ট্রাফিক পুলিশের দেওয়া মামলার আদায়কৃত জরিমানার টাকা নয়ছয়।
গত ১লা এপ্রিল মিরপুর সুলতানপুরের মেহেদী পিতা বাচ্চু তার মোটরসাইকেলের নাম্বার প্লেট, হেলমেট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় মোটরসাইকেল আটক করে মামলা দেয় কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট সুব্রত কুমার, মামলা আইডি – ৯৫৪০০০৯৪৬৬, মোটরসাইকেল আটকের এক দিন পরে গাড়ির কাগজের জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে, গাড়ি ছাড়াতে ট্রাফিক অফিসে তিন মামলার জন্য মেহেদী ৮৫০০ টাকা জমা দেয়। অথচ এই মামলার টাকা ট্রাফিকের রাজস্ব খাতে জমা হয়েছে ২৫০০ টাকা। এমন অসংখ্য টাকা নয় ছয় এর অভিযোগ রয়েছে কুষ্টিয়া ট্রাফিক পুলিশের টিআই ওয়ান ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
কুষ্টিয়া ট্রাফিক অফিসের প্রস্তুতকৃত ডেটাশিট থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলতি মাসের ৯ এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত মোটরসাইকেলে বিভিন্ন ধারায় ১৮০০ এর উপরে মোটরসাইকেল আটক করে কুষ্টিয়া ট্রাফিক পুলিশ। এর মধ্যে লাইসেন্সবিহীন অনটেস্ট মোটরসাইকেল ছিল ৭ শতাধিক। নিয়ম বলছে আটক ঐসব মোটরসাইকেল মালিকরা লাইসেন্স প্রাসঙ্গিক আইনসিদ্ধ কাগজপত্র নির্ধারিত জরিমানা দিয়ে পুলিশের হেফাজতে থাকা মোটরসাইকেল ফেরতে সে আবেদন করবেন। অভিযোগ রয়েছে কুষ্টিয়া পুলিশ অফিসের কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক টিআই ওয়ান ফখরুল ইসলামের জোগসাজশে ২০০০-২৫০০ টাকা সরকারি খাতায় আদায় দেখিয়ে আটক মোটরসাইকেল মালিকদের বাইক ফেরত দেয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। অথচ আটককৃত মোটরসাইকেল মালিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা। অফিশিয়াল ডেটাবেজে মোটরসাইকেল নাম্বার প্লেট সঠিক না থাকা ও আদায়কৃত অর্থের গড়মিল থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে কারন টিআই ২ মেহেদী বলেন অনেক সময় নাম্বার প্লেটের বদলে চেসিস নাম্বার দিয়ে মামলা দেওয়া হয়, এর কারন জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিতে ব্যার্থ হন, আদায়কৃত টাকার হিসাবের গড়মিল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন এই ব্যাপারে আমার ঊর্ধ্বতন আছে তাদের সাথে কথা বলেন আমি জানিনা।
সর্বশেষ চলতি মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত অনটেস্ট মোটরসাইকেলের সাতটা মামলা করে কুষ্টিয়া ট্রাফিক পুলিশ, সেগুলোতেও রাজস্ব খাতায় আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা আদায় দেখানো হয়েছে।
ট্রাফিক পুলিশের সূত্র মতে হেলমেট না থাকার সর্বনিম্ন মামলা ৩০০০ টাকা, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে ৫০০০ টাকা এবং অনটেস্ট গাড়ি কাগজ না থাকলে সেখানে সর্বনিম্ন ১০০০০ টাকা জরিমানা করার নিয়ম আছে। ট্রাফিক অফিসের প্রাপ্ত ডেটা শিটে নাম্বার ছাড়া বাইক হেলমেট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই এমন অহরহর মামলা রয়েছে, যেখানে ১৮ হাজার টাকার মামলার হিসাব থাকে। সেখানে সরকারি খাতায় সর্বনিম্ন ২৫০০ টাকা জমা দেখানো হয়েছে। এমন অনেক ভুক্তভোগীর সাথে কথা হলে তারা জানায় ১২ হাজার থেক ১৫ হাজার ট্রাফিক পুলিশের জমা দিয়ে গাড়ি ছাড়িয়েছেন তারা। অবশ্য পুলিশ বলছে পুলিশ সুপার এর কাছে সুপারিশ গেলে মৌকুফ করার সুযোগ থাকে।
কুষ্টিয়ারের ট্রাফিক পুলিশের এই ধরনের কর্মকাণ্ডে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের অর্থদণ্ড যাচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের ট্রাফিক বিভাগ বিপুল পরিমাণে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মোটরসাইকেল ছাড়াও অবৈধ যানবাহন মহাসড়কের চলাচল নিষিদ্ধ থাকলে সেগুলো ট্রাফিক অফিসের সামনে দিয়ে দিনে দুপুরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, সেখান থেকেও মোটা অংকের চাঁদা নিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে ট্রাফিক অফিসের বিরুদ্ধে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শহরের হাউজিংয়ে কুষ্টিয়া ট্রাফিক পুলিশের টিআই ওয়ান ফখরুল ইসলামের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের পাঁচতলার বাড়ি রয়েছে।
মুঠোফোনে কুষ্টিয়া ট্রাফিকের টিআই ওয়ান ফখরুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি এসব ব্যাপারে কথা এড়িয়ে যান, তিনি বলেন এগুলো মোবাইলে বলে বোঝানো যাবে না, আপনি অফিসে আসেন অফিসে আসলে আপনাকে সামনাসামনি বুঝিয়ে বলতে পারব। ট্রাফিক পুলিশের টাকা নয় ছয় এর ব্যাপারে জানতে চাইলেও তিনি বলেন অফিসে আসেন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) পলাশ কান্তি নাথকে মোবাইলে ফোন দিলে তিনি বলেন, এগুলো আপনারা যাচাই করেছেন আপনারাই বলতে পারবেন এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। আপনি ট্রাফিক বিভাগের দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আছি আবার নাইও।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত