পেঁয়াজ দাম বাড়ায় চাষে আগ্রহ বাড়ছে কুষ্টিয়ার কৃষকদের
দাম বাড়ায় পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের চারা রোপণের ধুম পড়েছে। দিনরাত একাকার করে পেঁয়াজের চারা নিয়ে ব্যস্ত সময় পারছেন কৃষকরা।
চাষিরা জানান, ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দাম নিয়ে মিলন ছিলেন চাষিরা। তবে অসময়ে বাজারে চড়া দামে পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ায় বেজায় খুশি তারা। সে জন্য অতীতের তুলনায় অধিক জমিতে পেঁয়াজের চাষাবাদ শুরু করেন। কিন্তু এ বছর পেঁয়াজ চাষে বিঘাপ্রতি খরচ বেড়েছে পাঁচ- সাত হাজার টাকা। জমিচাষ, বীজ ও চারা রোপণ ও পরিচর্যা, সার-কীটনাশকসহ প্রতি বিঘা পেঁয়াজ চাষে ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতি বিঘায় ৫০-৬৫ মণ ফলন পাওয়ার প্রত্যাশা তাদের। সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষক-শ্রমিক,
শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী ১৫-২০ জন মিলে দলবদ্ধভাবে চারা রোপণ করছেন। একজন লোহার ছোট লাঙ্গল দিয়ে সারি টানছেন। আর অন্যরা সারিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করছেন। যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের নীলের মাঠের কৃষক হাফিজ শেখ জানান, দুই বিঘা জমিতে চারা রোপণ করছি। বিঘাপ্রতি খরচ পড়ছে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় প্রায়
৫০-৬০ মণ ফলনের প্রত্যাশা করছেন।
কামাল হোসেন নামে আরেক কৃষক জানান, ভরা মৌসুমে কৃষকরা লোকসানে পেঁয়াজ বিক্রি করে চাষাবাদে হতাশ হয়েছিল। তবে শেষ সময়ে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। অসময়ে ভাল দাম পাওয়ায় এ বছর পেঁয়াজের আবাদ বাড়বে।
চাপড়া ইউনিয়নের কবুরাট গ্রামের কিনাজ উদ্দিনের ছেলে মনিরুল ইসলাম ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্র। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। তিনি জানান, গতবছর পাঁচ বিঘা জমিতে প্রায় ৩০০ মণ
পেঁয়াজ পেয়েছিলেন। অসময়ে ভাল দামে বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছেন। সে জন্য কৃষি অফিসের পরামর্শে চলতি বছর প্রায় ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় মোট কৃষি জমির পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার ২৪০ হেক্টর। তারমধ্যে ২০২৩- ২০২৪ অর্থবছরে চার হাজার ৫০০ হেক্টর জমি পেঁয়াজ চাষাবাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন চারা রোপণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে ৯০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। শেষ মুহূর্তে ভাল দাম পাওয়ায় এ চাষে আগ্রহ বাড়িয়েছে কৃষকরা।
জানা গেছে, চারা রোপণের ভরা মৌসুমে শ্রমিকদের চরম সংকট থাকে। কৃষকদের অতিরিক্ত মজুরি গুণতে হয়। সেসময় শ্রমিক সংকট নিরসন ও নিজেদের খরচ মেটাতে মাঠে মাঠে চারা রোপণের কাজ করেন বিদ্যালয়,
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানান প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সরেজমিন মাঠে মাঠে শিক্ষার্থীদের চারা রোপণের দৃশ্য দেখা যায়।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল হোসেন বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধ। মাঠে শ্রমিকের চাহিদাও রয়েছে। সেজন্য তিনি প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরিতে পেঁয়াজের চারা রোপণের কাজ করছেন। তার ভাষ্য, অসংখ্য শিক্ষার্থীরা একাজ করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার
দাস জানান, চলতি অর্থবছরে ২৫০ জন কৃষককে প্রণোদনার সার-বীজ প্রদান করা হয়েছে। এক সপ্তাহে প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ হয়েছে। জানুয়ারি মাসের ১৫-২০ দিন পর্যন্ত রোপণ চলবে। তার ভাষ্য, অসময়ে পেঁয়াজের চড়া দাম থাকায় এ বছর এ চাষে আগ্রহ বাড়িয়েছে কৃষকরা। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এবার।