গত ২৪ ঘণ্টায় মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে পৃথক পৃথক ঘটনায় ২০৬৭ বোতল ফেন্সিডিল এবং ১১.৫ কেজি গাঁজাসহ ০৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার, এছাড়াও ঠাকুরগাঁও এ ০৬ জন রেল টিকিট কালোবাজারি’কে বিভিন্ন মেয়াদে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা প্রদান করেছে র্যাব-১৩
মাদকের কালো থাবায় আক্রান্ত সারা বিশ্ব। মাদকের বিস্তার এখন শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। এর বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের অমিত সম্ভাবনাকে। মূল্যবোধের অবক্ষয়, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসামঞ্জস্যতা এবং নানাবিধ হতাশার সুযোগ নিয়ে মাদক তার কালো হাত প্রসারিত করেছে তরুণ সমাজের প্রতি।
নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পর মাদকই সবচেয়ে লাভবান ব্যবসা। বিশেষ করে ফেন্সিডিল ও ইয়াবা সহজলভ্য ও বহনযোগ্য বলে এর বিস্তাার হয় সহজেই। রংপুর বিভাগের জেলা সমূহে মাদকের বিস্তার অন্যান্য বিভাগের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম হওয়া সত্বেও গত কিছুদিন ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে কিছু দুষ্টু চক্র এর ব্যাপকতা বাড়ানোর চেষ্টা করে আসছে। তাই নির্বাচন পরবর্তী সময়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১৩ মাদক বিরোধী অভিযানে তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘন্টায় র্যাব-১৩ এর ব্যাটালিয়ান সদর, রংপুর, সিপিসি-১, দিনাজপুর এবং সিপিসি-২, নীলফামারী চারটি উল্লেখযোগ্য সফল অপারেশন করেছে।
অদ্য ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ রাত আনুমানিক ০২:৫০ ঘটিকায় ব্যাটালিয়ন সদর, রংপুর এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারি থানাধীন আদিতমারি বাজারস্থ সরকারি আদিতমারি গিরিজা শংকর মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে বুড়িমারি টু রংপুরগামী মহাসড়কের উপর চেকপোষ্ট করাকালীন সন্দেহের ভিত্তিতে একটি ট্রাক চেক করে ১৮৭ বোতল ফেন্সিডিলসহ আসামী মোঃ নবিয়ার হোসেন (৩০), পিতা-মোঃ তোতা মিয়া, সাং-দুরাকুটি, থানা-আদিতমারি, জেলা-লালমনিরহাটকে গ্রেফতার ও একটি ট্রাক জব্দ করে এবং সকাল আনুমানিক ০৬.১০ ঘটিকার সময় রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া থানাধীন বড় রুপাই গ্রামস্থ ধৃত আসামী মোঃ রবিউল এর বসত বাড়ির থেকে ১১.৫ কেজি গাঁজাসহ আসামী মোঃ রবিউল, পিতা-মৃত নাজির হোসেন, সাং-বড় রুপাই, থানা-গঙ্গাচড়া, জেলা-রংপুরকে গ্রেফতার করে।
অপর একটি অভিযানে সিপিসি-২, নীলফামারীর একটি অভিযানিক দল সকাল আনুমানিক ০৬.২০ ঘটিকার সময় লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ থানাধীন মালগাড়া গ্রামস্থ ১নং আসামী পুষ্প চঁন্দ্র বর্মন (৩৮) এর বসত বাড়ির আসামীর নিজ শয়ন কক্ষের খাটের নিচ হতে ১৮৮০ বোতল ফেন্সিডিলসহ আসামী ১। পুষ্প চঁন্দ্র বর্মন (৩৮), পিতা- মৃত তুষ্কা চঁন্দ্র বর্মন, সাং-মালগাড়া এবং ২। মোঃ গোলাপ মোস্তফা, পিতা-মৃত সেকেন্দার আলী, সাং-গোড়ল উভয় থানা-কালীগঞ্জ, জেলা-লালমনিরহাট’দ্বয়কে গ্রেফতার করে। উল্লেখ্য যে, এটি দেশে আটককৃত ফেন্সিটিলের স্মরণকালের অন্যতম বড় চালান।
অন্যদিকে সিপিসি-১, দিনাজপুর এর একটি আভিযানিক দল এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শামছুজ্জামান আসিফ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়, ঠাকুরগাঁও কর্তৃক যৌথভাবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৭/০২/২০২৪ তারখ ২২.৩০ ঘটিকা হতে ০৮/০২/২০২৪ তারিখ ০০.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ঠাকুরগাঁও সদর পৌরসভাস্থ ঠাকুরগাঁও রোড রেল স্টেশনের সামনে ধৃত আসামী রিয়াদ এর কম্পিউটারের দোকানের ভিতর হতে ট্রেনের টিকিট জালিয়াতি চক্রের সদস্য ১। মোঃ ফিরোজ (২৮), পিতা-গনি আহমেদ, ২। মোঃ সুমন (২৮), পিতা-মোঃ ইদ্রিশ আলী, ৩। মোঃ রিয়াদ হাসেন (২৮), পিতা-মোঃ রুস্তম আলী, সর্বসাং- ছিটচিলারং, ৪। মোঃ লাবু (২৮), পিতা-মোঃ আইনুল, ৫। মোঃ সোহরাব (২৬), পিতা-মোঃ জিয়া, ৬। মোঃ লাজু (২৫), পিতা-মোঃ আইনুল, সর্বসাং-ইসলামনগর, সর্বথানা-ঠাকুরগাঁও সদর, জেলা- ঠাকুরগাঁও’দেরকে গ্রেফতার করা হয় এবং জালিয়াতি কাজে ব্যবহৃত ০১টি কম্পিউটার, ০৫টি এ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন এবং অবৈধ ভাবে ট্রেনের টিকিট বিক্রয়লব্ধ নগদ ৩,৮২৫/- টাকা উদ্ধার করা হয়।
ধৃত আসামীগন সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র, তারা দীর্ঘ দিন যাবৎ ট্রেনের টিকিট জালিয়াতি করে আসছে। তারা কম্পিউটার ও মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে অত্যন্ত সুকৌশলে প্রতিটি ট্রেনের বিপুল সংখ্যক সিট কোন অর্থ পেমেন্ট ছাড়াই বুকিং করে রাখে। ফলে ট্রেনের টিকিটে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয় এবং সাধারণ যাত্রীরা অনলাইনে বা টিকিট কাউন্টারে টিকিট ক্রয় করতে গেলে ক্রেতা এবং টিকিট কাউন্টার স্টাফ দেখতে পায় সকল টিকিট বিক্রয় হয়ে গেছে।
পরবর্তীতে যাত্রীরা দালালের মাধ্যমে উক্ত জালিয়াতি চক্রের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বুকিং করে রাখা সীটের আসল অনলাইন টিকিটের মতই নকল টিকিট উক্ত ডিভাইস গুলোর মাধ্যমে তৈরি করে সরকার নির্ধারিত মূল্যেই যাত্রীদের নিকট বিক্রয় করে। ফলে যাত্রীরা বুঝতে পারে না উক্ত টিকিট টি নকল টিকিট, যার কারণে যাত্রীরা নিরাপদেই রেলভ্রমন করতে পারে। ফলে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন যাত্রী পরিবহন করলেও জালিয়াতি চক্রের কৃত্রিম ভাবে বুকিং করে রাখা সীট গুলোর বিপুল পরিমান ভাড়ার অর্থ বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নিকটে না গিয়ে জালিয়াতি চক্রের পকেটে চলে যায়।
উল্লেখ্য যে, গ্রেফতারকৃত আসামীদের ভ্রাম্যমান আদালত শাস্তি হিসেবে ১। মোঃ ফিরোজ (২৮), ২। মোঃ লাবু (২৮), ৩। মোঃ সুমন (২৮), ৪। মোঃ সোহরাব (২৬), ৫। মোঃ রিয়াদ হাসেন (২৮)’গনকে ১৫ দিনের এবং ৬। মোঃ লাজু (২৫)কে ০৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে ঠাকুরগাঁও কেন্দ্রীয় কারাগারে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রংপুর বিভাগের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং মাদকের কালো থাবা থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে র্যাব-১৩ বদ্ধপরিকর। মাদকসহ এই বিভাগের জঙ্গি নির্মূল অভিযান ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে র্যাবের সক্রিয় অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারি, রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া, লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ থানায় র্যাব বাদী হয়ে তিনটি মাদক মামলা রুজু করেছে এবং আসামীদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত