ঈশ্বরদী স্টেশন রোডে জনতা ফার্মেসিতে ৪১ বছর ধরে শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে সব ধরনের চিকিৎসাপত্র, ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসছেন আনোয়ার হোসেন বাচ্চু (৫৮)। কিন্তু তিনি কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নন। মেডিক্যাল কলেজেও লেখাপড়া করেননি। প্রয়াত বাবা হারান আলী ছিলেন পল্লী চিকিৎসক।
বাবার জন্য খাবার নিয়ে যেতেন বাচ্চু। বাবার পাশে বসে চিকিৎসা দেওয়া দেখতেন। এভাবেই কর্মহীন আনোয়ার হোসেন বাচ্চু হয়ে ওঠেন শিশু বিশেষজ্ঞ। তবে স্থানীয় প্রশাসন, সিভিল সার্জনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নবজাতকসহ সকল শিশুর চিকিৎসা দেওয়ার নামে দিয়ে যাচ্ছেন অপচিকিৎসা।
বিষয়টি জানানোর পর দুঃখ প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান পাবনা সিভিল সার্জন ডাক্তার শহীদুল্লাহ দেওয়ান।
আজ শনিবার দুপুরে ঈশ্বরদী শহরের স্টেশন রোডস্থ জনতা ফার্মেসিতে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত অর্ধশত অভিভাবক তাদের নবজাতক ও শিশুদের নিয়ে বসে আছেন। সর্দি, জ্বর, নিউমোনিয়া, ব্রেন, জন্মগতভাবে হার্টের ছিদ্রসহ নানা রকম সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন তারা।
জানা গেছে, জনতা ফার্মেসি তারা তিন ভাই মিলে পরিচালনা করেন।
চিকিৎসক হিসেবে আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, ওষুধের দোকানদার ও সিরিয়াল দেওয়ার কাজে এক ভাই পান্না ও ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন আরেক ভাই কেশরু। এই ওষুধ বিক্রয়ের জন্যও নেই ড্রাগ লাইসেন্স। আবার ল্যাবেরও নেই লাইসেন্স। এমনকি ল্যাব টেকনিশিয়ান হিসেবেও নেই কোনো প্রশিক্ষণ সনদ। কেবল দেখেই তিন ভাই তিন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়েছেন।
প্রেসক্রিপশন ও ওষুধ দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে ফি রোগীদের নিকট থেকে একসঙ্গে নেওয়া হয়।
অপেক্ষমাণ শিশুর অভিভাবক রনক বলেন, ‘শুনেছিলাম আনোয়ার হোসেন বাচ্চু শিশু বিশেষজ্ঞ। কিন্তু তার করা প্রেসক্রিপশনে তো ডাক্তার হিসেবে তার নাম ও ডিগ্রি লেখা নেই। সাদা কাগজে শিশুর নাম লিখে ওষুধ দিচ্ছেন। আবার ওষুধও সেখান থেকেই কিনতে হয়। এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও সাদা কাগজেই লিখে দিচ্ছেন। বিষয়টি দেখে বুঝছি তিনি আসলে শিশু বিশেষজ্ঞ নন।’
এ বিষয়ে নবজাতক ও শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিকিৎসা প্রদানকারী আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, ‘আমার মেডিক্যালের শিক্ষাগত ডিগ্রি নেই। ডাক্তার হিসেবেও ডিগ্রি নেই। তবে ৪১ বছর ধরে নবজাতকসহ শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে আসছি। রোগীরা সেবা পায় বলেই তো আমার নিকট আসে।’ লেখালেখি করার দরকার নেই। রাতে দেখা করেন বলে অনুরোধ করেন তিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা পল্লী চিকিৎসক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর পারভেজ বলেন, একজন পল্লী চিকিৎসক হিসেবে নবজাতক ও শিশুদের সকল ধরনের চিকিৎসা দেওয়া অনুচিত। আনোয়ার হোসেন বাচ্চু পল্লী চিকিৎসক সমিতির একজন সদস্য। আগামী ৩ অক্টোবর পল্লী চিকিৎসকদের সভা আছে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার এফ এ আসমা খান বলেন, ‘আমরা এসব হাতুড়ে ডাক্তারের সঙ্গে পারছি না। নানাভাবে প্রলুব্ধ করে গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে।’
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাশ বলেন, মেডিক্যালে লেখাপড়া না করে নবজাতক ও শিশুদের চিকিৎসা প্রদান করাটা বিস্ময়ের। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।
পাবনা সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান বিস্ময় ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, একজন ব্যক্তি মেডিক্যালে লেখাপড়া না করে কিংবা এমবিবিএস পাস না করে শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে আসছে কিভাবে! কেবল ৪১ বছর ধরে চিকিৎসা দিয়েই যদি ডাক্তার হওয়া যেত তাহলে মেডিক্যাল কলেজ, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করার প্রয়োজন হতো না। এ বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত