পণ্যবাহী গাড়িতে অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন, বত্রিশ জনকে গ্রেফতার
সড়ক ও মহাসড়কে সবজিসহ অন্যান্য পণ্যবাহী গাড়ি হতে অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলনের সময় ঢাকা, নারায়নগঞ্জ এবং গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান হতে ৩২ জন চাঁদাবাজকে হাতেনাতে বিভিন্ন আলামতসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-১।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে এ পর্যন্ত মাদক ব্যবসায়ী, অপহরণকারী, সন্ত্রাসী, এজাহারনামীয় আসামী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, প্রতারকচক্র, ধর্ষণকারী, পর্ণোগ্রাফি বিস্তারকারী, চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে দেশের সকল শ্রেণীর নাগরিকগণ বাজার করতে গিয়ে দূর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরা সবজি বাজারে অধিক দামে সবজি বিক্রয়ের ব্যাপারে জনমনে অসন্তোষ পরিলক্ষিত হয়। যেখানে পাইকারী বাজার এবং খুচরা বাজারে সবজির মূল্যে তারতম্য দেখা যায়।
পণ্য উৎপাদনের স্থান হতে পাইকারী বাজারে পরিবহনের সময় দেশের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ধাপে ধাপে চাঁদা দেয়ার কারণে পাইকারী বাজারে এসে বেড়ে যাচ্ছে সবজির দাম। যার মাশুল গুনতে হয় সাধারণ ক্রেতাদের। কিছু কিছু স্থানে র্যাব ও ভোক্তা অধিকারের সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সাময়িক সময়ের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্বাভাবিক থাকলেও পরবর্তীতে আবার পূর্বের মত উচ্চ মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগের বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইন ভিত্তিক নিউজের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে পণ্যবাহী পরিবহনে চাঁদাবাজির বিষয়টি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ায় দেশব্যাপী আলোচিত হচ্ছে।
উক্ত জনদূর্ভোগ দূর করার লক্ষ্যে র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানী সহ সারাদেশে র্যাবের বিভিন্ন ইউনিটের গোয়েন্দা দল তাদের নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পাইকারী বাজারসহ বিভিন্ন স্থানের চাঁদাবাজির তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য কাজ শুরুকরে।
এরই প্রেক্ষিতে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উৎপাদনকারীদের নিকট হতে পন্য সামগ্রী সংগ্রহ পূর্বক ট্রাক/পণ্যবাহী যানবাহনে পাইকারী ও খুচরা বাজারে পৌছানোর সময় পথিমধ্যে নামে বে-নামে ভূয়া রশিদ অথবা কখনো কৌশলে বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে বিপুল পরিমান অর্থ চাঁদাবাজি করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকা, রাত ২২.০০ ঘটিকা থেকে ০১.০০ ঘটিকা পর্যন্ত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুর এর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজ চক্রের সক্রিয় সদস্য ১) মোঃ রাকিব হাসান রাব্বি (২০), পিতা- মোঃ জনি, থানা-শ্রীনগর, জেলা-মুন্সিগঞ্জ, ২) মোঃ টুটুল ইসলাম (১৯), পিতা- জহিরুল ইসলাম, থানা-সুন্দরগঞ্জ, জেলা-গাইবান্ধা, ৩) ইমন (১৮), পিতা- ইব্রাহিম মিয়া, থানা-মুরাদনগর, জেলা-কুমিল্লা, ৪) মোঃ ইফসুফ (২২), পিতা- মৃত মান্নান খলিফা, থানা-মির্জাগঞ্জ, জেলা-পটুয়াখালী, ৫) মোঃ জোনায়েত (১৯), পিতা- মোঃ শফিকুল ইসলাম, থানা- নবীনগর, জেলা-বি- বাড়ীয়া, ৬) মোঃ সিয়াম (১৮), পিতা- মোঃ জাহাঙ্গীর, থানা- ভোলা, জেলা- ভোলা,৭) মোঃ হাবিবুল্লাহ (৩৫), পিতা-মোঃ মিলন মিয়া, থানা- নাসির নগর, জেলা- বি-বাড়ীয়া, ৮) মোঃ জিহাদুর রহমান (২৪), পিতা-মোঃ মতিউর রহমান, থানা- চাপাইনবাবগঞ্জ সদর, জেলা- চাপাইনবাবগঞ্জ, ৯) মোঃ জাহিদুল ইসলাম @জাহিদ (২৪), পিতা- মিন্টু মিয়া, থানা-সাভার, জেলা-ঢাকা, ১০) মোঃ আকাশ মিয়া (২৬), পিতা-মৃত বাবুল মিয়া, থানা- রুপগঞ্জ, জেলা-নারায়ণগঞ্জ, ১১) মোঃ নান্নু হোসেন (২৭), পিতা- মো. ফনির হোসেন, থানা- রুপগঞ্জ, জেলা-নারায়ণগঞ্জ, ১২) মোঃ মাসুদ(৪০), পিতা-মৃত আতশ আলী, থানা-কালিয়াকৈর, জেলা-গাজীপুর, ১৩) মোঃ রাজীব সরকার(৩২), পিতা-মোঃ রফিক সরকার, থানা-কালিয়াকৈর, জেলা-গাজীপুর, ১৪) মোঃ জাকির হোসেন(৪১), পিতা-মৃত শাহআলম খোকা, থানা-কালিয়াকৈর, জেলা-গাজীপুর, ১৫) মোঃ আমজাদ হোসেন(৫৫), পিতা-আব্দুল কুদ্দুস, থানা-কালিয়াকৈর, জেলা-গাজীপুর, ১৬) ইসমাইল সরকার(৪২), পিতা-মৃত ইউনুস আলী, থানা-কালিয়াকৈর, জেলা-গাজীপুর, ১৭) মোঃ শাহেদ সরকার(৩০), পিতা-মোঃ লুৎফর রহমান, থানা-কালিয়াকৈর, জেলা-গাজীপুর, ১৮) মোঃ মোস্তফা(৩৫) পিতা-মৃত এংরাজ আলী, থানা-নকলা, জেলা-শেরপুর, ১৯) মোঃ আবুল কালাম(৫০), পিতা-মৃত আব্দুল ওয়াজেদ সরদার, থানা-রাঙ্গাবালী, জেলা-পটুয়াখালী, ২০) সোহাগ মিয়া(৩৭), পিতা-মোঃ হারুনুর রশিদ, থানা-মহনগঞ্জ, জেলা-নেত্রকোণা, ২১) মোঃ মাসুম(৩৫), পিতা-মোঃ হানিফ মির্দ্দা, থানা-গলাচিপা, জেলা-পটুয়াখালী, ২২) মোঃ আনিছ মিয়া(৩৫), পিতা-মৃত রিয়াজ উদ্দিন, থানা-ইসলামপুর, জেলা-জামালপুর, ২৩) মোঃ রাব্বী(১৯) পিতা-মোঃ সুরুজ রহমান, থানা-কালিয়াকৈর, জেলা-গাজীপুর, ২৪) জয়দেবসূত্রধর(২০), পিতা-লক্ষণসূত্রধর, থানাঃ কালিয়াকৈর, জেলা-গাজীপুর, ২৫) মোঃ ফারুক আহম্মেদ (৩৮), পিতা-মোঃ কবির আহম্মেদ, থানা-চৌদ্দ গ্রাম, জেলা-কুমিল্লা, ২৬) মোঃ স্বপন (৪০), পিতা-মৃত ইসমাইল, থানা-হালুয়াঘাট, জেলা-ময়মনসিংহ, ২৭) জুলহাস (৩০), পিতা-মোঃ নয়ন গাজী, থানা-কোতয়ালী মডেল থানা, জেলা-বরিশাল, ২৮) মোঃ মেহেদী হাসান হৃদয় (২৩), পিতা-মোঃ নুরুনবী, থানা-নাঙ্গলকোট, জেলা-কুমিল্লা, ২৯) মোঃ ইব্রাহীম (৪৬), পিতা-মৃত আব্দুল খালেক, থানা-গেন্ডারিয়া, ডিএমপি, ৩০) মোঃ আনোয়ার হোসেন বাবু (৪৫), পিতা-মৃত রুহুল আমিন, থানা-হাইমচর, জেলা-চাঁদপুর, ৩১) মোঃ সবুজ মিয়া (৩৭), পিতা-মৃত তাহের উদ্দিন, থানা-বাজিতপুর, জেলা-কিশোরগঞ্জ, ৩২) মোঃ মনির হোসেন (৩৫), পিতা-মৃত মমতাজ উদ্দিন, থানা-ফরিদগঞ্জ, জেলা-চাঁদপুর’দেরকে গ্রেফতার করা হয়।
এসময় গ্রেফতারকৃত চাঁদাবাজদের নিকট হতে চাঁদা আদায়ের নগদ ১,০২,৮৬৫/- টাকা, ০৬ টি টর্চলাইট, ০৩ টি টার্গেট লাইন, ০১ টি চার্জার লাইট, ২৯ টি চাঁদা আদায়ের রশিদ, ০৪ টি রিফ্লেক্টিং বেস্ট জ্যাকেট, ০২ টি লাঠি, ২৫ টি মোবাইল ফোন এবং ০১ টি হেডফোন উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত চাঁদাবাজির সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি করে। গ্রেফতারকৃতরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতিরাতে বর্ণিত স্থানে বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার উপর অবস্থান নেয়। দেশের বিভিন্ন স্থান হতে পণ্যবাহী যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশের সময় তারা রিফ্লেক্টিং বেস্ট জ্যাকেট, লেজার লাইট, লাঠি ও বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারদের নিকট অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে থাকে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা চাঁদা আদায়ের রশিদও প্রদান করে থাকে। ড্রাইভাররা তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের গাড়ি ভাংচুর, ড্রাইভার-হেলপারকে মারধর সহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। তারা প্রতিটি ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন হতে ২০০-৩০০ টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে। পণ্যবাহী কোন গাড়ি দেখলেই তারা লেজার লাইটের আলো নিক্ষেপ করে তা থামিয়ে কৌশলে বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা আদায় করে থাকে।
বিশেষ করে মধ্য রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যখন পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকা প্রবেশ করে উক্ত সময় সড়কে এমন চিত্র শুরু হয়। উক্ত চক্র ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান হতে প্রতি রাতে পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের নিকট হতে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে বলে জানা যায়।
যারা আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে অবৈধভাবে পণ্য মজুদ করে কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে র্যাব ফোর্সেস এর নির্দেশনাক্রমে র্যাব-১ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
র্যাব ফোর্সেস সম্মানিত নাগরিক সমাজকে আহবান জানাচ্ছে যে, যারা কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের অবৈধ মজুদ করবে তাদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে র্যাবকে সহায়তা করতে, এক্ষেত্রে তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে। গ্রেফতারকৃত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।