এবার কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামরা) আসনে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। মহজোটের কারণে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের উপর ভর করে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সহজে পার হয়েছেন চচইনু। এবার তার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন মিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আচরেফিন।
কুষ্টিয়া-২, মিরপুর-ভেড়ামারা আসনে এবার জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে লড়বেন সদ্য পদত্যাগী মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ একাধিকবার ইনুকে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী করে বক্তব্য দেন।
ইনুও অস্বীকার করে পাল্টা বক্তব্য দেন, উ
জোটের সঙ্গে আসন বন্টনের পরে সেখানে এবারও নৌকা তুলে দেওয়া হবে ইনুকে। অন্যদিকে নৌকা পেতে জোর চেষ্টা করছেন কামারুল আরেফিন। তিনি সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
যে কয়েকবার ইনু এমপি হয়েছেন, তার তুলনায় এবার ঐ আসনে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। মহাজোটে থাকলেও স্থানীয় রাজনীতিতে এখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইনুর দল জাসদের
দা- কুড়াল সম্পর্ক। ক্ষমতাসীন হয়েও এ আসনে জাসদের নেতাকর্মীদের কাছে বহুবার আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী মারধরের শিকার হয়েছেন, হত্যার শিকার হয়েছেন চারজন। অন্যদিকে মহাজোটের মন্ত্রী হয়ে ইনু বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে লাগাতার মানহানিকর, উস্কানিমূলক কথা বলায় বিএনপি নেতাকর্মীদেরও নজরে রয়েছেন। এই আসনটি আগে বিএনপির দখলে এবং দুটো উপজেলাতেও তাদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। দীর্ঘ নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েও এখনও এখানে বিএনপি জামায়াতের প্রভাব রয়েছে। এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না, ফলে আওয়ামী লীগ ও জাসদের নেতাকর্মীদের বাইরে সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে গেলে হিসাব পাল্টে যেতে পারে।
হাসানুল হক ইনু জাতীয় রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকায় এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ কম। এই দুই উপজেলার উন্নয়ন নিয়েও মানুষের ক্ষোভ আছে। অন্যদিকে কামারুল আরেফিন নিজের মিরপুর উপজেলার বাইরেও কুষ্টিয়া জেলাজুড়ে পরিচিত মুখ। তিনি সার্বক্ষণিক এলাকার নেতাকর্মীদের নিয়েই থাকেন। সদর এমপির বিশেষ আস্থাভাজন হিসেবে মিরপুর-ভেড়ামারাতে তার বিশেষ প্রভাব রয়েছে।
এই আসনে হাসানুল হক ইনু মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি জানান, বিগত তিনটি নির্বাচনে আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করে আসছি। এবারও জোটগতভাবে আমি প্রার্থী হবো। কুষ্টিয়া-২ আসনে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে মনোনয়ন ফয়সা হলে সবাইকে নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামব।
তিনি বলেন, এবার নির্বাচন হবে উৎসবমুখর ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে আসবে। মনোনয়ন যে কেউ তুলতে পারবে, তবে শেষ পর্যন্ত দেখতে হবে কি হয়।
অন্যদিকে, মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে কামারুল আরেফিন জানান, আমাদের দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচন উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে হবে। তাই আমি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে জনতার কাতারে চলে এসেছি। জাসদ নেতা ইনু সাহেব আওয়ামী লীগের ৮০ ভাগ ভোটের ওপর ভর করে বিগত তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছে। ওনার ২০ ভাগ ভোট নিয়ে এবার নির্বাচন করতে হবে। তিনি বলেন, তার (ইনুর) সময় মিরপুর ভেড়াম- ারায় আওয়ামী লীগের ৪ জন নেতাকর্মী হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাই তাকে আর এমপি হিসেবে দেখতে চায় না। দুই উপজেলার নেতাকর্মীরা মুখিয়ে আছে আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য। নেতাকর্মী ছাড়াও দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের নেতা আমি, আমি জনগণের সঙ্গে থাকতে চাই।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার গোলাপনগর গ্রামে ১৯৪৬ সালের ১২ নভেম্বর জন্ম নেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর সভাপতি
হাসানুল হক ইনু। তিনি ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কা নিয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা-মিরপুর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ সাল থেকে ৭ জানুয়ারি ২০১৯ সাল পর্যন্ত মহাজোট সরকারের তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ইনুকে আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসাবেও বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। ইনু মহাজোটের মন্ত্রী হয়ে গাড়িতে পতাকা নিয়ে ঘুরলেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তাকে ভালোভাবে নেননি। ২৭ আগস্ট ২০২১ খ্রিস্টাব্দে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং দলটির প্রয়াত নেতা কর্নেল তাহেরও জড়িত বলে সরাসরি অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। রাজধানীর তোপখানা রোডে বিএমএ ভবনে এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে এই অভিযোগ করেন শেখ সেলিম। ঐ বছরের ৩০ আগস্ট আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ শেখ সেলিমের বক্তব্যকে সমর্থন করে অন্য একটি অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের জন্য ইনুকে দায়ী। করেন। দৈনিক সমকালসহ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় সে খবর ছাপা হয়।
অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইনু বরং শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে শেখ সেলিমকে নিয়ে নানা কথা শুনিয়ে দিয়েছেন। দাপটের সঙ্গে তিনি মহজোটে এখনও আছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত