অথই নূরুল আমিন
গত ৫৩ বছরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে এক অরিকল্পিত ঢাকা। সেই ঢাকা আজকে সর্বক্ষেত্রে অপরিকল্পিত শহর। যেখানে একসাথে বহু সমস্যা, যেমন : যানজট, ধোলাজট, সন্ত্রাস এবং মানুষ জটের এক মহানগরীতে পরিণত হয়েছে আজ। আজকে ঢাকা শহরে রিকশা ড্রাইভার গণ তাদের অধিকার আদায়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিক্ষোভ করছেন।
আমরা যদি একবার মানবিক ভাবে চিন্তা করি, তাহলে আজকের সমাজে, সবচেয়ে কষ্টের মাঝে জীবনযাপন করছেন, একমাত্র রিক্সা ভ্যান এবং নিত্য আয়ের শ্রমিকেরা। যেমন, কাঠ মিস্ত্রি, রং মিস্ত্রি, রাজ মিস্ত্রি সহ ইত্যাদি নিত্য পেশা বা নিম্ন আয়ের শ্রমিকগণ। আজকে আকাশ ছোঁয়া নিত্য পণ্যের দাম। নিত্য পণ্য কেনাকাটার সাথে, তাদের ছয়শ থেকে আটশত টাকা দৈনিক রোজগার। এ যেন সাঁতারে পানি পিপাসার সমান।
গত ৫৩ বছর ধরে অপরিকল্পিত রাজনীতির কারণে, ঢাকা শহরে অসংখ্য খাল, নালা পতিত জলাশয়, সব দখল হয়েছে গেছে বিভিন্ন ভাবে । রাজনৈতিক নেতারা, বড় ছোট আমলা, তারা প্রায় সবাই ঢাকা শহরে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। এক শ্রেণির অসাধু হাউজিং ব্যবসায়ীর কারণে, ঢাকা সংলগ্ন শতাধিক নতুন হাউজিং গড়ে উঠেছে । চারপাশের সকল জনগণ সকাল হলেই সবাই ঢাকা শহরের ভিতরে বিভিন্ন কারণে প্রবেশ করছেন। বতর্মানে সকাল ৮ ঘটিকা থেকে রাত ১০ ঘটিকা পযর্ন্ত, দির্ঘ যানজট লেগেই আছে প্রতিনিয়ত । এই যানজট আসলে একদিন বা দুদিনে সৃষ্টি হয়নি। তা দির্ঘদিনের অগোছালো মনোভাব থেকে আজকে সারা মহানগরী এককথায় অচল।
এই ধরনের যানজটের জন্য সবার আগে দায়ী, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( রাজউক ) নামের অর্থলোভী এই প্রতিষ্ঠানটি। তারা একটি নগরী, কোনো রকম গবেষণা ছাড়াই চালিয়ে গেছেন অন্ধের মতো। আর কামিয়ে নিয়েছেন শত সহস্র কোটি টাকা। যত্রতত্র বাড়ি নির্মাণ, মার্কেট নির্মাণ, ঢাকা সংলগ্ন বেড়িবাধের পাড় ঘেসে, নতুন হাউজিং এর অনুমতি প্রদান । এমনকি ঢাকার ভিতরের জলাশয়, ডুবা ও খাল পযর্ন্ত রাজউকের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা বিক্রি করে দিয়েছেন । এই ধরনের খাল, জলাশয় ডুবা বিক্রি ও ভরাটের সাথে জড়িত রয়েছেন। ঢাকা জেলার সাবেক ডিসিরা সহ ডিসি অফিসের শতাধিক অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
ওরা যেন রক্ষক সেজে, ভক্ষকের ভূমিকা, কেউ কেউ রাক্ষসের ভূমিকা পালন করেছেন । এক কথায় দায়িত্ব নিয়ে কেউ কাজ করেননি। ঢাকার জলাশয় ডুবা ও খাল গুলো যদি কখনও ভরাট না হতো। জনগণের দখলে এই সরকারি সম্পত্তি যদি কখনও না যেত, তাহলে ঢাকা শহর, এত তাড়াতাড়ি এত মানুষের বসবাস কখনও হতো না। যাক সে কথা, ঢাকা শহর যানজট মুক্ত করতে এখন থেকে নতুন ভাবে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারলেও। সামনে এর সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অনেক ।
১. নতুন বাড়ি নির্মাণ দু বছরের জন্য
বন্ধ করতে হবে।
২. ঝুকিপূর্ণ বিল্ডিং গুলো বসবাস অযোগ্য ঘোষণা সহ সীলগালা করতে হবে।
৩. শহরের লোকাল বাস, কুরিয়ার ও ট্টান্সপোর্ট গাড়ীগুলো রাখার জন্য অত্যাধুনিক জাম টু ওয়ে ডে নাইট পার্কিংয় তৈরি করতে হবে।
৪. দূরপাল্লার বাস ষ্টেশন শহরের বাহিরে নির্মাণ করতে হবে।
৫. ঢাকা শহরের সকল প্রবেশ মুখে টাইম টু টাইম টানাগেট তৈরি করতে হবে।
৬. ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা আজ থেকে ছয় মাস অথবা এক বছর মেয়াদ দিয়ে। সকল ব্যাটারী চালিত অটোরিকশার অঞ্চল ভিত্তিক চলার অনুমতি দেয়া। যার অর্থ হবে এর পর ঢাকা শহরে আর অটোরিকশা চলবে না।
৭. পায়ে টানা রিক্সা দুই বছরের মেয়াদ দিয়ে সরাসরি কার্ড প্রেরণ করা। যার অর্থ হবে এর পর ঢাকা শহরে আর পায়ে টানা রিক্সা চলতে পারবে না।
৮. সিএনজি কে দু ভাগে ভাগ করে চিহ্নিত করতে হবে। ঢাকা শহরের অনুমোদিত সিএনজি ৬০% চলবে দিনে এবং ৪০% চলবে রাতে।
৯. ভাড়ায় চালিত মটরসাইকেল ঢাকা শহরে চলার যাদের অনুমতি রয়েছে। এখানে দিনে ৬৫% এবং রাতে ৩৫% মটরসাইকেল চলাচল করার জন্য আইন করতে হবে।
কথা থাকে যে, ঢাকা শহরে বর্তমানে কোনো রিকশা যদি একবারেই না চলে তাতেও জনগণের তেমন কোনো সমস্যা হবে না। আর দু বছর যদি এই রিকশা একদম সময় বেধে উঠিয়ে দেয়া হয়। তাতেও কারো কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয়না। আজকে যারা অটোরিকশা ও পায়ে টানা রিকশা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা সরকারের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে জেলা উপজেলা অথবা উপ – শহরে চলে যাবেন।
শেষ কথা হলো, শক্তিশালী ভূমিকা নিয়ে ঢাকা শহর যেকোনো মূল্যে যানজট মুক্ত করতেই হবে। তা না হলে সমগ্র দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল করা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।
অথই নূরুল আমিন
কবি কলামিস্ট ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানী
২৩. ১১. ২০২৪