রাউজানে থামছে না হৃদয়ের মা ও বাবার আহাজারি
রাউজানের কলেজ ছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়কে (২০) অপহরণের পর হত্যা এবং পুলিশের উপর হামলা করে প্রধান আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় এলাকায় আতংকাবস্থা বিরাজ করছে। গ্রেপ্তার এর আতংকে রাউজানের কদলপুরের ৯নম্বর ও আশপাশের এলাকাগুলো প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। এদিকে ডিএনএ টেস্টের জন্য হৃদয়ের হাড়গোড় (কঙ্কাল) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পরীক্ষার পর কদলপুরের গ্রামের বাড়িতে কবরস্থ করা হয়েছে। অন্যদিকে এই ঘটনায় ধৃত দু’জন অপহরণের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
শিবলী সাদিক হৃদয়ের হাড়গোড়ের পরীক্ষা ও গণপিটুনিতে নিহত উমং চিং মারমা (২৬) ময়না তদন্ত ঃ রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘অপহরণকারীদের হাতে নিহত শিক্ষার্থী শিবলী সাদিক হৃদয়ের উদ্ধারকৃত হাড়গোড়ের ডিএনএ টেস্টের জন্য হৃদয়ের হাড়গোড় (কঙ্কাল) গতকাল মঙ্গলবার (গতকাল) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাপাতালে ফরেনসিক বিভাগে নেয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যশেষে সেগুলো তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। একইদিন ময়নাতদন্তশেষে মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে রাখা হয়েছে উমং চিং মারমার (২৬) মরদেহ। দুপুরের পর ময়নাতদন্ত কার্যক্রম শেষ হলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সেখান থেকে পরিবারের কেউ তার মরদেহ নিয়ে যায়নি। তবে নিহতের পরিবার আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে। তারা লাশ নেবেন বলে জানিয়েছে।
শিবলী সাদিক হৃদয়ের হাড়গোড় কবরস্থ
শিবলী সাদিক হৃদয়ের উদ্ধারকৃত হাড়গোড় মঙ্গলবার (১৩) সেপ্টেম্বর মাগরিবের নামাজের পর পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত হৃদয়ের চাচা নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রথমে জানাজা নামাজের মাধ্যমে হৃদয়ের দেহবাশেষ দাফনের কথা ছিল। কিন্তু হৃদয়ের শরীরের বেশিরভাগ অংশ না থাকায় হুজুরদের পরামর্শে শরীয়তসম্মতভাবে স্বাভাবিক কবরস্থান খুঁড়ে আছরের নামাজের পর সেখানে দাদির পাশে দাফন করা হয় হাড়গুলো।
হত্যাসহ দুটি মামলা, এলাকায় আতংক
সোমবার পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নেয়া, পুলিশের গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় একটি এবং আসামি হত্যার ঘটনায় আরো একটিসহ মোট দুটি মামলা করা হয়েছে। থানার সেকেন্ড অফিসার অজয় দেবশীল মঙ্গলবার (গতকাল) সন্ধ্যায় বলেন ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাউজান থানার উপপরিদর্শক (এস.আই) আজিজুল হাকিম বাদী হয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) এ মামলা দুটি করেন। পুলিশের গাড়ি ভাংচুর মামলায় এজাহারনামীয় ৫ জনসহ অজ্ঞাত ৩০/৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশের কাছ থেকে যে আসামিকে হত্যা করা হয়েছে, সে মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আসামির নিদিষ্ট কোন সংখ্যা রাখা হয়নি। তবে নতুন করা এ দুটি মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এলাকাবাসীর কাছে জানা যায়, পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে নিহত হৃদয়ের বাড়ি কদলপুরের ৯নম্বর ওয়ার্ডের পঞ্চপাড়াসহ আশপাশের এলাকা প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) এলাকায় খুব কম পুরুষ চলাফেরা করতে দেখা গেছে। এদিকে সোমবার রাতে গুজব রটে গণপিটুনির প্রতিশোধ নিতে কদলপুরের পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে অবস্থান করছে কিছু উপজাতি উগ্র সন্ত্রাসী।
এ প্রসঙ্গে কদলপুরের মো. বাবুল নামের এক ইউপি সদস্য বলেন ‘পাহাড়ে উপজাতি উগ্র সন্ত্রাসী অবস্থান করার সংবাদে বিশেষ করে ৯নম্বর ওয়ার্ড ও আশপাশের এলাকার নারী-পুরুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। এলাকায় পুলিশের গ্রেপ্তার আতংকও রয়েছে,
এ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘কিছু দুষ্টু মানুষজন পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের অবস্থান করছে বলে আতংক ছড়ায়। এগুলো সম্পূর্ণ গুজব।’
এ বিষয়ে রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘দুটি মামলার আসামিদের সবাই অজ্ঞাতনামা। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামি শনাক্ত করে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হবে।’
থামছে না হৃদয়ের পরিবারে আর্তনাদ :
মা নাহিদা আকতার, বাবা সিএনজি ট্যাক্সি চালক মো. শফিক ড্রাইভার কিছুতেই ফুটফুটে সুন্দর ছেলেটির হত্যাকা- মেনে নিতে পারছেন না। সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, গতকাল (মঙ্গলবার) তারা ছেলের ছবি হাতে, বুকে নিয়ে আহাজারি করতে করতে বলেছিলেন- ‘আমাদের ছেলে কি অপরাধ করেছিল। এভাবে কেন নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করা হলো? যেসব আসামি হাজতে আছে আমরা তাদের ফাঁসি চাই। আমাদের মতো কেউ আর যাতে ছেলেকে এভাবে হারাতে না হয়।’
আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি :
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল হারুন বলেছেন, দুই আসামি মঙ্গলবার (গতকাল) চট্টগ্রাম ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তারা হলো- এজানামীয় ২নং আসামি সুইচিংমং মারমা (২৪), (পিতা অংসাচিং মারমা, সাং মিতিঙ্গাছড়ি, বারঘনিয়া গেইট, বড়ইছড়ি, থানা কাপ্তাই, জেলা রাঙ্গামাটি), ও এজানামীয় ৩নং আসামি অংথুইমং মারমা (২৫) (পিতা মৃত উহ্লাপ্ধসঢ়;রুমং মারমা, মাতা আপ্ধসঢ়;রুমা মারমা, সাং সাপমারা পাড়া, ৬নং ওয়ার্ড, বেতবুনিয়া ইউপি, থানা কাউখালী, জেলা- রাঙ্গামাটি)।
ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন ও থানার সেকেন্ড অফিসার অজয় দেবশীল বলেন- ‘স্বীকারোক্তিতে তারা বলেছে ‘তারা ৫-৬ জন মিলে ২৮ আগস্ট রাতে অপহরণ করে হৃদয়কে। পরদিন ২৯ আগস্ট গহীন অরণ্যে নিয়ে প্রধান আসামি উমং চিং মারমাসহ কয়েকজন মিলে তাকে জবাই করে লাশ টুকরো টুকরো করে। তবে অপহরণের সাথে জড়িত থাকলেও এ দু’জন হত্যার কথা জানতো, কিন্তু হত্যায় জড়িত ছিল না দাবি করে।