেয়ার, সাউন্ড সিস্টেম ও অন্যান্য খরচ দেখানো হলেও সামিয়ানা ভাড্যা ৩৫ হাজার টাকা আলাদা দেখানো হয়েছে, যা তদন্ত কমিটির কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। ৩। বাংলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক এস লায়লা পারভীন বানু ক্যান্সারে আক্রান্তহয়ে অসুস্থ হয়ে কলেজে আসতে না পারায় খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে লায়লা পারভিন বানুর কাছ থেকে প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা করে আদায় করলেও জানুয়ারি ২০১৮ থেকে নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে শুধু মার্চ ২০১৮ মাসে চাঁদা হিসেবে ১০ হাজার টাকা কলেজে জমা হলেও বাকি দশ মাসের ১,০০,০০০/-টাকা কলেজে জমা করা হয়নি। কিন্তু কলেজ থেকে খণ্ডকালীন শিক্ষককে দশ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হয়েছে। ৪। কলেজে প্রশংসা পত্র বিতরণের টাকা ২০১৮ইং, ২০১৮ইং, ২০২০ ইং সালে ৭২,৫৬০/-টাকা জমা হলেও ২০২১ইং ২০২২ইং সালে কোন টাকা জমা করা হয়নি। ৫। ম্যানেজিং কমিটি গঠনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের বডি নির্বাচন নীতিমালার ২ এর ১ ও ড ধারা মোতাবেক দাতা সদস্য ৩,০০,০০০/-টাকাএবং হিতৈষী সদস্যের ৫০,০০০/-হাজার টাকা চাঁদা প্রদানের বিধান আছে, কিন্তু ২০১৮ইং জানুযায়ী থেকে ২০২৩ ইং ডিসেম্বর পর্যন্ত দুইবার ম্যানেজিং কমিটি গঠন হলেও ২০২০ইং সালে শুধুমাত্র হিতৈষী সদস্যের ৫০ হাজার টাকা এবং নমিনেশন বিক্রয়বাবদ ৩ হাজার টাকা জমা দেখানো আছে। ৬। কলেজের সীমানা প্রাচীর দেওয়ার পর সীমানা প্রাচীরের ১২০ ফিট জিআই তারের নেট ও ২১ টি সিমেন্টের খুঁটি কলেজে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
৭। কলেজে আম গাছ ৬৫ টি, কাঁঠাল গাছ ৩ টি এবং নারিকেল গাছ ৮টি থাকলেও এ যাবত ৭৬০/-টাকা ডাব বিক্রিবাবদ জমা করলেও বাদবাকি ফল বিক্রিটাকা কলেজে জমা হয়নি গত বছর প্রচুর আম ধরলেও কোন ফল বিক্রিটাকা কলেজে জমা করা হয়নি। ৮।সরকারি প্রজেক্টে পুকুর খননকৃত মাটি কলেজের নিচু জায়গা ভরাট না করে আনুমানিক ৭০০ থেকে ৮০০ টলি মাটি রাতের অন্ধকারে কলেজ থেকে নিয়ে অধ্যক্ষ তার নিজ বাড়ির নিচু জায়গা ভরাট করেছে, পরে মাটি ক্রয় করে কলেজের নিচু জায়গা ভরাট করা হয়েছে। ৯। কলেজের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হলেও আজ অবধি আবেদনের টিটি বাবদ প্রাপ্ত টাকা কলেজে জমা করা হয়নি। ১০। মিনিটি অডিট বাবদ শিক্ষক কর্মচারীদের কাছ থেকে ৫,০৩,১৬৮/-টাকা চাঁদা হিসাবে গ্রহণ করেছে, ডিগ্রী/অনার্স শিক্ষকদের এমপিও না হলেও তাদের কাছ থেকে ২,২৭,০০০/-টাকা বেতন ও বোনাস হিসাবে বেতন বহিতে স্বাক্ষর করে নিয়েছে। এইচএসসি শিক্ষক কর্মচারীদের কাছ থেকেও ২,৬৭,১৬৮/-টাকা ৩০% বোনাস হিসাবে বেতন বহিতে স্বাক্ষর করিয়ে গ্রহণ করেন অধ্যক্ষ মহোদয়। ১১। অধ্যক্ষের কলেজে যোগদানের পর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বন বিভাগের অনুমতি না নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে গাছ কাটার মহা উৎসবে মেতে ওঠে। শতাধিক আম, কাঁঠাল, লিচু, অর্জুন নারকেল গাছ, ও সমগ্র গাছের ডাল ছাঁটাই করেছে। ২০১৮ইং সালে ৬২০২৫/-টাকা, ২০২১ইং সালে ৬২৬৯/- টাকা,ও ২০২৩ইং সালে ৮৫৭০/-টাকা গাছ বিক্রিবাবদ কলেজে জমা হয়েছে। ১০৩ সেফটি কাঠ চেরাই করার পর ৪২ সেফটি কাঠ কলেজে পাওয়া গেছে, বেশিরভাগ কাঠ ও খড়ি বিক্রিটাকা কলেজে জমা করা হয়নি।১২। কলেজের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ক্রব্রুকমিটি গঠনে সরকারি বিধি না মেনে নিজের সুবিধামত কমিটি গঠন করে উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের নামে ২০২২ইং সালে ১০,৬৯,৯৪৫/-টাক এবং ২০২৪ইং সালে ১৪,৫৬,৯৪০/- টাকা মোট দুই বছরে ২৫,২৬,১০৭/- টাকা খরচ করেছে। যা বিধি মোতাবেক হয়নি। সরকারি বিধি মতে উন্নয়ন কমিটি গঠনে ১২ (111) ধারা মোতাবেক উন্নয়ন কমিটি গঠিত হবে একজন সিনিয়র শিক্ষক, একজন বিজি সদস্য, ও একজন শিক্ষক প্রতিনিধি সমন্বয়ে। এই বিধি না মেনে অধ্যক্ষ তার ইচ্ছা মত কমিটি গঠন করে একক সিদ্ধান্তে খরচ করেছে। ১৩। সরকারি বরাদ্দে শহীদ মিনার ও পুকুর খনন কাজ হলেও নিয়মিত ভাবে কলেজ থেকে টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ বাদেও শহিদ মিনারের জন্য তিন লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। পুকুর পাড় উন্নয়নে ৬,০২,৬০২/- টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। ভাউচারে স্বাক্ষরকারী কমিটি বিধি সম্মত নয় এখানেও ১২ (11) খারা মানা হয়নি।১৪। কলেজে ফুল গাছ লাগানো দেখানো হয়েছে ১,২৬,২২৬/- এবং সর্বমোট লেবার খরচ দেখানো হয়েছে ৪,২০,৮৭৫/-টাকা, পুকুর পাড়ে ফুল গাছের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, ফুলগাছ ক্রয়ও লেবার খরচ অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। ১৫। অর্থ কমিটির মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে ৩ টি দোকান থেকে দরপত্র সংগ্রহের নিয়ম থাকলেও অর্থ ও ক্রয় কমিটি কোন প্রকার দরপত্র ছাড়াই সকলা মালামাল ক্ররুরেছে। অর্থ কমিটি গঠনেও সরকারি বিধি মানা হয়নি। ১৬। সরকারি বরাদ্দে নির্মাণকৃত চারতলা আইসিটি ভবনের ডিজাইন পরিবর্তন করে অধ্যক্ষ নিজের ইচ্ছামতো ডিজাইনে পরিবর্তন করেছে অযুখানা ভেঙে নিজের জন্য ওয়াশরুম তৈরি করেছে এবং নতুন ভাবে অন্যত্র ওযু খানা তৈরি করে দিয়েছে। ১৭।কলেজের নামে দশটি অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা হয় আদায়কৃত অর্থ বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ভাগ করে রাখা হয়। অধ্যক্ষ তার পছন্দমত শিক্ষকের সাথে যৌথ একাউন্ট পরিচালনা করে ইচ্ছামত টাকা উত্তোলন করে এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে
কমিটির ক্রঙ্ক্ষত জিনিসের কোন হিসাব খুঁজে পাওয়া যায়নি।