কুষ্টিয়ায় দুই এমপিও ভুক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক একই ব্যক্তি, সরকারী অর্থ লোপাটের অভিযোগ
কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের ওয়াশী গ্রামের বাসিন্দা ওয়াহিদ-উজ-জামান। তিনি ১২ নভেম্বর ২০১৫ ইং সালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বারাহাটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গণিত) ও ২০১৬ সালের ২ মে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কালীগঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তবে শিক্ষা অধিদপ্তরের ব্যানবেইসে ১৯৯৬ সাল থেকে কালীগঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গণিত) হিসেবে এই শিক্ষককে নিয়োগ দেখানো হয়েছে।
একাধারে খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের আলাদা আলাদা দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষক এই ওয়াহিদ উজ জামান যোগদানের পর থেকেই দুই বিদ্যালয়ের সরকারী বেতন উত্তোলন করে আসছেন। জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকের এমন অনিয়ম দুর্নীতি কর্মকাণ্ডে নানা মহলে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, বারাহাটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গনিত) ওয়াহিদ-উজ-জামান ১০ম গ্রেডে বেতন তুলছেন। তার ইনডেক্স নং এন-১১২৯৯। অক্টোবর ২০২৩ সালের এমপিও শিটে তার সরকারী অংশের বেতন ২১হাজার ৮শ ৯৭ টাকা। এই বিদ্যালয়ের বেতনের টাকা তিনি জনতা ব্যাংক লোহাগাড়া শাখা হতে গ্রহণ করতেন। ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর সর্বশেষ এই একাউন্ট থেকে বেতনের টাকা উত্তোলন করেন তিনি। যার হিসাব নং-৩৪০৮১২৩৬। শিক্ষক ওয়াহিদ-উজ-জামান চট্টগ্রামের বারাহাটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চাকুরী থেকে অব্যাহতি না নিয়ে নিজ জেলা কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কালীগঙ্গা বাঁধবাজার নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এই বিদ্যালয়ে অবৈধ পন্থায় নিয়োগ গ্রহনের বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন পরবর্তী পর্বে।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলছেন, শিক্ষক জাতি গড়ার কারিগর। সেই শিক্ষক যদি দূর্নীতি গ্রস্থ হন তার থেকে শিক্ষার্থীরা কি শিখবে। আমরা সকল দূর্নীতি গ্রস্থ শিক্ষকের বিচার চাই।
এ প্রসঙ্গে কালীগঙ্গা বাঁধবাজার নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি মহাব্বত হোসেন (বিষ্ণু) জানান, প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার স্বার্থে একজন ভালো প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া দরকার ছিলো। তাই তাকে ব্যাকডেটে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, এভাবে প্রতিটি বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। আপনার বক্তব্য এভাবেই দেব কি না? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সরাসরি আপনার অফিসে এসে কথা বলবো।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদ-উজ-জামান জানান, ২০১৬ সালে কালীগঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেন।
ওয়াহিদ-উজ-জামান নামের এই শিক্ষক একাধারে চট্টগ্রাম বারাহাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও বাঁধবাজার কালীগঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্বরত রয়েছেন। প্রতি মাসে দুই বিদ্যালয় থেকেই সরকারী অর্থ লোপাটের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন নিজের বেতন। জাতি গড়ার কারিগরের এমন কর্মকাণ্ডে হতাশ জনসাধারণ।
তিনি। বারাহাটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও শিক্ষক ছিলেন তিনি। একই জন কিভাবে দুই জায়গায় শিক্ষকতা করেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই সাক্ষাতে কথা বলি।
বারাহাটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক লুকমান হাকিম জানান, ওয়াহিদ-উজ-জামান এখন পর্যন্ত তার বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গণিত) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কুষ্টিয়ায় তিনি নিয়োগ নিয়েছেন সেটা তাদের জানা নেই। এমনকি বিদ্যালয় থেকেও ছাড়পত্র নেয়নি ওয়াহিদ-উজ- জামান। তবে তিনি বিদ্যালয়ে বেশকিছুদিন যাবৎ অনুপস্থিত রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এজাজ কাইছার জানান, আমি আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। একটু সময় লাগবে, জেনে শুনে তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।