জীবিত মা’কে মৃত দেখিয়ে অভিনব কৌশলে ওয়ারিশ সনদের মাধ্যমে জমি জালিয়াতি
কুষ্টিয়ার উজানগ্রাম ইউনিয়নে জীবিত মা’কে মৃত দেখিয়ে অভিনব কৌশলে ওয়ারিশ সনদের মাধ্যমে জমি জালিয়াতির অভিযোগ। একমাত্র ভাইকে বঞ্চিত করে অভিনব কৌশলে পৈতৃক সম্পত্তির ওয়ারিশ হয়েছেন ৬ বোন। তারা শরীক ফাঁকি দেওয়ার এই কূটকৌশল সফল করতে জীবিত মা’কে মৃত দেখিয়েছেন তারা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ওয়ারিশ সনদ তৈরি করে এভাবে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে আপন ভাইকে বঞ্চিত করেছেন। ছয় বোনের মধ্যে তিন বোন নাম খারিজ করে নিজেদের নামে জমি নিয়ে নিয়েছেন। বাঁকি তিনজন পড়েছেন ধরা।
ছয় বোনের চক্রান্তে পৈতৃক সম্পত্তি বঞ্চিত হওয়া ওই ব্যক্তি হলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজান গ্রাম ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড উজানগ্রাম এলাকার মৃত খোরশেদ শেখের ছেলে মৃত মুহাম্মদ আলী।স্মারক:৫৩৮,তারিখ :১৭/০৯/২০২৩ ওয়ারিশ সনদ অনুযায়ী মুহাম্মদ আলীর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে ইন্দ্রিস মন্ডল,মেয়ে মরিয়ম খাতুন ও নাহার খাতুন, স্ত্রী সোনা বানু এবং মা ছাকারন নেছা সম্পত্তির বর্তমান বৈধ ওয়ারিশ। চক্রান্তকারী ছয় বোন হলেন হালিমা খাতুন,হাজেরা বেগম,জুলাইখা বেগম,হাসিনা বেগম,ফাতেমা খাতুন ও তাসলিমা খাতুন।
জানা যায়, খোরশেদ শেখ ও ছাকারন নেছার সাত সন্তান। এক ছেলে ও ছয় মেয়ে। মুসলিম সম্পত্তির উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী সাত ভাই-বোনের সকলেই খোরশেদ শেখের সম্পত্তির ওয়ারিশ। কিন্তু চক্রান্ত করে একমাত্র ভাইকে বাদ দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ওয়ারিশ সনদ তৈরি করে পৈতৃক সম্পত্তির ওয়ারিশ হয়েছেন ছয় বোন। তারিখ : ১৩/০৩/২০২৩, স্মারক: ৮৮০ ওয়ারিশ সনদ অনুযায়ী মৃত ভাই মুহাম্মদ আলীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। জীবিত মা ছাকারন নেছাকে দেখানো হয়েছে মৃত। এই ওয়ারিশ সনদ অনুযায়ী তিন বোন হালিমা খাতুন, ফাতেমা খাতুন ও তাসলিমা খাতুন কুষ্টিয়া সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে নাম জারি করে নিজেদের নামে জমি রেকর্ড করে নিয়েছেন। খারিজ খতিয়ান ১০৭৪,দাগ নং ১৩৭,১৩৮ ও ১৩৯। কিন্তু বাঁকি তিন বোন হাজেরা,জুলাইখা ও হাসিনা ধরা পড়ে গেছেন। এই ওয়ারিশ সনাক্ত করেছেন ১ নং ওয়ার্ড মেম্বার আক্কাস আলী এবং স্বাক্ষর করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান ছানোয়ার মোল্লা।
তবে একই ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ০৩/০১/২০২৩ তারিখে, স্মারক:৫০ আরেকটি ওয়ারিশ সনদ নিয়েছিলেন তাঁরা। সে অনুযায়ী মৃত খোরশেদ শেখের স্ত্রী ছাকারন নেছা জীবিত এবং সম্পত্তির ওয়ারিশ তাঁর সাত সন্তান অর্থাৎ এক ছেলে ও ছয় মেয়ে। তাঁরা হলেন মৃত মুহাম্মদ আলী, হালিমা খাতুন, হাজেরা বেগম,জুলাইখা বেগম, ফাতেমা খাতুন, তাসলিমা খাতুন ও হাসিনা বেগম।কিন্তু নতুন ওয়ারিশ সনদে একমাত্র ভাই কিভাবে বাদ পড়েছেন, ইউপি সদস্য কিভাবে ওয়ারিশ সনাক্ত করেছেন এবং চেয়ারম্যান কিভাবে স্বাক্ষর করেছেন এবিষয়ে জনমনে বেশ ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া ইউপি সদস্য আক্কাস আলী ও চেয়ারম্যান ছানোয়ার মোল্লার সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
এবিষয়ে উজান গ্রাম ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আক্কাস আলী বলেন, “ওয়ারিশ কাম সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করেছে চেয়ারম্যান। আপনারা তাঁর সাথে কথা বলেন।
এবিষয়ে উজান গ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছানোয়ার মোল্লা বলেন,” ওয়ারিশ কাম সার্টিফিকেটের তদন্তের দায়িত্ব থাকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বারের।তাঁরা তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দেওয়ার পর আমি স্বাক্ষর করি।
এবিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।