কিশোরগঞ্জের ভৈরবে র্যাব হেফাজতে সুরাইয়া খাতুন (৫২) নামের এক নারী আসামির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তবে, র্যাবের দাবি গরমে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাতে তাকে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার গেইট থেকে আটকের পর গভীর রাতে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়।
গুগল নিউজে ফলো করুন আরটিভি অনলাইন
শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ৭টায় সুরাইয়া খাতুনকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সুরাইয়া খাতুন নান্দাইল উপজেলার বরুনাকান্দি গ্রামের আজিজুল ইসলামের স্ত্রী। নিহত সুরাইয়া খাতুন রেখা আক্তার (২০) নামে পুত্রবধূ হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
এছাড়া নিহতের ছেলে তাইজুল ইসলাম লিমনকে (২৩) নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে একই রাতে আটক করা হয়। আটককৃত তারা দুজনসহ মোট তিনজন নান্দাইল এলাকার গৃহবধূ রেখা আক্তার (২০) হত্যা মামলার আসামি। অপর আসামি নিহত সুরাইয়ার স্বামী মো. আজিজুল ইসলাম (৬০)।
আসামিরা সম্পর্কে নিহত রেখার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি। যদিও র্যাবের দাবি, রাতে মা-ছেলেসহ দুই আসামিকে আটকের পর ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের ভেতরে হেফাজতে থাকা অবস্থায় গরমে অসুস্থ হয়ে বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সুরাইয়া খাতুন। এদিকে র্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা র্যাবের কাছে জানতে চাইলে প্রথমে তথ্য দিতে গড়িমসি করলেও পরে জানান, অসুস্থ হয়ে সুরাইয়া মারা গেছেন। এটুকু বলেই মুখে কুলুপ আটেন। এদিকে নিহতের পরিবারের দাবি, র্যাবের শারীরিক নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে তারা আদালতে মামলা দায়ের করবেন।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, দেড় বছর আগে একই উপজেলার ভেড়ামারি গ্রামের কৃষক হাসিম উদ্দিনের মেয়ে রেখা আক্তারের সঙ্গে তাইজুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তার স্বামী তাইজুল দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য রেখাকে চাপ সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে আরও এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে টাকা দিতে অস্বীকার করে রেখার পরিবার। এরই জের ধরে গত ২৬ এপ্রিল রেখাকে তার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি নির্যাতন করে।
পরে আহত অবস্থায় পাশের উপজেলা ইশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। খবর পেয়ে রেখার পরিবারের লোকজন লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে ময়না তদন্তের পর দাফন করে। এরপর থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা হিসেবে নথিভূক্ত করে।
এ ঘটনায় গত ২ মে রেখার মা রমিছা বেগম ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তিনজনকে (স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি) অভিযুক্ত করে একটি মামলা করে। আদালতের বিচারক মামলার শুনানি শেষে নান্দাইল থানার ওসিকে মামলাটি দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে গত ১৩ মে নান্দাইল থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয় (মামলা নং ১৫)।
এরই মধ্য ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা গত বৃহস্পতিবার রাতে থানার গেইটে গিয়ে শ্বশুরকে ছেড়ে দিয়ে সুরাইয়াকে আটক করে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে আসেন।
নিহত সুরাইয়া খাতুনের স্বামী আজিজুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রীকে পুলিশ কৌশলে থানায় ডেকে নিয়ে র্যাবের হাতে তুলে দিয়েছে। খবর পেলাম সে রাতেই মারা গেছে। র্যাবের নির্যাতনে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আমি এ বিষয়ে আদালতে মামলা করব। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার সকাল ৭টায় র্যাব সদস্যরা সুরাইয়া খাতুন নামের এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাকে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্য হয়েছে, দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান শুক্রবার রাত ৮টায় লাশের সুরতহাল তৈরি করে সাংবাদিকদের জানান, মরদেহের ময়না তদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা? এমন প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। বলেন, ময়না তদন্তেই তার প্রমাণ হবে।
এদিকে ময়মনসিংহ র্যাব-১৪ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আব্দুল হাই চৌধুরী মুঠোফোনে আরটিভি অনলাইনকে জানান, র্যাব হেফাজতে থাকাকালে আসামি বুকে অসুস্থ বোধ করে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়।