কুষ্টিয়াতে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না আলু-পেঁয়াজ-ডিম
গত (১৪ সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম কমিয়ে নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ঘোষণার পর থেকেই বাজারে এ দাম কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া দাম মানছেন না বিক্রেতারা। আলু, পেঁয়াজ, ডিম এখনো বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই।
কুষ্টিয়ার শহরের কাঁচাবাজারগুলোতে সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য তিনটি বিক্রি হতে দেখা যায়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বেঁধে দেওয়া দাম বাস্তবায়নে ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) বাজার মনিটরিং করবেন। জেলা-উপজেলাসহ বড় বড় শহরে মনিটরিং চলবে। সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে। তবে কুষ্টিয়ার বাজারে কোনো ধরনের মনিটরিং কার্যক্রম চোখে পড়েনি।
কুষ্টিয়া পৌর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, দাম বেঁধে দেয়ার দুইদিন পরও পেঁয়াজ, ডিম ও আলু আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে। একইসঙ্গে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা এবং আলুর কেজি ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়ার দামের তুলনায় দেশি পেঁয়াজ ৫ টাকা, আলু ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং ডিম ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা পর্যন্ত বেশি দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। পাইকারি বাজারেও দাম কমেনি। পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ায় খুচরা বাজারেও দাম বেশি। খুচরা ব্যবসায়ীদের পক্ষে এখনই সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।সরকার আলুর দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা বেঁধে দিয়েছে বেশি নিচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কুষ্টিয়া পৌর বাজারের আলু ব্যবসায়ী রোজদার আলী বলেন, সরকার দাম বেঁধে দিয়েছে সেটা ভালো। কিন্তু আমি তো লাভের জন্য ব্যবসা করি। সরকারের দামে বিক্রি করলে লোকসান হবে। আড়ৎ থেকে আমি আলু কিনেছি ৪০ টাকা ৫০ পয়সা কেজি আর বিক্রি করছি ৪৫ টাকা কেজিতে। বেশি দামে কিনি এজন্য বেশি দামে বিক্রি করি। সব ব্যবসায়ীরাই ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছে। এখনো কোনো অভিযান হয়নি।পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আব্দুল করিম ও মকবুল হোসেন বলেন, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকায়। আড়ৎ থেকে পাইকারী কিনতে হচ্ছে থেকে ৬৪ টাকায়। সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে সেই দামে বিক্রি করলে ব্যবসায়ীদের লোকসান হবে। এজন্য কেউই বেঁধে দেওয়া দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছে না।
ডিম বিক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে ডিমের পাইকারী দাম বেশি। এজন্য সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ডিম বিক্রি করতে পারছি না। সরকারের হিসাব-নিকাশ মিলাতে পারছি না। এক পিস ডিম কিনতে হচ্ছে ১১ টাকা ৫০ পয়সা। খুচরা বিক্রি করছি সাড়ে ১২ টাকা, এক হালি ৫০ টাকা। সরকার বেঁধে দিয়েছে এক পিসের দাম ১২ টাকা। তবে অনেকে একটা ডিম ১৩ টাকাও বিক্রি করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের সবগুলো বাজারের একই চিত্র। এভাবেই ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন আলু, পেঁয়াজ আর ডিম। শহরের অলিগলির মুদি দোকানে দাম আরও বেশি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্থিতিশীলতায় অসহায় ক্রেতারা। নিত্যপণ্যের বাজারে অসাধু সিন্ডিকেটের তৎপরতায় সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য কিনতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।হাফিজুর রহমান বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। সরকারের নির্ধারিত দামে কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। আলু, ডিম, পেঁয়াজ, চিনি, তেল সবকিছুই আগের মতো বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। বাজারের বিক্রেতার খেয়ালখুশি মতো পণ্যের দাম আদায় করে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা উচিত। কিন্তু বাজার মনিটরিং কমিটি ও ভোক্তা অধিকারের তৎপরতা দেখা যায় না। তারা বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করলে, আমরা সরকারি দামে পণ্য কিনতে পারতাম, জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকতো। আমি বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি জানাচ্ছি।বুলবুল আহমেদ বলেন, সরকারের বেঁধে দেয়া দামে কিছুই কিনতে পারলাম না। সরকার আসলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এজন্য ব্যবসায়ীরা আগের দামেই সবকিছু বিক্রি করছে। আমার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ ভালো নেই। কারণ অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেশি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আমরা নাভিশ্বাস। নিম্নবিত্ত বা দারিদ্র্য মানুষের কষ্টের সীমা নেই।পপি ভান্ডার নামে মুদি দোকানি ফারুক হোসেন বলেন, সরকারের বেঁধে দেয়া দামে চিনি ও তেল বিক্রি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কারণ পাইকারি কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। আমরা লাভের জন্য ব্যবসা করি। সরকারের দামে বিক্রি করলে তো লোকসানে হবে। কারণ খোলা চিনি পাইকারি কিনি ১২৭-১২৮ টাকা কেজি, বিক্রি করি ১৩০ টাকায়। প্রতি কেজিতে ২-৩ টাকা লাভ হয়। কিন্তু সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি করলে কেজিতে ৭-৮ টাকা লোকসান হবে। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছি ১৭০ টাকা লিটার। সরকারের বেঁধে দিয়েছে ১৪৯ টাকা লিটার কিন্তু আমি পাইকারি কিনেছি ১৬৫ টাকা লিটার। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করলে লোকসান হবে। কেনে পড়ছে বেশী, এজন্য বিক্রিও করছি বেশী দামে। আমরা হালকা দুই-এক টাকা লাভে পণ্য বিক্রি করছি। এ ছাড়া উপায় নাই। ডিলারশিপ থেকে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা শীর্ষক বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তিন পণ্যের বেঁধে দেওয়া দাম ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এখন থেকে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম হবে সর্বোচ্চ ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৬ এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা।