খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার গাড়ীটানা বাজারে বুধবার আগুনে চারটি দোকান পুড়ে যায়। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ও স্থানীয়দের সহায়তায় প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত সাড়ে ১০টা দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১০ লাখ টাকা হতে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা হলেন- তেল ও গ্যাস বিক্রেতা মো. জসিম উদ্দীন, হার্ডওয়্যার দোকানদার মো. রবিউল ইসলাম সবুজ, মোবাইল দোকানদার আল-আমিন, মুরগি বিক্রেতা বাদল ত্রিপুরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের গাড়ীটানা বাজারের তেল ও গ্যাস ব্যবসায়ী মো. জসিম উদ্দীন বিদ্যুৎ চলে গেলে তার দোকানে মোমবাতি জ্বালিয়ে পাশের দোকানে যান। হঠাৎ করে তার দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে মূহুর্তের মধ্যে পুরো দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। এতে চারটি দোকান পুড়ে যায়। খবর পেয়ে ফটিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নিয়ন্ত্রণে ফটিকছড়ি ফায়ার সার্ভিস থেকে আসা তিন কর্মীকে স্থানীয়রা মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেন লক্ষ্মীছড়ি ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিক আহম্মদ।
তিনি জানান, যেহেতু লক্ষ্মীছড়ি থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল গাড়ীটানা এলাকা পার্শ্ববর্তী ফটিকছড়ি ফায়ার স্টেশনের কাছাকাছি বা যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। তাই খবর পেয়ে প্রথমে পার্শ্ববর্তী ফটিকছড়ি উপজেলার ফায়ার স্টেশনকে অবগত করলে তারা ১৭ মিনিটের মাথায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে। খালি ট্যাংক নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে মারধর করে। এতে মো. মনির হোসেন (২১), হৃদয় (২১) ও লিমন (২২) নামের ফায়ার সার্ভিসের তিন কর্মী আহত হন। বর্তমানে তারা ফটিকছড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তিনি আরো জানান, ফটিকছড়ি যেহেতু জনবহুল এলাকা সেহেতু সেখানে সবসময় পানি ভর্তি ট্যাংক রাখতে হয়। কেননা যেকোনো সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তাই খালি ট্যাংক নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পানি সরবরাহ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করার উদ্দেশ্য দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন তারা। যদিও মানিকছড়ি উপজেলা তাদের অধীনে নেই। তারপরও তাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তবে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের মারধরের ঘটনা সত্যি দুঃখজনক বলে তিনি মনে করেন। অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করেন বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গির আলম। তবে মারধরের ঘটনায় কারা জড়িত রাতের অন্ধকারে সেটি নিশ্চিত করতে পারেননি।
আগুনের সূত্রপাত হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত মো. জসিম উদ্দীন বলেন, কারেন্ট চলে গেলে মোমবাতি জ্বালিয়ে পাশের দোকানে গেলে হঠাৎ দোকানে আগুন দেখতে পাই। মূহুর্তের মধ্যে কীভাবে কি হয়ে গেল তা বুঝতে পারছি না। এতে নগদ ৩ লাখ টাকা ও অন্যান্য মালামালসহ প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ক্ষতিগ্রস্ত আরেক বেকারি ব্যবসায়ী রাজু জানান, অগ্নিকাণ্ডের সময় আমি চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম শহরে ছিলাম। সেখান থেকেই রাতে দোকানে আগুন লাগার খবর পাই। সকালে এসে দেখি সব শেষ! দোকানে জমি বিক্রির ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও অন্যান্য মালামালসহ প্রায় ৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে তার দাবি।
ঘটনার পরপরই মানিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা সাদিয়া নূরীয়া, জেলা পরিষদ সদস্য মো. মাঈন উদ্দিন, ওসি মোহাম্মদ ইকবাল উদ্দিন, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
প্রায়শই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী ও পরিবার। কিন্তু এখন পর্যন্ত অত্র উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণ কাজের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দ্রুত মানিকছড়িতে একটি ফায়ার স্টেশন নির্মাণের দীর্ঘদিনের দাবি উপজেলাবাসীর।
তবে জমি সংক্রান্ত জটিলাতর কারণে দীর্ঘদিন আটকে থাকা ফায়ার স্টেশনের কাজ আগামী অর্থবছরের দিকে শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন মানিকছড়ির দায়িত্বে থাকা লক্ষ্মীছড়ি ফায়ার স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিক আহম্মদ।