দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র দুই মাস। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের টিকিট কারা পাচ্ছেন এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানামুখী জল্পনা-কল্পনা।
তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্পষ্ট বার্তা, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যেসব এমপি, মন্ত্রী ও দলীয় নেতা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে দলকে বিপদে ফেলছেন তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। দলের সভাপতির এ বার্তা বাস্তবায়ন গত মাস থেকেই শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় শতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীকে মনোনয়ন নিশ্চিত করে নির্বাচনি মাঠে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি মাসে আরও শতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর মনোনয়ন নিশ্চিত করা হবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা এমনটাই জানিয়েছেন।
মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা জানান, দলের মধ্যে যারা বিতর্কিত এমপি, মন্ত্রী রয়েছেন তাদেরকে বাদ দিয়ে সেই আসনে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিকে মনোনয়নের বার্তা দেবে আওয়ামী লীগ। এসব কারণে দলীয় মনোনয়নের বার্তার অপেক্ষায় বহু এমপি ও মন্ত্রী দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। বিতর্কিত এমপিদের রাখা হয়েছে লাল তালিকায়। এছাড়া এসব আসনে অর্থাৎ বিতর্কিত এমপিদের স্থানে রাখা হয়েছে একাধিক প্রার্থী। তাদের মধ্যে বিভিন্ন জরিপ রিপোর্ট দেখে জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে মনোনয়ন দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এজন্য দলীয় সাংগঠনিক রিপোর্ট ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে দলীয় প্রধান তথ্য সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে।
মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা আরও জানান, টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আছে দল। অথচ এই অনুকূল সময়কে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলকে আগের চেয়ে শক্তিশালী করতে পারেননি অনেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতা। তাদেরকেও মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এছাড়া সরকার দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি করলেও সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যারা উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদেরকেও মনোনয়ন দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপিকে আর ছাড় দেওয়া হবে না। এ জন্য দুই ফরম্যাটে তৈরি নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচনে এলে কী করণীয়, আর না এলে কী করণীয়- এসব ভেবে আওয়ামী লীগ দুই কৌশলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রতিটি বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছেন। নির্দেশনা মতো প্রতিটি বিভাগের জেলা পর্যায়ে আসনভিত্তিক রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। অনেক রানিং এমপি, মন্ত্রী, দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বিশেষ করে বিতর্কিত এমপি ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সাংগঠনিক রিপোর্ট পরিবর্তন করার সুপারিশ করলেও সাংগঠনিক সম্পাদকরা তা করেননি। প্রতিটি আসনের এমপি, মন্ত্রী মনোনয়ন প্রত্যাশীর কর্মফল তুলে ধরা হয়েছে সাংগঠনিক রিপোর্টে। যারা ইতোমধ্যে বেফাঁস কথাবার্তা, দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি, সাংগঠনিক কাজে নিষ্ক্রিয় ও নানা কর্মকাণ্ডে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন তাদের সব তথ্যই রিপোর্টে উঠে এসেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রতিটি আসনের হালচাল দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতাদের কাছে মৌখিকভাবেও শুনেছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন এলাকায় যাদের জনপ্রিয়তা আছে, গ্রহণযোগ্যতা আছে এমন ব্যক্তিদের দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। যারা দলের নীতি-আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ড করে দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন, বিভিন্ন অপকর্ম করেছেন, তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন-অগ্রগতিতে দেশের মানুষ খুশি। তাই মানুষ যাকে চায় এবং জনপ্রিয়তা দেখেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আমির হোসেন আমু ঢাকা টাইমসকে বলেন, দলীয় মনোনয়ন দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এলাকায় জনপ্রিয়তা দেখে যাচাই-বাছাই করে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত