খালিদ হাসান সিপাই, কুষ্টিয়া:
একদিকে গ্রীষ্মের প্রচন্ড খরতাপে পুড়ছে দেশ। অপরদিকে ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে খাল-বিল জলাশয় পানিশূন্য হওয়ায় কুষ্টিয়ায় মাছের উৎপাদন দারুণভাবে হ্রাস পেয়েছে। কুষ্টিয়ায় ২০ লাখ লোকের চাহিদার তুলনায় মাছের উৎপাদন না হওয়ায় মাছের সংকট দেখা দিয়েছে হাট-বাজারে। হাট-বাজারে সামান্য মাছ উঠলেও তার দাম আকাশচুম্বী। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের কাছে মাছ ভাতের চিন্তা আকাশ কুসুম হয়ে উঠেছে। জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে দিন দিন বেড়েই চলেছে মাছের চাহিদা। কিন্তু সে অনুসারে মাছ উৎপাদন হচ্ছেনা। মাছ উৎপাদনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কুষ্টিয়ায় মাছের উৎপাদন কম হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় মাছের উৎপাদন কম হওয়ায় কুষ্টিয়ার হাট-বাজারগুলোতে মাছের দাম বেড়েই চলেছে। মাছ কেনা নিম্নবিত্ত পরিবারের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
“মাছে ভাতে ভাঙালী” এ বাক্যটি এখন শুধু প্রবাদ বাক্যেই পরিণত হয়েছে। মাছের চাহিদা থাকলেও নানান সমস্যার কারণে মাছের উৎপাদন কম হচ্ছে। ফলে প্রতিবছরই মাছের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে কয়েক হাজার টন। জেলা মৎস্য অফিসসূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় ২ হাজার খাল, বিল, হাওড়-বাওড়, পুকুর দীঘি, ডোবা-নালা, নদ-নদী। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৮শ’ ৩১টি পুকুর, ৩৯ টি বিল, ৮টি দীঘি, ৩টি বাওড়, নদী ৮টি, বেসরকারি কার্প নার্সারীর সংখ্যা ৮৯ টি, হ্যাচারীর সংখ্যা ২০টি, সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদনকারী খামারের সংখ্যা ৪টি।
জেলার এ সকল জলাশয়ে মাছ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা ও অনুকুল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও পানির অভাবে ও পরিকল্পনা মাফিক মৎস্য চাষ না করায় কুষ্টিয়া জেলায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছেনা।
জেলায় দিন দিন মাছের চাহিদা বেড়েই চলেছে। এ জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের চাহিদা অনুসারে মাছের চাষ ও উৎপাদন একেবারেই কম। বাৎসরিক মাছের চাহিদা ২৯ হাজার মেঃটন। সে তুলনায় চাহিদার তুলনায় প্রতি বছর উৎপাদন হচ্ছে ১৫ হাজার মেট্টিক টন। ঘাটতি থাকছে ১৪ হাজার মেঃটন। মাছ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কুষ্টিয়ার জলাশয়গুলোতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছেনা। ফলে একদিকে মাছের যেমন ঘাটতি অপরদিকে কর্মবিমুখ হয়ে পড়েছে জেলেরা।
কুষ্টিয়া জেলায় মাছের বাড়তি চাহিদা পূরণ করতে বাইরে থেকে মাছ আমদানি করতে হচ্ছে। মাছের চাহিদা বেশি থাকায় জেলার সকল হাট-বাজারে দাম বেড়েই চলেছে। কোনক্রমেই মাছের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। নিম্নবিত্ত মানুষের মাছ কেনা ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে নদীনালা খাল-বিলে পানি থাকায় মৎস্য আবাদের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মৎস্য খামারগুলো বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছে। মাছের এ সমস্যা সমাধানে সর্বপ্রথম ফারাক্কার পানি সমস্যার সমাধান করা জরুরি দরকার বলেও পরিবেশবিদরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
কুষ্টিয়া চাহিদার তুলনায় মাছের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে হাওড়, বাওড়, নদী নালা খাল বিলে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যে পোনা অবমুক্ত করাসহ বিভিন্ন কর্মর্সচী পালন করছে মৎস্য বিভাগ। এগুলো বাস্তবায়ন হলে কুষ্টিয়া জেলায় মাছের উৎপাদন দ্বিগুন বাড়বে বলে মত দিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা।
জলাশয়ে অবাধে মাছ ধরা, জমিতে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার, রাসায়নিক সারের ব্যবহারে মাছের বংশ ধবংস হচ্ছে। দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এগুলো রক্ষা করা গেলে কিছুটা মাছের উৎপাদন বাড়বে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান।
কুষ্টিয়ায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে প্রয়োজন পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা। এছাড়াও কুষ্টিয়া জেলায় মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যে জলাশয়ের সুষ্ঠু ব্যবহার, জলাশয় মালিকদের মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করাসহ আধুনিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান দিয়ে মৎস্য জীবীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করলে এ জেলায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে অভিজ্ঞ মৎস্যচাষিরা অভিমত প্রকাশ করেন।