১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সব সময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। সৃষ্টিকাল থেকে এলিট ফোর্স র্যাব জঙ্গি, মাদক ব্যবসায়ী, অপহরণকারী, ছিনতাইকারী, মানবপাচারকারী, প্রতারক, চাঁদাবাজ, বিভিন্ন মামলার আসামী, শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
২। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম আরসা সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। এই সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা’সহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিদ্যমান অন্যান্য সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো আধিপত্য বিস্তার ও রোহিঙ্গা নাগরিক প্রর্ত্যাবাসনে বিঘ্ন ঘটানোর নিমিত্তে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ তৈরী এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের শরণার্থী শিবির ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, অগ্নি-সংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। এছাড়াও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে গিয়ে চোরাগুপ্তা হামলা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে। যার কারণে শরণার্থী শিবির ও স্থানীয় এলাকায় সবসময় আতংক বিরাজ ও জনসাধারণ ভীত সন্ত্রস্ত থাকে।
৩। র্যাব বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করে আসছে। সন্ত্রাস বিরোধী বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে আরসার সামরিক কমান্ডার হাফেজ নূর মোহাম্মদ/ অর্থ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস/ গান কমান্ডার রহিমুল্লাহ @ মুছা/ অর্থ সমন্বয়ক মোহাম্মদ এরশাদ @ নোমান চৌধুরী ও আবু তৈয়ব/ কিলার গ্রুপের প্রধান নূর কামাল @ সমিউদ্দিন/ ইন্টেলিজেন্স সেল এর কমান্ডার ওসমান গনি র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। এছাড়াও লজিস্টিক শাখার প্রধান, গান গ্রুপের প্রধান, প্রধান সমন্বয়ক, অর্থ শাখার প্রধান, আরসা প্রধান নেতা আতাউল্লাহর দেহরক্ষী আকিজ এবং মৌলভী অলি আকিজ’সহ সর্বমোট ১১৭ জন আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাদের নিকট থেকে ৫৩.৭১ কেজি বিস্ফোরক, ০৫টি গ্রেনেড, ০৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরী হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৪টি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৬টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১৭৮ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ০৪টি আইডি ও ৪৮টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।
৪। র্যাব-১৫, কক্সবাজার দায়িত্বাধীন এলাকায় ক্রমাগত সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনার ফলশ্রুতিতে আরসা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর শীর্ষ কমান্ডারদের গ্রেফতারসহ বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব গোয়েন্দা সূত্রে তথ্য পায় যে, কক্সবাজারের উখিয়ার ১০নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসার কতিপয় সদস্য নাশকতার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশে হতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্র নিয়ে এসেছে। এ সূত্র ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে উখিয়ার ১০নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পালায়নের চেষ্টাকালে আরসা সন্ত্রাসী মোঃ জাকারিয়া (৩২), পিতা-মৃত আলী জোহর, মাতা-মৃত নুর নাহার, সাং-ক্যাম্প-১০, ব্লক-এফ/১৭, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প, উখিয়া, কক্সবাজার’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
৫। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিক এবং সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার গান গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করতো। ঘটনাস্থলে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে স্বীকার করে যে, কিলিং মিশনে ব্যবহৃত অস্ত্র পালংখালী ইউনিয়নের ঘাটি বিলে লুকিয়ে রেখেছে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আরসা সন্ত্রাসীকে নিয়ে র্যাবের আভিযানিক দল বর্ণিত স্থানে যায় এবং সেখানে থেকে পার্শ্ববর্তী দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ০১টি জি-৩ রাইফেল ও ০৫ রাউন্ড তাজা এ্যামুনিশন উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
৬। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, গ্রেফতারকৃত জাকারিয়া ২০১৭ সালে সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে বাংলাদেশে প্রবেশ এবং ক্যাম্প-১০ এ সপরিবারে বসবাস শুরু করে। পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকালে আরসার শীর্ষ কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি’র সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং আরসায় যোগদান করে। বাংলাদেশে প্রবেশের প্রথম দিকে সে আরসার নেট দল অর্থ্যাৎ সংবাদদাতা এবং পরবর্তীতে গান গ্রুপের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করে। এরপর ২০২৩ সালের শেষের দিকে সে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১০ এর ব্লক-এফ/১৭ এর ব্লক কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পায়। এ সময় তার নেতৃত্বে আরসার অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপহরণ, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্য পরিচালনা হতো।
৭। ২০২২ সালে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় আরসা সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর ক্যাম্প এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করলে সে পালিয়ে পুনরায় পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যায়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং গান গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন কিলিং মিশন ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে। সে অস্ত্র চালনায় দক্ষ হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংগঠিত বিভিন্ন নাশকতা, মারামারি, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী, অপহরণ, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করতো বলে জানায়।
৮। সাম্প্রতিক সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশে সৃষ্ট সংঘর্ষে লুন্ঠিত অস্ত্র আরসা সন্ত্রাসীরা অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করতো এবং বিভিন্ন মাধ্যম বাংলাদেশে নিয়ে আসতো। পরবর্তীতে এই অস্ত্র গ্রেফতারকৃত জাকারিয়া তার নিকট গচ্ছিত রাখতো। অতঃপর ক্যাম্প-১০ এর আরসা কমান্